Katwa: শারীরিক প্রতিবন্ধকতা-দারিদ্র-জীবন যুদ্ধ, হারাতে পারেনি কাটোয়ার শঙ্করকে
শঙ্করকে নিয়ে গর্বিত তাঁর এক প্রতিবেশী জানান, ছোট থেকেই দেখে আসছি শঙ্করকে। কারও কাছে হাত পেতে নয়, নিজের সমস্ত রকম প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে নিজের অদম্য ইচ্ছায় সৎ পথে রোজগার করে শুধুমাত্র নিজের নয় মায়ের মুখেও খাবার তুলে দিচ্ছে
সন্দীপ ঘোষ চৌধুরী: শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হার না মেনে সেই প্রতিবন্ধকতাকেই জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার বানিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কাটোয়ার শঙ্কর। জন্ম থেকেই মূক ও বধির শঙ্কর দেবনাথ। কাটোয়ার পানুহাট আদর্শ পল্লীর বাসিন্দা মিনা দেবনাথের ৩ ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় শঙ্কর দেবনাথ। জন্ম থেকেই মূক ও বধির। প্রাইমারি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে শঙ্কর। তারপর শারীরিক অক্ষমতা বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় লেখাপড়া আর এগোয়নি। বর্তমানে নাম সইটুকু করতে পারেন শঙ্কর।
আরও পড়ুন-'বিচার চাই', আরজি করকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ মৃতের পরিবার
শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে শঙ্করের লড়াই শুরু সেই ছোট বয়স থেকেই। তবে শারীরিক অক্ষমতা তাকে মানসিক দৃঢ়তাকে হারাতে পারেনি কখনই। বরং তা আরও শক্ত করেছে। শারীরিক প্রতিব্ধকতার কাছে হার মেনে কারও কাছে হাত পেতে জীবন চালান না শঙ্কর। শঙ্করের জামাইবাবু সোনার গহনা তৈরির কারিগর। তিনি হাত ধরে নিয়ে গিয়ে কাছ শিখিয়েছেন শঙ্কর ও তার ভাইকে। সোনার বল তৈরির কারিগর শঙ্কর দেবনাথ।
বাড়ি থেকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল শঙ্করের। একটি মেয়ের জন্মের পর শঙ্করের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি তাঁর স্ত্রী। ছোট মেয়েকে নিয়ে শঙ্করকে ছেড়ে চলে যান তাঁর স্ত্রী। ছোট ভাইও বিয়ে করে অন্যত্র সংসার শুরু করে। বাবা মারা গিয়েছেন। মা ও নিজের জীবনধারনের জন্য অন্যের কাছে হাত না পেতে লড়াই শুরু করে শঙ্কর। সোনার কাজ করে দিব্যি চলছিল মা ছেলের সংসার। বাদ সাধল করোনা। আর করোনার সঙ্গে আসা লকডাউন। অন্যান্য ছোট ছোট কারিগরদের সঙ্গে শঙ্করও কাজ হারায়। জীবনধারণের লড়াইটা আরো কঠিন হয়ে উঠলেও অদম্য জেদের সঙ্গে নতুন লড়াই শুরু করে শঙ্কর। জামাইবাবুর ধূপ তৈরির কারখানা থেকে ধূপ নিয়ে শুরু করে ধূপ ফেরি করার ব্যবসা। বাদ সাধে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। এখানও অদম্য শঙ্কর। সাইকেলে হ্যান্ডেলে দুটি বড়ো ব্যাগে বোঝাই করা ধুপ আর মুখে বলতে না পারার সমস্যার সমাধানে সাইকেলের সামনের ঝাঁকায় বোর্ডের উপরে লিখে রেখেছে ধূপের দাম। সকালের আলো ফুটলেই সাইকেলে ধূপের ব্যাগ চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ে শঙ্কর। কাটোয়া শহরের অলিতে গলিতে, কখনো মোড়ের মাথায় , কখনো বড়ো রাস্তায় কখনো সরকারি দপ্তরে সাইকেল নিয়ে ধূপ ফেরি করে পয়সা রোজগার করে। কোনো দিন সন্ধ্যায় কোনো দিন রাতে বাড়ি ফেরে। তবে শঙ্কর শুধু কাটোয়া শহরেই নয় গ্রাম গঞ্জেও চলে যায় ধূপ ফেরি করার জন্য। যদি কোথাও হারিয়ে যায় তাই হাতের মধ্যে উল্কি করে লিখে দেওয়া আছে তার নাম ঠিকানা। শুধু মাত্র ধূপ বিক্রি নয় বাড়ির মধ্যে এখনও সোনার বল তৈরির কাজও করেন শঙ্কর দেবনাথ।
শঙ্করকে নিয়ে গর্বিত তাঁর এক প্রতিবেশী জানান, ছোট থেকেই দেখে আসছি শঙ্করকে। কারও কাছে হাত পেতে নয়, নিজের সমস্ত রকম প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে নিজের অদম্য ইচ্ছায় সৎ পথে রোজগার করে শুধুমাত্র নিজের নয় মায়ের মুখেও খাবার তুলে দিচ্ছে। শঙ্করকে ভালোবাসে সরকারি দপ্তরের কর্মীরাও। বর্তমান দিনে যখন যুব সমাজ অল্প কারনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিচ্ছে, আবার অন্য দিকে বহু বৃদ্ধ মা বাবার ঠাঁই হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম ঠিক সেই সময় শঙ্করের মতন ছেলেরা সকলকে অনুপ্রেরণা।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)