চরম বিরক্ত নেতৃত্ব, বৈশাখীকে নিয়ে বিদ্রোহ বিজেপির অন্দরেই

বৈশাখীর দাবি, বিজেপিতে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সমান মর্যাদা দিতে হবে তাঁকে। এখানেই বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের নেতারা। প্রাক্তন মেয়র তথা চার দশকের জনপ্রতিনিধি শোভনকে গুরুদায়িত্ব দিতে আপত্তি নেই তাঁদের। কিন্তু রাজনীতিতে আনকোরা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই প্রাধান্য দেওয়া সম্ভব নয়। 

Updated By: Aug 29, 2019, 08:54 PM IST
চরম বিরক্ত নেতৃত্ব, বৈশাখীকে নিয়ে বিদ্রোহ বিজেপির অন্দরেই

নিজস্ব প্রতিবেদন: তাঁর সক্রিয় রাজনীতিতে পদার্পণের পর মাস ঘোরেনি। তার আগেই বার বার শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে বিতর্ক। আর সঙ্গে অস্বস্তি বেড়েছে বিজেপিরও। সেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এবার বিক্ষোভ বিজেপির অন্দরে। অধ্যাপিকাকে সামলাতে নাস্তানাবুদ বিজেপি নেতারাও। 

গত ১৪ অগাস্ট দিল্লিতে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে যোগ দেন অধ্যাপিকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকেই ঝড় চলছে বিজেপির অন্দরে। যোগদানের আগেই দেবশ্রী রায়কে নিয়ে একপ্রস্থ নাটক হয় বিজেপির সদর দফতরে। শোভেনর সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দিতে সেখানে পৌঁছে যান রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায়ও। দেবশ্রীকে দেখেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বৈশাখী। শোভন জানিয়ে দেন, দেবশ্রী যোগ দিলে বিজেপিতে যোগ দেবেন না তিনি। সেই থেকে ঝুলে রয়েছে বিজেপিতে দেবশ্রীর যোগদান। 

 

বৈশাখীকে নিয়ে কলকাতায় রাজ্য বিজেপির সদর দফতরেও একপ্রস্থ নাটক হয় গত ২০ অগাস্ট। সেদিন শোভন চট্টোপাধ্যায়কে বিজেপির রাজ্য সদর দফতরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানায় বিজেপি। আমন্ত্রণপত্রে ছিল না বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। এতেই ক্ষুব্ধ হন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির নেতৃত্বকে ফোন করে অভিযোগ জানান, রাজ্য বিজেপি নেতারা তাঁকে মর্যাদা দিচ্ছেন না। দিল্লির হস্তক্ষেপে শেষে আমন্ত্রণপত্রে তাঁর নাম ঢোকে। দুপুরে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপির সদর দফতরে হাজির হন তিনি। 

এখানেই শেষ নয়, সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে ছিল বিজেপি বিধায়কদের বৈঠক। বিধায়ক হিসাবে তাতে যোগ দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। বৈশাখী সেই বৈঠকে যোগ দিতে গেলে তাঁকে দিলীপ ঘোষ বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। জানান, বৈঠকটি যেহেতু বিধায়কদের তাই বিধায়ক নন এমন কেউ সেখানে হাজির থাকতে পারবেন না। দিলীপবাবুর নির্দেশে ক্ষুব্ধ হয়ে বিজেপি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসেন তিনি। প্রায় ৫০ মিনিট সেখানেই বসে ছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন শোভনের। এমনকী সেদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে দিলীপবাবু রসিকতা করে শোভন - বৈশাখীকে ডাল - ভাতের সঙ্গে তুলনা করলেও বিরক্ত হন বৈশাখী। 

বৈশাখীর দাবি, বিজেপিতে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সমান মর্যাদা দিতে হবে তাঁকে। এখানেই বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের নেতারা। প্রাক্তন মেয়র তথা চার দশকের জনপ্রতিনিধি শোভনকে গুরুদায়িত্ব দিতে আপত্তি নেই তাঁদের। কিন্তু রাজনীতিতে আনকোরা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই প্রাধান্য দেওয়া সম্ভব নয়। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মতে, দলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রচুর অধ্যাপক রয়েছেন। রয়েছেন চিকিৎসক, আইনজীবীরাও। হঠাৎ বৈশাখীকে কোনও বড় দায়িত্ব দিলে তাঁরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করতে পারেন। 

দেবশ্রীর যোগদান নিয়ে বিজেপিতে কারও কোনও আপত্তি নেই: দিলীপ ঘোষ

এক্ষেত্রে পালটা যুক্তি খাড়া করেছে বিজেপিরই অন্য একটি পক্ষ। তাঁদের দাবি, বিজেপিতে সদ্য যোগদানকারী ভারতী ঘোষকে সহ সভাপতির পদ দিয়েছে দল। তাহলে বৈশাখী নয় কেন? বিজেপি নেতৃত্বের যুক্তি, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে ও তার পরে দলের সংগঠন মজবুত করতে লাগাতার কাজ করে গিয়েছেন ভারতী ঘোষ। কোনও পদে না থেকেও দলের কাজ করে গিয়েছেন তিনি। এমনকী কখনও পদও চাননি তিনি।

শোভন - বৈশাখীকে বোঝাতে বুধবার রাতে শোভনের বাড়িতে যান বিজেপি নেতা অরবিন্দ মেনন ও জয়প্রকাশ মজুমদার। গভীর রাত পর্যন্ত চলে বৈঠক। সূত্রের খবর, বৈঠকে বৈশাখীকে যে দলে শোভনের সমান প্রাধান্য দেওয়া সম্ভব নয় তা স্পষ্ট করা হয়েছে। সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর অযৌক্তিক বায়না কিছুতেই মানবে না দল। তার পরই বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে দেবশ্রী রায়ের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে ইঙ্গিতবহ মন্তব্য করেন দিলীপ ঘোষ। জানিয়ে দেন, দেবশ্রী রায়ের যোগদান নিয়ে দলে কোনও আপত্তি নেই। বিজেপিতেই যোগ দিচ্ছেন দেবশ্রী। 

এর পরই নতুন গুঞ্জন শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরে। তবে কি 'অহঙ্কারী' বৈশাখীকে সরাতে দেবশ্রীকে কাঁটা হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে দল?

.