বৃষ্টিকে হারিয়ে জলে নয় আলোর রোশনাইয়ে ভাসল বাংলা

Updated By: Oct 19, 2017, 07:45 PM IST
বৃষ্টিকে হারিয়ে জলে নয় আলোর রোশনাইয়ে ভাসল বাংলা

নিজস্ব প্রতিবেদন : পূর্বাভাস ছিল বৃষ্টির। আশঙ্কা সত্যি করে সকাল থেকেই দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে শুরু হয় বিক্ষিপ্ত বর্ষণ। তবে বৃষ্টি দমাতে পারেনি কালীপুজোর উন্মাদনাকে। দক্ষিণেশ্বরে সকাল থেকে নামে ভক্তের ঢল। ভরতারিণীর আরাধনায় মেতে ওঠে সবাই। একই ছবি দেখতে পাওয়া যায় তারাপীঠেও। তবে কালীঘাটে রোজকার মতোই নিত্যপুজো হয়।

কালীপুজোর উন্মাদনার ছবি ধরা পড়ে জেলায় জেলায়। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ শক্তির আরাধনায় মেতে ওঠে সবাই। দুর্গাপুজোর মত কালীপুজোতেও থিমের লড়াই। কে কাকে টেক্কা দেবে, তার লড়াই। একনজরে দেখে নেওয়া যাক জেলার কিছু সেরা পুজো-

উত্তরবঙ্গ
শিলিগুড়ির তরুণ সংঘের পুজোর থিম অন্তরমহল। মণ্ডপে ব্যবহার করা হয়েছে হ্যাজাক, সুপুরি কাটার যাঁতি, কাঠের ক্লিপ, তোষক ইত্যাদি। প্রতিমা কুমোরটুলির থেকে।
জলপাইগুড়ির যুবমঞ্চের পুজোর বয়স ২৫ বছর। অর্জুনের লক্ষ্যভেদের থিমে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। একইসঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ের মাধ্যমে শান্তির বার্তা দেওয়া হয়েছে। এই পুজোর প্রতিমা সাবেকি।
আলিপুরদুয়ারের সবুজ সংঘের পুজো আটত্রিশ বছরে পা দিল। তাদের থিম, শক্তি। কাল্পনিক মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ।
কোচবিহারের পাটাকুড়া ক্লাবের পুজো পচাত্তর বছরে পড়ল। আলিপুরদুয়ারের শিল্পীর বাঁশের তৈরি মণ্ডপ দেখতে ভিড় জমেছে দর্শনার্থীদের।
উত্তর দিনাজপুরের রামকৃষ্ণ সংঘের এবারের থিম ভূতের রাজার দেশে। প্যান্ডেলের চারিদিকে গুপী গায়েন বাঘা বায়েনের ভূতের আদলে ছড়িয়ে রয়েছে ভূতের মডেল। প্যান্ডেলের চূড়োয় বসে রয়েছেন ভূতের রাজা স্বয়ং। মণ্ডপের ভেতরে প্রতিমার তিন ধরনের মূর্তি নজর কেড়েছে সকলের।
বালুরঘাট স্পোর্টিং ক্লাবের এবারের পুজোর থিম আদিম সমাজের জীবনযাত্রা। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরি হয়েছে। মণ্ডপে যেতে হবে একটি গুহার মধ্যে দিয়ে। গুহার দেওয়ালে রয়েছে আদিম যুগের সমাজজীবনের বিভিন্ন ছবি।
মালদহের পল্লিশ্রী ক্লাবের পুজো শুরু হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। আমেরিকার হিন্দু মন্দির অক্ষয়ধামের অনুকরণে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। নারী শক্তিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিমায়।

আরও পড়ুন, "তোমরাই আমার পরিবার", জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলিতে মাতলেন মোদী

দক্ষিণবঙ্গ
মুর্শিদাবাদের বাসস্ট্যান্ড ইয়ং কর্ণার্সে ৫৬ তম বর্ষে অভিনব উদ্যোগ। মণ্ডপের ভেতরে ও বাইরে পুতুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রতিমাতেও রয়েছে তারই ছোঁয়া।
নদিয়ার চাকদহ শিলিন্দা বিবেকানন্দ সংঘের পুজো ৩৪ তম বর্ষে পড়ল। লক্ষাধিক প্রদীপ ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। বেলপাতার আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। প্রতিমাতেও রয়েছে অভিনবত্ব।
বীরভূমের সিউড়ির ত্রাণসমিতির পুজো ৫৭ বছরে পা দিল। এবারের থিম মাটির টানে, বাঁশের বাঁধনে। মণ্ডপসজ্জা হয়েছে দেবী চৌধুরানীর নৌকোর আদলে। ভেতরে দেবী দুর্গা ও রামায়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানের বি আর আম্বেদকর ক্লাবের পুজোর থিম কৈলাশে শিব। নজরকাড়া মণ্ডপ আর তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিমায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই বিষয়টি।
পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল গোপালনগর ক্লাবে মণ্ডপের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি হয়েছে প্রতিমা। প্রতিমার উচ্চতা ৩৫ ফুট।
পুরুলিয়ার আদ্রা রেল শহরের বারো কুলহি সর্বজনীন পুজোর বয়স সাত। এদের থিম অ্যাকোয়ারিয়াম। কম বাজেটে অ্যাকোয়ারিয়ামের অনুষঙ্গ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন উদ্যোক্তারা।
বাঁকুড়ার খাতড়া উত্তরপল্লী সর্বজনীনের রাজহাঁসের আদলে মণ্ডপ নজর কেড়েছে সকলের। থিমে রয়েছে হংসের যুগল মিলন। মণ্ডপজুড়ে রয়েছে অসংখ্য রাজহাঁস। মূলত মশারি ও জাল ব্যবহার করা হয়েছে মণ্ডপে। ২৯ বছরের এই পুজোয় প্রতিমা সাবেকি।
হুগলির পান্ডুয়ায় মা কালীর দশটি রূপ উঠে এসেছে। তলদা বাঁশের ছিলা ব্যবহার হয়েছে মণ্ডপে। প্রতিমা বসে রয়েছেন পদ্মফুলের ওপরে। অভিনব এই ভাবনাই সেরার স্বীকৃতি দিয়েছে এই পুজোকে।
হাওড়ার বেলগাছিয়া বিবিএস ক্লাবের পুজোর এবার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। ঝিনুক দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। প্রতিমায় রয়েছে অভিনবত্ব।
উত্তর ২৪ পরগনার নজরকাড়া পুজোগুলির মধ্যে রয়েছে বারাসতেরকেএনসি রেজিমেন্ট, কাঁকিনাড়ার পানপুর বালকবৃন্দ, নৈহাটির বিজয়নগর অধিবাসীবৃন্দ, বারাসতের নবপল্লী অ্যাসোসিয়েশন, দমদমের তরুণ সংঘ প্রভৃতি।
ঝাড়গ্রামের রামগড় যুবগোষ্ঠী পুজোর থিম কর্ণ বধ। মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। মণ্ডপের পাশে তুলে ধরা হয়েছে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি। বিষয়ভাবনা ও প্রতিমায় সেরার শিরোপা পেয়েছে এই পুজো।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ইউথ কর্ণারের পুজোর বিষয়ভাবনা কাল্পনিক স্বর্গ। ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ, প্রতিমা। সৌন্দর্য ও বিষয়ভাবনায় অভিনবত্বের ছোঁয়ায় সেরার শিরোপা। খুশি উদ্যোক্তারা।
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার আলেয়া ক্লাবের থিম লক্ষ্যভেদ। মণ্ডপে ব্যবহার করা হয়েছে তালা, চাবি, বিভিন্ন ধরনের গাছের পাতা, বাঁশ কাঠ ও ফাইবার। ষাট ফুট উঁচু ও একশো কুড়ি ফুট চওড়া মণ্ডপ নজর কেড়েছে সকলের। প্রতিমায় রয়েছে শান্তির বার্তা।
দঃ ২৪ পরগনার সোনারপুর শক্তি সংঘের পুজো ৫৭ বছরে পড়ল। দক্ষিণ ভারতের একটি মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। মণ্ডপে ব্যবহার করা হয়েছে শামুখ ও ঝিনুক। মণ্ডপের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি হয়েছে প্রতিমা।

আরও পড়ুন, কামাখ্যাই কামের মুক্তি, এখানে সতীর যোনিই শক্তির উত্স

.