অভিষেকের হয়ে ব্যাট ধরলেন 'পিসি' মমতা

মমতা বলেন, 'ও আজও একটা চোখে দেখতে পায় না।'

Updated By: Feb 18, 2021, 06:12 PM IST
অভিষেকের হয়ে ব্যাট ধরলেন 'পিসি' মমতা

নিজস্ব প্রতিবেদন: বছর দেড়-দুইয়ের এক শিশু তার বাড়ির বারান্দায় একটি রাজনৈতিক দলের পতাকা কাঁধে নিয়ে ঘুরে-ঘুরে বেড়াচ্ছে আর কেবলই আউড়ে যাচ্ছে-- দিদিকে মারলে কেন জবাব দাও!

ছবি হিসাবে, সন্দেহ নেই, খুবই মর্মস্পর্শী।

প্রথম ফাল্গুনের এই বঙ্গবসন্তে পৈলানের কর্মিসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় যেন ক্রমশ রুদ্রপলাশের মতোই দীপ্ত উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিচ্ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক ভাষণের সেই দীপ্ত-যাত্রার মধ্যেই কি তাঁর গলা একটু কেঁপেও উঠল? আর তখনই কি ওই মর্মস্পর্শী এক টুকরো ছবি তিনি সামনে এনে ফেললেন?

এনে ফেললেন, নাকি আনলেন। কাউকে জবাব? কোনও সাফাই? নিছক স্মৃতি রোমন্থন? নাকি আসলে ঘুরিয়ে চ্যালেঞ্জ?

সেই ব্যাখ্যার আগে আপাতত ওই ছবির ব্যাখ্যাটি থাক: শিশু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়, পতাকা কংগ্রেসের, 'দিদি' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেকের পিসিমা। হাজরায় তৎকালীন শাসকদলের হাতে আক্রান্ত নিজের পিসির হাতে-মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে ছোট্ট অভিষেক তার নিজের মতো করে একটা 'রাজনৈতিক প্রতিবাদ' করছিল তার বাড়ির চৌহদ্দিতে, খেলার ছলে, আবেগের বশে।

এই ছবিটি এতদিন অজানা ছিল, অচেনা ছিল। অতি ব্যক্তিগত এই পারিবারিক ছবিটি হঠাৎই সামনে আনলেন তাঁর পিসিমা তথা বাংলার দিদি তথা তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কেন আনলেন? 

এ একরকম জবাব তো বটেই। কিন্তু তার চেয়েও বেশি কিছু। এই বক্তব্য কোথাও একটা মর্মছেঁড়া বাৎসল্যের অনুঘটকে মৃদু কিন্তু দৃঢ় ভাবে নিজের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে একটা আবেগবিধুর চ্যালেঞ্জও মমতার। কোথাও একটা ছোট্ট করে এটা বলে রাখা যে, খেলার ছলেই হোক আর শিশুসুলভ আবেগের বশেই হোক, তাঁর বাড়ির একটি বাচ্চার মধ্য়েও পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক ঘটনার অভিঘাত পড়ে। তাঁর পরিবারের যে কোনও সদস্যের যে কোনও আচরণেই একটা 'পলিটিক্যাল গ্রুমিং'য়ের চিহ্ন মেলে। ফলে, আজ মানুষ যে-অভিষেককে দেখছেন, তিনি বৃন্তহীন পুষ্পসম আপনাতে আপনি বিকশি'ও যেমন নন, পাশাপাশি তিনি নিছক তাঁর পিসিমার প্রসাদভঞ্জকও নন। আজকের অভিষেকের একটা অতীতের ইতিহাস আছে।

কোনও জনসভা থেকে এই প্রথম মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে ব্যাট করলেন। কোনও জনসভা থেকে এই প্রথম মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় এভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ালেন।

আরও পড়ুন: সরকারে এসেই সব সরকারি কর্মীর জন্য সপ্তম বেতন কমিশন, সাগরে ঘোষণা শাহের

ইদানীং কালে নিজেদের যে কোনও সভা থেকে যে কোনও বিজেপি নেতা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে, তৃণমূলকে, মমতাকে সমালোচনা করার সময়ে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের প্রতিও আক্রমণ শানান। এবং 'অভিষেক'কে 'ভাইপো' বা 'ভাতিজা' বলে উল্লেখ করে মমতার প্রতি পরিবারতন্ত্রের ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তোলেন। অভিষেক নিজে ইদানীং তাঁর জনসভা থেকে এসবের উত্তর দেওয়া শুরু করেছেন। কিন্তু মমতাকে ঠিক এভাবে কখনও অভিষেককে নিয়ে বলতে শোনা যায়নি।

কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী? 

অভিষেকের ছোটবেলার ওই ঘটনা তুলে ধরার পাশাপাশি মমতা বলেন, তাঁর খারাপ লাগে, তাঁর জন্য অভিষেককে কথা শুনতে হয় বলে। মমতা বললেন, তিনি কি অভিষেককে 'ডেপুটি চিফ মিনিস্টার' করে দিয়েছেন নাকি, যে, তাঁর (মমতার) এত সমালোচনা করা হয়? তিনি তো অভিষেককে রাজ্য়সভার সাংসদ হওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। নেননি অভিষেক। অভিষেক বরং মানুষের দ্বারা নির্বাচিত হতে চেয়েছিলেন। তাই-ই হয়েছে। তিনি লোকসভার সাংসদ হয়েছেন। মমতা অভিষেকের জন্য আলাদা এমন কী করেছেন?

এর পরই মমতা অভিষেককে কেন্দ্র করে নাম না করে বিজেপিকে আক্রমণ করেন। জাতীয় সড়কে অভিষেকের দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। অভিষেককে মারার চেষ্টা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন। গভীর মমতার সঙ্গে মমতা বলেন, 'ও (অভিষেক) আজও একটা চোখে দেখতে পায় না। অভিষেকের চোখের মণিটাই উপড়ে চলে আসে, কতটা কষ্ট হয়!'

তা হলে, এই পলাশদীপ্ত বঙ্গবসন্তের ভোটরাজনীতির আগমনীতে অভিষেককে নিয়ে মমতার এই রোমন্থনের মর্মের ভিতরে আর কোনও সুর উঁকি দেয়? দেয় বইকি! কেননা, এসবের ফাঁকে মমতা বিজেপি'কে লক্ষ্য করে তো এ-ও বলে রেখেছেন-- আগে অভিষেককে লড়ো, তারপর মমতার সঙ্গে লড়াই করবে!

আরও পড়ুন: অভিষেকের চ্যালেঞ্জ, 'BJP নেতারা চ্যানেলে বসুক, কাজের পরিসংখ্যানে আমি একা ১০ গোল দেব'

.