ডিপ ওয়েবে চলত তথ্য লেনদেন, নেট ব্যাঙ্কিং; সে সব খুলছে না জঙ্গিদের ফিঙ্গার প্রিন্টেও
আগেই মিলেছিল ২২ জনের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। মালদা ও মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃত ৬ জঙ্গি ছাড়াও ওই গ্রুপের সদস্য হিসাবে আরও দু'জনের নাম মিলেছে
নিজস্ব প্রতিবেদন: জঙ্গিদের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ যতই গভীর হচ্ছে, উঠে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রে খবর, 'ডিপ ওয়েবের' মাধ্যমে তথ্য লেনদেন করতো জঙ্গিরা। ভিডিয়োয় কথাবার্তা থেকে নেট ব্যাঙ্কিংয়ে টাকা পাঠানো, সবই হতো ডিপ ওয়েবের মাধ্যমে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, কিছু ওয়েবসাইট 'বায়োলজিক্যাল স্ক্যানের' মাধ্যমে সুরক্ষিত রয়েছে। অদ্ভুত বিষয়, ধৃতদের ফিঙ্গার প্রিন্টেও খুলছে সে সব ওয়েবসাইট। তদন্তকারীদের অনুমান, 'ফরেন বায়োলজি' অর্থাত্ অন্য কারোর ফিঙ্গার প্রিন্টে সুরক্ষিত সেগুলি। তারা কারা? প্রশ্ন উঠছে।
আগেই মিলেছিল ২২ জনের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। মালদা ও মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃত ৬ জঙ্গি ছাড়াও ওই গ্রুপের সদস্য হিসাবে আরও দু'জনের নাম মিলেছে। এক জনের নাম আনসারি। অন্য জনের নাম অজ্ঞাত রয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, ডিপ ওয়েবের মাধ্যমে ব্যবহার করা ওয়েবসাইট, ইমেইল উদ্ধার হলে, আরও স্পষ্ট হবে আলকায়দার শাখা আকিজ ( al-Qaeda in the Indian Subcontinent)-এর নাশকতার ছক বিষয়ে। ওই জঙ্গিরা ডিপ ওয়েব ছাড়াও ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে তথ্য লেনদেন করত বলে খবর।
কী এই ডিপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব?
** ইন্টারনেট জগতে দু-ধরনের প্ল্যাটফর্মে তথ্য আদান প্রদান হয়ে থাকে। সারফেস ওয়েব এবং ডিপ ওয়েব। আমরা সাধারণত ইন্টারনেটে যা সার্চ করে থাকি, অর্থাত্ গুগল, ইয়াহু-সহ অন্যান্য সার্চিং প্ল্যাটফর্মে, সবই সার্ফেস ওয়েবে হয়ে থাকে। হিমশৈলের চূড়ার মতো এর পরিসর। মোট আন্তজালের মাত্র ৪ শতাংশ এই সারফেস ওয়েব।
** হিমশৈলের বাকি অংশ যা সমুদ্রের অতল গহ্বরে লুকিয়ে রয়েছে, পুরোটাই হলো ডিপ ওয়েব। 'ডিপ ওয়েব' মানেই অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগসাশজ রয়েছে এমনটা নয়। 'ডিপ ওয়েবের' মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটারের যেমন ব্যবহার হয়, তেমনই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন তথ্য লেনদেন হয়ে থাকে। অর্থাত্, যা গুগল এবং অন্যান্য সার্চ প্ল্যাটফর্মে শনাক্ত করা যায় না, তাই ডিপ ওয়েবের অন্তর্গত।
** ডার্ক ওয়েব হলো ডিপ ওয়েবের অন্তর্গত একটি জটিল স্তর। যার নির্দিষ্টভাবে ইন্টারনেট প্রোটকল (IP) অ্যাড্রেস চিহ্নিত করা যায় না। একাধিক ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPN)-এর ব্যবহার হয়। তাই তার ট্র্যাক করা অত্যন্ত কঠিন। এই ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে যাবতীয় অপরাধ মূলক কাজ হয়ে থাকে। মাদক পাচার থেকে আয় বহির্ভূত আর্থিক লেনদেন, অন্ধকার জগতের সব ধরনের কাজ হয়ে থাকে ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে।
** নিজের কম্পিউটারে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করলেও সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারের ইন্টারনেট প্রোটকল অ্যাড্রেস দেখায় না। অজ্ঞাত IP Adress-এ এ সব ওয়েবসাইট খোলে। IP Adress ট্র্যাক করলেও শনাক্ত করা যাবে না কোন দেশ থেকে এটি ব্যবহার করা হয়েছে।
** সাধারণত, ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করতে অনেকে TOR নামে একটি প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করে থাকেন। .onion নামে নিজস্ব ডোমেনেই বিভিন্ন সাইট খোলা যায়। এ সবই খোলে একাধিক ভিপিএন ব্যবহার করে। তাই ওই সাইটের রুট খুঁজে বার করা কঠিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সাহায্যে এই প্ল্যাটফর্মটি চলে বলে মনে করা হয়। স্বভাবতই, ডার্ক ওয়েবের ব্যাবহারকারীদের উপর সর্বক্ষণ নজরদারি রয়েছে সে দেশের গোয়েন্দাদের।
উল্লেখ্য, আজ বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের বিশেষ বিমানে করে ধৃত ৬ জনকে নিয়ে যাওয়া হবে দিল্লি। অন্যদিকে কেরল থেকে ধৃত ৩ জনকেও নিয়ে আসা হচ্ছে দিল্লিতে। ধৃতদের দিল্লি নিয়ে যাওয়ার আগে রাজ্য ও কলকাতা পুলিসের বিশেষ তদন্তকারী দল, আইবি, সিআইডি জেরা করবে করবে বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন- মিলল আর ২ নাম, আজ ধৃতদের BSF-এর বিশেষ বিমানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দিল্লি
এর আগে জানা গিয়েছিল, ভারতে বড়সড় নাশকতার ছক কষেছিল আলকায়দার ভারতীয় উপমহাদেশীয় শাখা, যার নাম al-Qaeda in the Indian Subcontinent (AQIS)। আর এজন্য তারা ব্যবহার করতে চাইছে এখানকার বাসিন্দাদেরই। আলকায়দার ভারতীয় উপমহাদেশীয় শাখার লক্ষ্য-পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, মায়ানমার ও বাংলাদেশ মিলে বৃহৎ ইসলামিক রাষ্ট্র গঠন।
এনআইএ সূত্রে খবর, কেরলে ধৃত ৩ জঙ্গি ইতিমধ্যেই কাশ্মীর ও দিল্লির একাধিক জায়গায় রেইকি করেছে। তদন্তকারীদের হাতে এসেছে মইনুল মন্ডলের ফোন কলের রেকর্ডিং। ফোনের ওপারে কার সঙ্গে কথা বলছে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। মডিউলের কার্যকলাপ নিয়ে কিছু কথাবার্তা রয়েছে। যার সঙ্গে কথা হয়েছে সে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বলে মনে করছে তদন্তকারীরা।