যদি বলি ইমরান খানের পার্টির সঙ্গে কথা বলে আমাকে বলছেন! ফিরহাদকে জিতেন্দ্র
মঙ্গলবার 'সমাধান বৈঠকে'র আগে ফিরহাদকে নিশানা করেছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: মোদী সরকারের স্মার্ট সিটি প্রকল্পে যোগ না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে, পুরমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন আসানসোল পুরসভার প্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে, শহরবাসী-কে বঞ্চনার অভিযোগও করেছেন তিনি। বিধানসভা ভোটের আগে জিতেন্দ্রর গলায় বিস্ফোরক সুরে, বাড়ছে জল্পনা। কালই তাঁকে কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছে দল। সন্ধেয় বৈঠক। তাঁকে চিঠি পাঠানো অত্যন্ত খারাপ হয়েছে বলে মনে করছেন ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। তার পাল্টা জিতেন্দ্র তিওয়ারি (Jitendra Tiwari)বলেন,'লোকসভা ভোটের পর বিজেপি যখন একের পর এক পার্টি অফিস দখল করছিল, তখন তো ববি হাকিমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমি ছিলাম।'
জিতেন্দ্র তিওয়ারি শুধুমাত্র পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যানই নন। তিনি পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক ও জেলা তৃণমূল সভাপতি। তাঁর চিঠির পিছনে বিজেপির হাত আছে বলেই মনে করছেন পুরমন্ত্রী। ফিরহাদ হাকিম বলেন,'আমরা কোনটা পারব কোনটা পারব না। সেটা আমার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। চিঠি দেওয়া অত্যন্ত খারাপ। আমার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। জিতেন আমার ছোট ভাই। আমাদের দলের সৈনিক। বিজেপির কেউ কেউ এসে ভুল বোঝাচ্ছে। এগুলি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বললে সমাধান হবে।'
মঙ্গলবার 'সমাধান বৈঠকে'র আগে ফিরহাদকে নিশানা করেছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাঁর কথায়,'আমি যদি ববি হাকিমকে বলি, উনি যা করছেন ওই কী নাম পাকিস্তানের ইমরান খানের পার্টির সঙ্গে কথা বলে আমাকে বলছেন। এরকম হালকা কথা কেউ বলে! লোকসভা ভোটের পর বিজেপি যখন পার্টি একের পর অফিস দখল করছিল তখন তো ববি হাকিমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমি ছিলাম। বিজেপি মেরে ঘর ঢুকিয়ে দিয়েছিল, তখন আমি ছিলাম।'
চিঠি ফাঁসে ঘুরিয়ে ফিরহাদকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বলেন,'এটা প্রকাশ করা না হলে কোনও সেলের কাছে যেত না। এটা ববি হাকিমের বুক সেল্ফের কাছে রাখা উচিত ছিল। অন্য সেলের কাছে যাবে কেন?' তবে আগামিকালের বৈঠকে তিনি থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
আসানসোল-বাসীর সঙ্গে রাজ্য সরকারে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে এ দিন কড়া ভাষায় চিঠি দেন আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন মেয়র, এখন প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ২০১৫ এ মোদী সরকার স্মার্ট সিটি প্রকল্প ঘোষণা করে। রাজ্য তাতে যোগ দেয়নি। এ নিয়ে জিতেন্দ্র লিখেছেন, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক আসানসোলকে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের জন্য বেছে নেয়। আপনারা অনুমতি দিলে শহরের উন্নয়নে ২ হাজার কোটি টাকা আসত। রাজনৈতিক কারণে সরকার ছাড়পত্র না দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্যও আসানসোল কেন্দ্রের কাছ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা পেতে পারত যা আপনারা অনুমতি দেননি বলে পাওয়া যায়নি। আসানসোলের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও সরাসরি আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ করে জিতেন্দ্র লিখেছেন, স্মার্ট সিটির বদলে রাজ্য সরকার টাকা দেবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে তা দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন রাস্তা, টাউন হল সংস্কারের মতো প্রকল্পেও রাজ্য সরকার ছাড়পত্র দেয়নি।
তাঁর এই চিঠির পরই শুরু হয়ে যায় বিভিন্নরকম জল্পনা। তাতে অন্তত প্রকাশ্যে জল ঢালতে চেয়ে জিতেন্দ্র তিওয়ারি আবার, নিজের দলের দিকেই আঙুল তুলে বসেছেন।জিতেন্দ্র তিওয়ারির চিঠি হাতে তুলে দিয়েছে নতুন অস্ত্র। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে টুইটারে তোপ দেগেছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য।
Asansol Mayor and TMC MLA Jitendra Tiwari openly accuses Mamata Banerjee’s government of depriving Asansol of central funds and impeding its development as a Smart City. He also calls out Pishi for false promises and unfulfilled projects.
Every urban centre in WB is suffering... pic.twitter.com/fEgkq9D44c
— Amit Malviya (@amitmalviya) December 14, 2020
আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে অতীতে বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন জিতেন্দ্র। এই চিঠির পর অবশ্য তাঁকে ধন্যবাদই দিচ্ছেন বাবুল।হিন্দি-ভাষী অধ্যুষিত আসানসোলে গেরুয়া শিবিরের শক্তি রয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলে লড়াইয়ে অন্যতম প্রধান মুখই বেসুরো গাওয়ায় শিল্পাঞ্চলে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। রানিগঞ্জ গার্লস কলেজ এবং টিডিবি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতির পদ থেকেও তো ইস্তফা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- দুয়ারে সরকার : গ্রামবাসীদের সুবিধার্থে তৃণমূলের পার্টি অফিস তুলে দিয়ে সেখানে হল উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র!