Rabindranath Tagore: ভূমিকম্পে ধ্বংস! নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রথীন্দ্রনাথের জন্য বাড়িটি তৈরি করিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
কবি জমি কিনেছিলেন পুত্রবধূ প্রতিমাদেবীর নামে। এই বাড়িতেই ছিল তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথের স্টুডিয়ো 'চিত্রভানু'।
নিজস্ব প্রতিবেদন: পাহাড়ে রবীন্দ্রনাথ বললেই আমরা মংপুতে রবীন্দ্রনাথের কথাই মূলত ভাবি। তবে বিষয়টা কিন্তু তেমন নয়। দার্জিলিং-অঞ্চলে গেলে রবীন্দ্রনাথ শুধু যে মংপুতেই থাকতেন, তা কিন্তু নয়। তাঁর প্রিয় জায়গা ছিল কালিম্পং। এখানে দুটি বাড়ি ছিল কবির স্মৃতিবিজড়িত। একটি 'গৌরীপুর হাউস', অন্যটি 'চিত্রভানু'।
১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪০-এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ কালিম্পংয়ে অন্তত বারচারেক এসেছেন। শেষবার আসেন ১৯৪০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। সে সময়ে তিনি এসে উঠেছিলেন 'গৌরীপুর হাউসে'। সে বছর তিনি অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন এখানে। এই বাড়িটি ছিল ময়মনসিংয়ের জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর। ব্রজেন্দ্রকিশোর গৌরীপুরেরও জমিদার ছিলেন। কালিম্পং শহর থেকে বাড়িটি মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে। এই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের ৮০তম জন্মদিন পালিত হয়েছিল। এই উপলক্ষে কবি স্বরচিত কবিতাপাঠ করেছিলেন যা আকাশবাণীতে সম্প্রচারিত হয়েছিল। বিষয়টি সেই সময়ে ছিল খুবও চিত্তাকর্ষক, অভিনব ও চমকপ্রদ।
দেখতে গেলে কবির সাময়িক আবাস 'গৌরীপুর হাউজ' থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে অবস্থিত 'চিত্রভানু' বাড়িটিও ঐতিহ্যে কম ঋদ্ধ নয়। ইতিহাস বলছে নোবেলজয়ী কবি স্বয়ং দাঁড়িয়ে থেকে নির্মাণ করিয়েছিলেন বাড়িটি। তিনি কালিম্পংকে তাঁর 'সেকেন্ড হোম' তৈরি করতে চেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। নিজে কালিম্পং গেলে গৌরীপুর হাউজে উঠতেন। ছেলেবউয়ের জন্যও একটি আস্তানা করে দিতে চেয়েছিলেন। 'চিত্রভানু'র জমিটি কিনেছিলেন পুত্রবধূ প্রতিমাদেবীর নামে। এই বাড়িতেই ছিল তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথের স্টুডিয়ো 'চিত্রভানু'ও। 'চিত্রভানু' নামেই পরিচিত হয় বাড়িটি।
সময়টা পঞ্চাশের দশক। রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত গৌরীপুর লজে ২৫ বৈশাখের প্রভাতী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। আবার কালিম্পংয়ের টাউন হলে ২৫ বৈশাখের সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সেই সময়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রপুত্রবধূ প্রতিমা দেবী 'চিত্রভানু' থেকে চলে আসতেন। পুরনো দিনের সাক্ষ্য বলছে-- সে সময়ে কালিম্পংয়ে বাঙালির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। 'চিত্রভানু' বাড়িটির উত্তর দিকে খোলা গোল বারান্দায় পালিত হত কবির জন্মদিন। পাহাড়িয়ারা তো থাকতেনই, প্রতিমা দেবীর আমন্ত্রণে শান্তিনিকেতন থেকে অনেকেই চলে আসতেন সেই জন্মজয়ন্তীতে যোগ দিতে।
২০১১-র ভূমিকম্পে রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত তথা রবীন্দ্র-পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিবিজড়িত এহেন এক বাড়ি বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আজও বাড়িটিতে কবির ব্যবহৃত টেবিল-চেয়ার ইত্যাদি টিকে আছে। রয়েছে কবির স্মৃতিবিজড়িত শিল্পকর্ম, লেখালেখি। কিন্তু বাঙালি মংপু যত মনে রেখেছে গৌরীপুর বা চিত্রভানু তত মনে রেখেছে কি?
আরও পড়ুন: Rabindranath Tagore: কালিম্পংয়ের এই বাড়ি থেকেই টেলিফোনে কবিতা পড়লেন কবি, সম্প্রচারিত হল আকাশবাণীতে