মাসে আয় ১০ হাজার! টানাটানির সংসারে চুড়িদার-নাইটি বিক্রি করেই সমাজসেবায় রত গোবিন্দবাবু

এবার প্রায় শখানেক মানুষের স্বাস্থ্যপরীক্ষার পাশাপাশি, নিজে হাতে তাঁদের কম্বল বিতরণ করেছেন।

Updated By: Jan 24, 2020, 02:42 PM IST
মাসে আয় ১০ হাজার! টানাটানির সংসারে চুড়িদার-নাইটি বিক্রি করেই সমাজসেবায় রত গোবিন্দবাবু

নিজস্ব প্রতিবেদন : সংসারে অভাব রয়েছে পুরোদমে। তবুও মন সমাজসেবায়। সংসার খরচের টাকা বাঁচিয়ে সমাজসেবা করাই তাঁর জীবনের ব্রত। গত কয়েক বছর ধরে এমনটাই চলে আসছে। সংসারে যতই টানাটানি থাকুক, তারমধ্যে থেকেই সমাজসেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নদিয়ার গোবিন্দ সেন।

নদিয়ার বাদকুল্লার বাসিন্দা গোবিন্দ পেশায় হকার। হকারি করেই যা আয় হয়। সেইসঙ্গে তাঁর স্ত্রী সেলাইয়ের কাজ করেন। দুজন মিলে যা রোজগার করেন, তাতে সংসারের সব প্রয়োজনই মেটে না। কিন্তু তারইমধ্যে প্রতিবছর নিয়ম করে স্বাস্থ্যপরীক্ষা, চক্ষুপরীক্ষার ব্যবস্থা করে আসছেন গোবিন্দবাবু। পাশাপাশি দুঃস্থ মানুষদের মধ্যে শীতবস্ত্রও প্রদান করেন তিনি।

গোবিন্দবাবুর কথায়, ছোটোবেলা থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল সমাজের দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু তখন তাঁর হাতে পয়সা ছিল না। তাই করতে পারেননি। এখন ভরপুর সংসার। প্রথমে পাঁপড় ও পরে কাপড়ের ব্যবসা করে সংসারের হাল কিছুটা ফিরেছে। যদিও অভাব এখনও রয়েছে, তবুও তারই মাঝে যতটুকু সম্ভব, তাই দিয়েই দুঃস্থ-গরিব মানুষদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করছেন তিনি।

সংসারে সব মিলিয়ে ৫ জন। বাড়িতে রয়েছেন বয়স্ক বাবা,মা, স্ত্রী, ছেলে। ৫ জনের সংসারে সব মিলিয়ে মাসে রোজগার ১০ হাজার টাকা। স্ত্রী  মিলি জানিয়েছেন, সংসারের কাজকর্মের ফাঁকে তিনি সেলাইয়ের কাজ করে থাকেন। তা থেকে যা আয় হয়, সেটাই তুলে দেন স্বামীর হাতে। অন্যদিকে গোবিন্দবাবু সাইকেলে করে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মেয়েদের চুড়িদার-নাইটি এসব বিক্রি করেন। একইসঙ্গে কখনও কখনও বাদকুল্লা থেকে ট্রেনে চেপে মুর্শিদাবাদে গিয়েও নাইটি বিক্রি করে থাকেন।

টানাটানির সংসার। ঘরে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। তবুও হাসিমুখ দম্পতির। সংসার খরচের টাকা বাঁচিয়ে সমাজসেবায় নিয়োজিত করেছেন নিজেদেরকে। টাকাপয়সার অভাবে যাঁরা স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতে পারেন না, মূলত তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন গোবিন্দবাবু। বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। এর পাশাপাশি শীতবস্ত্র ও প্রদান করেন। প্রথমবার ৩০ থেকে ৪০ জনকে শীতবস্ত্র দান করেছিলেন। তারপর থেকে প্রতিবছর দানের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

আরও পড়ুন, গলগল করে ঝরছে রক্ত! জখম শরীরে লাঠিপেটা করে চিতাবাঘ তাড়িয়ে 'হিরো' কুমার

এবারে প্রায় শখানেক মানুষের স্বাস্থ্যপরীক্ষার পাশাপাশি, নিজে হাতে তাঁদের কম্বল বিতরণ করেছেন। গোবিন্দবাবুর এই উদ্যোগে যারপরনাই খুশি এলাকার বাসিন্দারা।  প্রতিবেশীরা বলছেন, গোবিন্দবাবুর এই উদ্যোগ সমাজের কাছে একটা বার্তা। তাঁকে দেখে এগিয়ে আসবেন অন্যরাও।

.