"পরিচারিকা চাই" বিজ্ঞাপন দিয়ে অপহৃত বৃদ্ধ, নিজেদের পাতা ফাঁদেই জালে ২ পুরুষ-২ মহিলা
পূর্ব মেদিনীপুরের এক মহিলা এসে কাজে যোগ দেয়। দিন তিনেক কাজ করে হঠাৎ চলেও যায়। পরিচারিকার বিজ্ঞাপন দেখেই তারা মোটা টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করে।
নিজস্ব প্রতিবেদন : "পরিচারিকার চাই"। খবরের কাগজে দেওয়া এই বিজ্ঞাপন-ই ডেকে আনে বিপদ। বিজ্ঞাপন দেখেই মোটা টাকা লুঠের ছক কষে এক বৃদ্ধকে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। অপহরণের পর ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণও দাবি করে অপহরণকারীরা। শেষে পুলিসের জালে ধরা পড়েছে ৪ অপহরণকারী। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে জীবনকৃষ্ণ পাল নামে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধারও করেছে পুলিস। তদন্তে উঠে এসেছে, কাগজে পরিচারিকার বিজ্ঞাপন দেখেই বৃদ্ধের কাছ থেকে টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করেছিল ধৃতরা। মমতা মাইতি নামে এক অভিযুক্তকে রেইকি করতে পাঠানো হয় পোলবার শঙ্করবাটিতে জীবনকৃষ্ণ পালের বাড়িতে। দিন তিনেক কাজ করেছিল মমতা মাইতি। তবে কাজ ছেড়ে চলে গেলেও ফোনে যোগাযোগ রেখেছিল বৃদ্ধের সঙ্গে।
পোলবার শঙ্করবাটির বাসিন্দা ৭০ ঊর্ধ্ব জীবনকৃষ্ণ পাল মাস দেড়েক আগে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন পরিচারিকার জন্য। শঙ্করবাটিতে দোতলা বাড়ি তাঁর। বাড়িতে ছেলে, বৌমা ও নাতিকে নিয়ে থাকেন বৃদ্ধ। সেই বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই ফোন করেন। তারমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের এক মহিলাও যোগাযোগ করে। তারপর মাসখানেক আগে এসে কাজে যোগ দেয়। দিন তিনেক কাজ করে হঠাৎ চলেও যায়। এরপর মঙ্গলবার সেই মহিলা কৃষ্ণ বাবুকে ফোন করে বলে যে, একটা কাজের মেয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু সে একা থাকে। তাই তাকে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
একথা শুনে পরিচারিকা আনতে বুধবার ভোরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন জীবনকৃষ্ণ বাবু। এরপরই সকাল ৯টা নাগাদ ছেলে প্রসেনজিৎকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ওই বৃদ্ধ জানান যে, তাঁকে অপহরণ করেছে কয়েকজন। ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিলে তবেই ছাড়বে। জীবনকৃষ্ণ বাবুর ফোন থেকে বেশ করেকবার ফোন করে টাকা পাঠাতে বলা হয়। একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও দিয়ে দেয় অপহরণকারীরা। তাতে মুক্তিপণের টাকা দিতে বলে অপহরণকারীরা। এই ঘটনায় ছেলে প্রসেনজিৎ পোলবার থানায় গিয়ে যোগাযোগ করেন।
পুলিস তদন্তে নেমে মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে দেখতে পায় যে, পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর থানা এলাকায় রাখা হয়েছে ওই বৃদ্ধকে। এরপরই অপহরণকারীদের বলা হয় যে, নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য টাকা ট্রান্সফার করা যাচ্ছে না। একটু সময় লাগবে। এরমধ্যে ভিডিও কলে একবার বাবার সঙ্গে কথাও বলে নেন প্রসেনজিৎ। ভগবানপুর থানার গুরগ্রামে একটি নির্জন জায়গায় গাড়িতেই আটকে রাখা হয়েছিল বৃদ্ধ ও তাঁর চালককে। অপহরণকারীদের বিভ্রান্ত করে দ্রুত সেখানে পৌঁছে যায় পোলবা থানার পুলিস।
তারপরই ২ মহিলা ও ২ পুরুষ সহ চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। উদ্ধার করেন অপহরণকারীদের হেফাজতে থাকা বৃদ্ধকে। ধৃতরা হল বিশ্বনাথ ভৌমিক, কল্যাণ মন্ত্রী, মমতা মাইতি ও মানসী সিংহ। ধৃত বিশ্বনাথ ও মানসীর বাড়ি চন্ডীপুরে। কল্যাণ মন্ত্রীর বাড়ি নন্দীগ্রামে। আর মমতা মাইতির বাড়ি বাচকুল এলাকায়। ধৃতদের জেরা করে পুলিস জানতে পেরেছে, এরা পরস্পরের পরিচিত। একটি গ্যাং হিসাবে কাজ করত ধৃতরা। জীবনকৃষ্ণ বাবুর পরিচারিকার বিজ্ঞাপন দেখেই তারা মোটা টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করে। ধৃতদের কাছ থেকে একটি ইন্ডোগো গাড়ি, ৬টি মোবাইল ফোন এবং একটি ভোজালি উদ্ধার করেছে পুলিস।
আরও পড়ুন, লোন পরিশোধের মেসেজ-লিঙ্কে ক্লিক, ছড়িয়ে পড়ল মহিলার 'নগ্ন' ছবি!