পর্যালোচনার নামে সময় নষ্ট আর কত কাল? বিস্ফোরক সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য
মৌমিতা চক্রবর্তী
মৌমিতা চক্রবর্তী
লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে ৩৯টি আসনেই জামানত জব্দ হয়েছে বামপ্রার্থীদের। মাত্র একটি আসনে মুখরক্ষা করেছেন বিকাশ ভট্টাচার্য। কিন্তু তারপরেও নেতৃত্বের উদাসীন আচরণে দৃশ্যই ক্ষুব্ধ উপর থেকে নিচুতলা। পরাজয়ের দায় স্বীকার করার কোনও গরজ নেই, খালি মেরুকরণের রাজনীতি হয়েছে বলেই সাফাই গেয়েছে আলিমুদ্দিন। আর এখানেই আপত্তি বামপন্থী সমর্থকদের। সেই আপত্তির সুরই শোনা গেল উত্তর ২৪ পরগনায় সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তন্ময় ভট্টাচার্যের গলায়।
লোকসভা ভোটে ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। তবে,ভোটে সবচেয়ে হতশ্রী হাল বামেদের। স্বাধীনতার পর প্রথমবার বাংলায় শূন্যে এসে ঠেকেছে লাল নিশান। নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন নেতা কর্মীরা।বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতামূলক মেরুকরণের রাজনীতিকে কাঠগড়ায় তুলে দায়সারা সাফাই দিয়েছেন বাম নেতৃত্ব। তন্ময় ভট্টাচার্যের কথায়, ''খুবই দুর্ভাগ্যজনক পরাজয়ের দায় স্বীকার করছি এটা বলা হচ্ছে না কোথাও। একটা বিবৃতিও চোখে পড়েনি''।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বামেদের ভোট ছিল ৩০%। ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বামেদের ভোট হয়েছে ৮%। যাদবপুর ছাড়া বাকি সব আসনেই বামপ্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। প্রমোদ দাশগুপ্ত, জ্যোতি বসুদের রাজ্যে এমনই ক্ষয়িষ্ণু দশা লাল পতাকার। কিন্তু, তাতেও নেতাদের তাপ উত্তপ কই? ভোটের ফলের দিনই পর্যালোচনা হবে বলে দায় সেরেছে রাজ্য নেতৃত্ব। আর তাতেই বাম কর্মীদের ক্ষতে পড়েছে নুনের ছিটে। লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে মঙ্গলবারই পোস্টমর্টেমে বসেছিল বিভিন্ন জেলা কমিটি। ফল নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়। ঘুরে দাঁড়ানোর কথাও বলা হয়। কিন্তু, পথ কোনটা? দিক নির্দেশ কই? প্রশ্ন বাম কর্মীদের।
২০১০ সাল থেকে বাম ভোট ব্যাঙ্কের ক্ষয়রোধে একের পর এক বৈঠক হয়েছে, ড্রাফট তৈরি হয়েছে, শুদ্ধিকরণ কর্মসূচিও কম হয়নি। কিন্ত, কাজের কাজ হয়েছে কতটা? মহারাষ্ট্রের কৃষক জাঠা সফল। বাংলাতেও কৃষক জাঠায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই সাফল্য কেন ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হল না? ব্রিগেডে বামেদের সভায় ভিড় কম হয়নি, ভোটে তার প্রতিফলন কোথায়? সংগঠনের রাশ এখনও ষাটোর্দ্ধ নেতাদের হাতেই, নতুন মুখদের সামনে তুলে আনা হল না কেন? তাদের মতামতকে আদৌ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কি? রাজ্যে মেরুকরণের ভোটের ধুয়ো তুলছেন বাম নেতারা। কর্মীদের প্রশ্ন, তা রোখার জন্য কর্মী সমর্থকদের পাশে কতটা থেকেছেন নেতারা? জেলায় জেলায় তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে বাম কর্মীদের। একের পর এক পার্টি অফিস দখল হয়েছে। মারের হাত থেকে বাঁচতে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন কর্মীরা, তা রুখতে কেন মাঠে নামেননি আলিমুদ্দিনের নেতারা?
তন্ময়বাবু বলেন,''ঘটনা ঘটনার গতিতে ঘটে যাবে। চিরকালীন পর্যালোচনার নামে সময় নষ্ট করব। মানুষের এত সময় নেই। বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতি করবে এটাই তো স্বাভাবিক। তাঁর পাল্টা কেন প্রেক্ষাপট তৈরি করতে পারলেন না বামেরা। কংগ্রেসে সঙ্গে জোটও ভেস্তে দিয়েছেন। ভিতরে সঠিক নেতৃত্ব থাকলে সামনে আসুন। নইলে বাইরে থেকে আনা হোক''। বারবার ব্যর্থতার পরও কেন নেতৃত্বের বদল হবে না, সেই প্রশ্ন তুলছে বাম কর্মী-সমর্থকরাও।
কয়েকদিনের মধ্যে রাজ্য কমিটির বৈঠক। সেখানে এইসব প্রশ্নে ঝড় উঠতে চলেছে। ইতিমধ্যেই বহু নেতা খোলা চিঠি দিয়েছেন। আর বাকিরা অপেক্ষা করছেন। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হয়তো শুধু ইতিহাসের পাতাতেই রয়ে যাবে লাল পতাকার অস্তিত্ব।
আরও পড়ুন- গুজরাটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রায়গঞ্জের সিপিএমের রিনা সাহাকে শপথগ্রহণে আমন্ত্রণ মোদীর