Wrestlers Protest: অভিযুক্ত ব্রিজ ভূষণের নারকো টেস্টের চ্যালেঞ্জ স্বীকার করলেন সাক্ষী মালিক-ভিনেশ ফোগাটরা
কুস্তিগীররা এখানেই থেমে থাকেননি। তাঁদের অভিযোগ, ভিনেশ ফোগাট-সাক্ষী মালিক শুধুমাত্র মহিলাদের সামনেই যেন তাঁদের বয়ান নেওয়া হয়। কিন্তু সেই অনুরোধকে মান্যতা দেওয়া হয়নি। এছাড়াও বয়ান দিতে যাওয়ার সময়ে কুস্তি ফেডারেশন সভাপতির অনুগামীরা আন্দোলনকারী কুস্তিগীরদের ভয় দেখাচ্ছেন বলেই অভিযোগ।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: দেশের প্রথমসারির কুস্তিগীর ও যৌন হেনস্থায় (Wrestlers Protest) অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের (Brij Bhushan Sharan Singh) মধ্যে ঝামেলা থামার নাম নেই। যত সময় যাচ্ছে সাক্ষী মালিক (Sakshi Malik)-ভিনেশ ফোগাটদের (Vinesh Phogat) আন্দোলন বড় আকার ধারণ করছে। এমন প্রেক্ষাপটে একটা চাল দিয়েছিলেন ব্রিজভূষণ। নিজের ফেসবুকে ব্রিজভূষণ লিখেছিলেন, নারকো পরীক্ষায় বসার জন্য তিনি রাজি। তবে শুধু তাঁর নয়, নারকো পরীক্ষা করতে হবে অভিযোগকারী দুই কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট এবং বজরং পুনিয়ারও (Bajrang Punia)। যদিও এহেন ব্রিজভূষণের সেই ছকও বানচাল হয়ে গেল। কারণ ব্রিজভূষণকে চাপে রাখতে এবার তাঁর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন কুস্তিগীররা।
ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি নিজের সোশ্যাল সাইটে একটি পোস্ট করেছিলেন। সেই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, 'আমি নারকো টেস্ট, পলিগ্রাফ টেস্ট বা লাই ডিটেক্টর করাতে রাজি আছি। তবে আমার একটি শর্ত আছে। এই পরীক্ষাগুলো করতে বসতে হবে ভিনেশ ফোগাট এবং বজরং পুনিয়াকেও। যদি এই দুই কুস্তিগীর পরীক্ষা করাতে রাজি থাকেন, তবে সংবাদমাধ্যমকে ডাকুন ও ঘোষণা করুন। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, পরীক্ষা করানোর জন্য আমি প্রস্তুত রয়েছি।'
এদিকে ব্রিজভূষণের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন সাংবাদিক বৈঠকে আন্দোলনকারী কুস্তিগীররা। সেখানেই অলিম্পিকে পদকজয়ী কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক বলেন, "আমরা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংকে নার্কো টেস্ট করানোর জন্য। আমরাও এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। তারপরই সত্য সামনে আসবে। কে দোষী কে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে যাবে।"
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন কুস্তিগীর কয়েক দিন আগে একটি সর্বভারতীয় সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দেন। সেখানেই একজন দাবি করেন, "কমিটির এক সদস্য বলেন, ব্রিজভূষণ আসলে বাবার মতো মানুষ। তিনি হয়তো স্নেহের বশেই কুস্তিগীরদের স্পর্শ করেছেন। কিন্তু সেটাকে ভুল বুঝে যৌন হেনস্তা হিসাবে মনে করছে সকলে।" আরও এক প্রথমসারির কুস্তিগীর বলেন, "মেরি কমের কমিটির সদস্যরা হেনস্তার অডিয়ো এবং ভিডিয়ো প্রমাণ চেয়েছেন।
কুস্তিগীররা এখানেই থেমে থাকেননি। তাঁদের আরও অভিযোগ ছিল, ভিনেশ ফোগাট-সাক্ষী মালিক শুধুমাত্র মহিলাদের সামনেই যেন তাঁদের বয়ান নেওয়া হয়। কিন্তু সেই অনুরোধকে মান্যতা দেওয়া হয়নি। এছাড়াও বয়ান দিতে যাওয়ার সময়ে কুস্তি ফেডারেশন সভাপতির অনুগামীরা আন্দোলনকারী কুস্তিগীরদের ভয় দেখাচ্ছেন বলেই অভিযোগ। এমনকি বয়ান রেকর্ডের সময়ে একাধিকবার ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে কমিটি সদস্যের বিরুদ্ধে। ফলে ফের একবার মেরি কমের তদন্ত কমিটির কার্যপদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। একটি সূত্রের খবর, তদন্তকারী আধিকারিকরা নির্যাতিতাদের কাছে তাঁদের অভিযোগের প্রমাণ হিসাবে ভিডিয়ো এবং অডিয়ো ক্লিপ ও ছবি চেয়েছেন। আর এতেই বেজায় চটেছেন কুস্তিগীররা। তাঁদের বক্তব্য, কারও উপর যখন যৌন নিগ্রহ হয়, তখন কি কেউ তা রেকর্ড করে রাখে?
আরও পড়ুন: Bajrang Punia Controversy: আন্দোলনের মাঝেই কোন নতুন বিতর্কে জড়ালেন বজরং পুনিয়া? জানতে পড়ুন
সাক্ষী-ভিনেশদের আরও দাবি, যে নাবালিকারা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, তাঁদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা যে স্কুলে পড়াশোনা করে, সেখানে তাঁদের জন্মের তারিখ বদল করে প্রাপ্তবয়স্ক প্রমাণ করার চেষ্টাও করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে সাক্ষী মালিক বলেছেন, "ওরা যদি আমাদের ন্যায় দিতে না পারে, তবে ওদের দেওয়া সম্মান নিয়ে আমরা কী করব? প্রয়োজনে সব ফেরত দিয়ে দেব।"
অন্যদিকে আন্দোলনকারী কুস্তিগীরদের সঙ্গে ইতমধ্যেই যোগ দিয়েছেন ভীম আর্মির নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ। কুস্তিগীরদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁদের প্রতিবাদ এবার যন্তর মন্তরের গণ্ডি পেরিয়ে আরও বড় আকার ধারণ করবে। দেশের নানা প্রান্তেও নানা সংগঠন মহিলা কুস্তিগীরদের সমর্থনে মিছিল করেছেন। তবে এখনও গারদের বাইরে রয়েছেন অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে এক নারীই হয়ে উঠছে পারেন অন্য নারীর সবচেয়ে বড় কণ্ঠস্বর। এই আশা নিয়েই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এবং নির্মলা সীতারমণ-সহ মোট ৪৩ জন বিজেপি নেত্রীকে চিঠি লিখেছেন কুস্তিগীররা। চিঠিতে তাঁরা লিখেছিলেন, "আমরা, ভারতে মহিলা কুস্তিগির ফেডারেশন সভাপতির যৌন হেনস্তার শিকার। তিনি সভাপতি থাকাকালীন একাধিকবার যৌন নিগ্রহ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর চেষ্টা করা হলে সুবিচার পাওয়া তো দূরস্ত, কুস্তিগিরদের ভবিষ্যৎ শেষ করে দিয়েছেন তিনি। এবার মাথার উপর জল উঠে গিয়েছে। মহিলা কুস্তিগিরদের সম্মান রক্ষার জন্য লড়াই ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।" কুস্তিগীরদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীরা। সংযুক্ত কিষান মোর্চাও তাঁদের সমর্থনে সুর চড়িয়েছে। কিন্তু তাতেও প্রশাসনের কোনও হেলদোল দেখা যায়নি। এমন জটিল পরিস্থিতিতে কুস্তিগীর আন্দোলন আর কতদূর গড়ায় সেটাই দেখার।