#উৎসব: কালীপুজো এলেই যে দুই কালীসঙ্গীত রচয়িতাকে বেশি করে মনে পড়ে বাঙালির

আত্মনিবেদনে মহীয়ান রামপ্রসাদ, আর মর্মছেঁড়া ভাষার আবেগে উজ্জ্বল কমলাকান্ত।

Updated By: Nov 2, 2021, 08:16 PM IST
#উৎসব: কালীপুজো এলেই যে দুই কালীসঙ্গীত রচয়িতাকে বেশি করে মনে পড়ে বাঙালির

সৌমিত্র সেন

বাঙালি সারা বছরই গুনগুন করে শ্যামাসঙ্গীত গায়। অনেক সময় হয়তো তারা খুঁজেও দেখে না, কার গান এগুলি। কিন্তু কালীপুজো এলে যখন শ্যামাসঙ্গীতের চর্চা বেড়ে যায় তখনই গাঙ্গেয় উপত্যকার দুই মহান কালীসঙ্গীত রচয়িতার কথা আলাদা করে মনে না করে পারে না বাঙালি। এঁরা হলেন সাধক রামপ্রসাদ ও কমলাকান্ত।  

রামপ্রসাদ একাধারে শক্তিসাধক, কবি ও গায়ক। তাঁর রচিত গানের গীতভঙ্গি 'রামপ্রসাদী সুর' নামে খ্যাত। তার গান বঙ্গসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। তাঁর এই সব ভক্তিসঙ্গীত বহুযুগ ধরে বাংলার পথেঘাটে শোনা যায়। চাষি, মাঝি, পথিক, ভিক্ষুক-- সকলের কণ্ঠেই ধ্বনিত হয় তাঁর সুর।

আরও পড়ুন: #উৎসব: বাঘাযতীনের হাতে শুরু হওয়া সমিতির পুজো পা রাখল ৯৪-য়ে

শোনা যায়, রামপ্রসাদ গঙ্গাতীরে বসে প্রাণ-আকুল করা সুরে গান করতেন। একদিন তাঁর সেই গান শুনে গঙ্গাবক্ষে নদিয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বজরা নাকি থেমে যায়। গানমুগ্ধ কৃষ্ণচন্দ্র শিল্পী ও সাধকের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাভক্তির নিদর্শন স্বরূপ রামপ্রসাদকে দান করেন একান্ন বিঘা নিষ্কর জমি। রামপ্রসাদের সাধনা নিয়ে নানা মিথ আছে। যেমন-- বাড়ির উঠোনে একবার বেড়া বাঁধছিলেন রামপ্রসাদ। মেয়ে জগদীশ্বরীকে তিনি বেড়ার অপর দিক থেকে দড়িটা বাড়িয়ে দিতে বলেন। জগদীশ্বরী বাবার আদেশ ভুলে মায়ের সঙ্গে সংসারের কাজে মেতে যায়। এদিকে রামপ্রসাদ শ্যামামায়ের গান ধরেন আর বেড়া বাঁধেন। এক সময় বেড়াবাঁধা শেষও করেন। এদিকে বেড়ার দড়ি ফেরানোর কথা যখন মনে পড়ে জগদীশ্বরীর সে ছুটে আসে বাবার কাছে। এসে দেখে বাবার বেড়া বাঁধা শেষ হয়ে গেছে! এদিকে, এতক্ষণ তাঁকে কে দড়ি ফিরিয়ে দিল, তা ভেবে আরও ভাববিহ্বল হয়ে পড়েন সাধক রামপ্রসাদ।

বাংলার শ্যামাসঙ্গীতের উদ্ভাসের ক্ষেত্রে রামপ্রসাদ ছাড়া অন্যজন হলেন কমলাকান্ত। তাঁর বেশ কিছু পদ অতি পরিচিত। যেমন-- 'মজল মোর মন ভ্রমরা শ্যামাপদ নীল কমলে', 'সদানন্দময়ী কালী মহাকালের মনমোহিনী', 'আপনারে আপনি দেখ যেও না মন কারু ঘরে', 'শুকনো তরু মুঞ্জরে না', 'তুমি যে আমার নয়নের নয়ন'।

রামপ্রসাদের পরেই শাক্তপদাবলী তথা শ্যামাসংগীতের অন্যতম প্রধান কবি এই কমলাকান্ত। তিনি মহারাজ তেজচন্দ্রের গুরু এবং সভাকবি। কমলাকান্ত ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানে তাঁর মাতুলালয়ের চান্না গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সে বাবার মৃত্যু হলে মা মহামায়াদেবী দুই শিশু পুত্র কমলাকান্ত ও শ্যামাকান্তকে নিয়ে তাঁর পিত্রালয়ে যান। মহামায়াদেবী কমলাকান্তকে পড়াশোনার জন্য টোলে ভর্তি করেন। টোলে পড়াশোনার পাশাপাশি কমলাকান্ত গোপনে সাধনভজনও শুরু করেন। পরে বর্ধমানের মহারাজ তেজচন্দ্র তাঁর উচ্ছৃঙ্খল পুত্র প্রতাপচন্দ্রকে শিক্ষাদীক্ষায় উপযুক্ত করে তোলার জন্য কমলাকান্তকে নিয়োগ করেন। এই তেজচন্দ্রই নানা ভাবে কমলাকান্তের পৃষ্ঠপোষক হয়ে দাঁড়ান। সাধক কমলাকান্ত অজস্র ভক্তিগীতি রচনা করলেও মূলত আগমনী ও বিজয়ার পদেই তিনি শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়।

আগামী ক'দিন এই দুই মহান শ্যামাসঙ্গীত রচয়িতার গানই আকাশ-বাতাস আকুল করে তুলবে।   

(Zee 24 Ghanta App: দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

আরও পড়ুন: #উৎসব: কালীপুজোর রাত আলোয় আলো! শ্যামাপুজো কেন দীপান্বিতা?

.