জলই প্রাণ কাড়ছে মানুষের! আর্সেনিকের মারণ বিষে ‘মৃত্যু মিছিল’ উত্তর ২৪ পরগণায়
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা, হাবরা-১, দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া বসিরহাট -১ এ পরিস্থিতিটা উদ্বেগজনক আকার নিয়েছে। এসব এলাকায় ভূগর্ভের জল আর একেবারেই নিরাপদ নয় জেনেও পান করতে বাধ্য হচ্ছেন বহু মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদন: ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মলি বিশ্বাস আর্সেনিক আক্রান্ত বাবাকে হারালেন ক’দিন আগেই। কিন্তু মলির উদ্বেগ অন্য। বাবা নেই, যে আসছে তার কী হবে? মলির শরীর জুড়েও যে আর্সেনিকের বিষ। উত্তর ২৪ পরগণার গাইঘাটার গাজনা গ্রামে বসে আর্সেনিক আক্রান্ত গোটা পরিবারটির সঙ্গে কথা বলেই বোঝা গেল পরিস্থিতি নাগালের বাইরে। গত কয়েক মাসেই এলাকায় মৃত্যুমিছিল ভয়াবহ আকার নিয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯১ থেকে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২২০। বিভিন্ন জেলার ব্লকগুলিতে জলেই কমবেশি আর্সেনিক রয়েছে। সমীক্ষা বলছে, মাঠের ফসল, গাছের ডাব, গরুর দুধ, মুরগির ডিম সবেতেই আর্সেনিক। বছর ঘোরেনি এখনও। বিষ্ণুপুরের অনন্ত দাস হারিয়েছেন তাঁর দুই দাদাকে। একই রকম গোবিন্দ দাস তাঁর বাবা মা দু’জনকেই হারিয়েছেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। ঘরে ঘরে উঁকি দিলে এমন উদাহরণ মিলছে ভূরি ভূরি।
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা, হাবরা-১, দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া বসিরহাট -১ এ পরিস্থিতিটা উদ্বেগজনক আকার নিয়েছে। এসব এলাকায় ভূগর্ভের জল আর একেবারেই নিরাপদ নয় জেনেও পান করতে বাধ্য হচ্ছেন বহু মানুষ। আর্সেনিক মুক্ত জলের গভীর নলকূপ বা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসিয়েও পরিকল্পনার অভাব ও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় সুফল মিলছেনা। ফলে বোতলের কেনা জল ভরসা। কিন্তু হতদরিদ্র দিনমজুরদের সেই সামর্থ্য আর কই?
আরও পড়ুন- রাহুল গান্ধী সমকামী! বোমা ফাটালেন স্বামী চক্রপাণি
গঙ্গার পরিশোধিত জল পাইপলাইনের মাধ্যমে এলাকায় পৌছনোর কথা শোনা গেছে বহুদিন ধরে। তার বাস্তবায়ন কবে হবে কেউ জানেনা। ফলে শরীরময় দগদগে ঘা নিয়ে মৃত্যুর দিন গুনে যাচ্ছেন গাজনা, বিষ্ণুপুর, সুটিয়ার শয়ে শয়ে আর্সেনিক আক্রান্ত। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধক্ষ্য ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ বলেন “এলাকায় আর্সেনিক উদ্বেগজনক আকার নিয়েছে। নৈহাটির গঙ্গা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে এলাকায় জল সরবরাহের কাজ দ্রুত গতিতে শেষ করার চেষ্টা চলছে।”