শারাপোভার `ভুভুজোলায়` টেনিস বিশ্ব কুপোকাত্‍

তাকিয়ে থাকার মত তাঁর সুন্দর মুখ, অসাধারণ চাবুক শরীর, টেনিসের দুরন্ত সব শট। এসব নিয়েই মারিয়া শারাপোভা। কিন্তু এর বাইরে রয়েছে তাঁর `ভুভুজোলার` শব্দ। সেটা কি রকম! লিখেছেন পার্থ প্রতিম চন্দ্র

Updated By: Oct 1, 2012, 12:41 PM IST

পার্থ প্রতিম চন্দ্র
তাকিয়ে থাকার মত তাঁর সুন্দর মুখ, অসাধারণ চাবুক শরীর, টেনিসের দুরন্ত সব শট। এসব নিয়েই মারিয়া শারাপোভা পরিচিত গোটা দুনিয়ায়। কিন্তু এসবের বাইরে শারাপোভার একটা আলাদা পরিচয় রয়েছে টেনিস বিশ্বে।
টেনিসে শট খেলার মাঝে চিত্‍কার করাটাকে `গ্রান্টিং`বলা হয়। শারাপোভা সেই চিত্‍কার, পরিভাষায় যাকে বলে `গ্রান্টিং` এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে টেনিস বিশ্ব একেবারে নাজেহাল। শারাপোভার গ্রান্টিংয়ের মাত্রা শব্দযন্ত্রে মেপে দাঁড়িয়েছে ১০১ ডেসিবেল। মানে কালিপুজোর সময় কলকাতায় এমন শব্দ পাওয়া গেলে শারাপোভা হয়তো জেল খাটতেন! তা টেনিস সুন্দরী এ হেন `গর্জনে` টেনিস বিশ্ব একেবারে নাজেহাল। শারাপোভার ম্যাচ থাকলেই কানে তুলো লাগিয়ে খেলা দেখতে মাঠে আসর উপক্রম দর্শকদের। ফাঁপড়ে পড়েছেন টেলিভিশনের মালিকরাও। এমনিতে শারাপোভাকে দেখার জন্য দর্শকরা মুখিয়া থাকে। এতে টিআরপি হু হু করে বাড়ারই কথা। কিন্তু সুন্দরির এমন বিকট শব্দ অতিষ্ঠ হয়ে টেলিভিশনের রিমোট ঘুরে যাচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়ছে সম্প্রচারকারী চ্যানেল। অনেকে তো `গ্রান্টিং`-এর চোটে অতিষ্ঠ হয়ে সরাসরি অভিযোগ জানাচ্ছেন আয়োজকদের। এই নিয়েই মহাবিপদে পড়েছেন টেনিস কর্তারা। শারাপোভাকে বলেও কোন কাজ হয়নি। শারাপোভা বলেছেন, এটা তাঁর ছোটবেলার অভ্যাস। চাইলেই তিনি বন্ধ করতেই পারবেন না।
অনেকে শারাপোভার এই `গ্রান্টিং` বিভ্রাটের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপে ভুভুজোলার তুলনা টানছেন। সেই বিশ্বকাপে ভুভুজোলার বিকট শব্দ কানাঝালাপালা করেছিল গোটা বিশ্বের টিভি দর্শকদের। অনেকেই ভুভুজোলার জ্বালায় বিরক্ত হয়ে টিভি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।বিশেষ ধরনের এই প্লাস্টিকের বাঁশির দৌরাত্ম এতটাই বেড়েছিল যে আয়োজকরা মাঠের দর্শকদের অনুরোধ করতে বাধ্য হয়েছিল এটি ব্যবহার না করার জন্য। তবে আয়েজকদেশের দর্শকদের কথা ভেবে ভুভুজোলা নিষিদ্ধ করা যায়নি। ভুভুজোলা তো বাজাতেন দর্শকরা, শারাপোভা তো একজন খেলোয়াড়। তাঁকে আর কীভাবে `গ্রান্টিং` করতে বারণ করা যায়।
মুশকিল এখানেই শেষ নয়। শারাপোভার মত এত জোরা না হলেও আরেক টেনিস তারকা ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার `গ্রান্টিং`য়ের শব্দও কানাঝালাপালা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু শারাপোভা, আজারেঙ্কা দুজনেই টেনিস বিশ্বে এখন অন্যতম সফল দুই খেলোয়াড়। তাই বিশ্বের বিভিন্ন টেনিস কোচিং ক্যাম্পে কোচেরা ছাত্র ছাত্রীদের `গ্রান্টিং` য়ের জন্য আলাদা ট্রেনিং দিচ্ছেন। মনে করা হচ্ছে এমন ভয়ানক চিত্‍কারে বিপক্ষ কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ছে। আর তাই ওই সুবিধা নেওয়ার জন্য ফোরহ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ডের পাশাপাশি শেখানো হচ্ছে চিত্‍কারের কায়দায়ও। আর এতেই বিপদ সংকেত আরও বেড়েছে টেনিস কর্তাদের কপালে। এভাবে চললে তো দর্শকরা শব্দের জ্বালায় আর মাঠেই আসবেন না! টেলিভিশনেও দর্শক কমবে! সত্যি শারাপোভার `ভুভুজোলায়` এখন টেনিস বিশ্ব কুপোকাত্‍!

জেনে রাখুন:
টেনিসে সবার আগে `গ্রান্টিং` শোনা যায় মোনিকা সেলেসের গলায়। আন্দ্রে আগাসি, উইলিমাস বোনেদের `গ্রান্টিং`ও বেশ বিখ্যাত। মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার মত প্রাক্তনরা `গ্রান্টিং`কে চিটিং বলে মনে করেন। এই চিত্‍কার নিষিদ্ধ করার জন্য আইন আনার কথা বলছেন। তবে এমন কথাও অনেকে বলছেন যে `গ্রান্টিং` টেনিসকে আলাদা সৌন্দর্য দেয়। তবে `ফলস গ্রান্টিং`এর বিরুদ্ধে সবাই। প্রশ্ন এখানেও আছে। ফলস আর জেনুইন এটা ধরার মাপকাঠি কি হবে?

.