রাজ্যে প্রথম এমন ঘটনা, হাওড়ায় করোনাকে হারিয়ে সন্তান কোলে হাসিমুখে বাড়ি ফিরলেন মা
মায়ের কাছেই একটি বিশেষ ট্রে-র মধ্যে রাখা হয়েছিল তাঁর সন্তানকে। মা ও শিশুর মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা হয়েছিল, যাতে সংক্রমণ সন্তানের মধ্যে না ছড়ায়।
নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনা ভীতি নয়, লড়াইয়ের। করোনা আক্রান্ত প্রসূতি চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন হাওড়ার ফুলেশ্বরের সঞ্জীবনী হাসপাতালে। সেখানেই জন্ম দেন সুস্থ সদ্যোজাতের। তারপর চিকিৎসায় ধীরে ধীরে নিজেও সুস্থ হন। আর আজ কোলে সন্তান নিয়ে হাসিমুখে ফিরে গেলেন বাড়িতে। এই ঘটনাকে সামনে রেখে নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করলেন হাওড়ার ফুলেশ্বরর সঞ্জীবনী হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও কর্মীরা। সুস্থ আছেন ওই মা। সদ্যোজাতও সুস্থ। কোনওরকম সংক্রমণ হয়নি ওই সদ্যোজাতের। আর তাই মা ও শিশুকে পাশাপাশি রেখে 'V' চিহ্ন দেখিয়ে যুদ্ধ জয়ের ইঙ্গিত দিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মীরা।
PPE অর্থাৎ পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্টর ভিতর থেকে যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে যুদ্ধজয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টি। হাসপাতালের অধিকর্তা শুভাশিষ মিত্র বলেন, "আমাদের এখানে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আমরা তাই বিশেষভাবে সেই ওয়ার্ডকে তৈরি করেছি। পরপর ৪টি স্তর পার হয়ে তবেই নোভেল করোনা আক্রান্ত কিংবা সন্দেহে যাঁরা চিকিৎসার জন্য ভর্তি আছেন, তাঁদের কাছে পৌঁছানো যায়। গত ১৩ এপ্রিল ওই প্রসূতি অসুস্থ হয়ে ভর্তি হন। তিনি নোভেল করোনা সংক্রমণে অসুস্থ হন এবং ভর্তি হন। তারপর থেকে আমাদের এখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। ১৮ তারিখ তাঁর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। ১৯ তারিখ আমাদের এখানকার চিকিৎসক-নার্সরা সিদ্ধান্ত নেন, বিশেষ পদ্ধতিতে সংক্রমণ রুখতে যাবতীয় ব্যবস্থা করে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হবে। তবে অস্ত্রোপচার অবশ্য করতে হয়নি। নর্মাল ডেলিভারি হয় ওই প্রসূতির। এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি।"
সঞ্জীবনীর অধিকর্তা আরও জানান, সদ্যোজাত ওই শিশুটি ওজনে ২.৭ কিলোগ্রাম হয়। আপাতত সুস্থ আছে সে। মাকে PPE,মাস্ক পড়িয়ে রাখা হয়েছিল। স্যানিটাইজার ব্যবহার করানো হচ্ছিল। সবরকম নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছিল মাকে। আর মায়ের কাছেই একটি বিশেষ ট্রে-র মধ্যে রাখা হয়েছিল তাঁর সন্তানকে। মা ও শিশুর মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা হয়েছিল, যাতে সংক্রমণ সন্তানের মধ্যে না ছড়ায়। শুভাশিসবাবুর কথায়, "এ যেন যুদ্ধ জয়। তাকিয়ে দেখুন PPE-র আড়াল থেকে খুশি, বিশ্বাস, লড়াই আর আত্মবিশ্বাসের এমন ছবি কিন্তু বিরল। যা আমাদের এখানকার চিকিৎসক-নার্স ও কর্মীরা করে দেখালেন। লড়াইটা এভাবেই শুরু হোক না সব জায়গাতেই।"
সত্যি-ই অনন্য। PPE-র আড়াল থেকে চোয়াল শক্ত, হাসিমাখা মুখগুলো একটাই কথা বলছে প্রতিনিয়ত, 'লড়াই চলছে।' নতুন 'জীবন' হাতে একদল তরুণ-তরুণীর দৃপ্ত আত্মবিশ্বাস সত্যিই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহসী হওয়ার, মনোবল না হারানোর বার্তা দিচ্ছে বাইকে।
আরও পড়ুন, কোভিড পজেটিভ এক চিকিৎসক, ২৮ জনের সরকারি এক্সপার্ট টিম উত্তরবঙ্গে পৌঁছেই কোয়ারেন্টাইনে!