সন্তানকে নির্দয় ভাবে মারধর বাবার, প্রতিবাদে প্রতিবেশী; চিকিৎসা জরুরি বললেন মনোচিকিৎসকেরা

চাপের মুখে বাবা স্বীকার করে নেন ছেলেমেয়েকে মারধরের কথা।

Updated By: Jan 16, 2021, 06:16 PM IST
সন্তানকে নির্দয় ভাবে মারধর বাবার, প্রতিবাদে প্রতিবেশী; চিকিৎসা জরুরি বললেন মনোচিকিৎসকেরা

নিজস্ব প্রতিবেদন: পড়াশোনায় গাফিলতি সহ্য করেন না কোনও মা-বাবাই। তবুও পড়াশোনার অজুহাতে সন্তানকে নির্দয় ভাবে মারধর করাটাও মেনে নেন না সংবেদনশীল মানুষজন। এমন ঘটনাই ঘটল পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডবেশ্বর থানা এলাকার খোট্টাডিহিতে। বাবা মারধর করলেন তাঁর ছেলেমেয়েকে আর তার প্রতিবাদ করলেন পাড়া প্রতিবেশীরা।

বর্ধমানের (burdwan) খোট্টাডিহির বাসিন্দা অশোক তিওয়ারি ইসিএলের কর্মী। তাঁর মেয়ে এগারো বছরের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ঈশিতা, ছেলে বছরদশেকের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মানস। ছেলেমেয়ে দুজনেই একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া।

বছরখানেক ধরেই তাদের বাবা পড়াশোনায় গাফিলতির অভিযোগে তাদের মারধর করে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। শনিবার এলাকাবাসীদের চোখে পড়ে, দুই শিশুর মধ্যে একজনের বাঁদিকের গালের একাংশ পোড়া, অন্য জনের ডান দিকের কান ফোলা। 

কী হয়েছে, ছেলেমেয়ের কাছে জানতে চান প্রতিবেশীরা। মানস ও ঈশিতার বক্তব্য শুনে চমকে ওঠেন তাঁরা। ঈশিতা জানায়, বাবা গরম তাওয়া দিয়ে ঈশিতাকে মারে, তার হাতে পেন দিয়ে ফুটিয়েও দেন বলে অভিযোগ করে। মানস জানায়, মেরে মানসের কান ফুলিয়ে দেন অশোক। এসব শুনে এলাকার মানুষ শনিবার চেপে ধরেন অশোককে। চাপের মুখে তিনি স্বীকারও করেন ছেলেমেয়েকে মারধরের কথা। সকলের সামনে এ নিয়ে ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি। 
নিজের ছেলেমেয়েকে মারধর করার ঘটনায় এলাকাবাসী অশোক তিওয়ারির শাস্তির দাবি তোলেন। তবে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে থানায় যাননি বা কোনও জনপ্রতিনিধির কাছেও দরবার করেননি। সামাজিক ভাবে একটা সচেতনতা গড়ে তোলার জন্যই তাঁরা এই দাবি জানাচ্ছেন।

কী বলছেন ঘটনাটা নিয়ে শহরের মনোবিদেরা? 

এসএসকেএম হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. ইন্দ্রনীল সাহা বলেন, ''এটা নিশ্চিত ভাবে মানসিক সমস্যা। 'অ্যাঙ্গার আউটবার্স্ট' অধিকাংশ সময়ই মানসিক সমস্যার বহিঃপ্রকাশ। হঠাৎ করে এভাবে রেগে যাওয়া এবং তার জেরে নিজের শরীরের কোনও ক্ষতি করা বা অন্যকে আঘাত করাও আসলে 'ইমপালস কন্ট্রোল ডিসঅর্ডার'। এর চিকিৎসা প্রয়োজন। এক্ষেত্রেও এই রাগী বাবার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। তাঁর সমস্যাটা চিহ্নিত করতে হবে। এবং প্রয়োজনে তাঁর চিকিৎসা শুরু করতে হবে।''  

শহরের আর এক মনোচিকিৎসক প্রফেসর ওমপ্রকাশ সিং ঘটনার বিবরণ শুনে জানান, এটা এখনকার বাবা-মায়ের একটা ট্রেন্ড। ছেলেমেয়েকে তাঁরা নিজেদের সম্পত্তি ভাবেন। ছেলেমেয়ের যে কোনও ক্ষেত্রের ব্যর্থতাকে নিজের ব্যর্থতা মনে করেন। ওমপ্রকাশ অবশ্য এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাবা-মায়ের স্ট্রেসের কথাও মনে করিয়ে দিতে ভোলেন না।

এখন প্রতিবেশীরা যদি অশোককে এই ধরনের কোনও সহায়তা জুগিয়ে দেন সেটাই সম্ভবত এই পরিস্থিতিতে সব চেয়ে উপযুক্ত হবে। 

Also Read: ঢপের চপ স্বাস্থ্যসাথী-পথশ্রী, ভারতের সবচেয়ে সুবিধাবাদী দল TMC : Suvendu

 

.