শোভনের যোগদান ভন্ডুল করতে কে পাঠাল দেবশ্রীকে? তদন্ত শুরু বিজেপির
কাচের দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায়, করিডরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়।
অঞ্জন রায়
ভালয় ভালয় শোভনের যোগদান পর্ব মিটলেও দেবশ্রী রহস্যের সমাধানে মরিয়া বিজেপি। দেবশ্রী রায়কে দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে কে নিয়ে গেলেন, তা জানতে রীতিমতো খোঁজ খবর শুরু করেছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা। উঠে আসছে নানা তত্ত্ব। বিজেপির অন্দরে একদল বলছেন, দলেরই কেউ শোভনের যোগদান আটকাতে ডেকে নিয়ে গিয়েছেন দেবশ্রী রায়কে। অন্য পক্ষের দাবি, শোভনের বাড়া ভাতে ছাই দিতে দেবশ্রীকে পাঠিয়েছে তৃণমূলই।
বুধবার দুপুরে শোভন - বৈশাখী দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে পৌঁছনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যান রায়দিঘির তৃণমূল সাংসদ দেবশ্রী রায়। দেবশ্রী দিল্লির সদর দফতরে পৌঁছে গিয়েছেন শুনে বুধবার অবাক হয়ে যান রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষও।
শোভনের পুরনো বন্ধু হিসাবে দলে পরিচিত দেবশ্রী। তৃণমূলের প্রাক্তন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি শোভনের হাতেই রাজনীতির হাতেখড়ি তাঁর। তবে বৈশাখীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পর দেবশ্রীর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে শোভনবাবুর। সেই দেবশ্রীকে কী ভাবে বিজেপির কেন্দ্রীয় দফতরের কড়া নিরাপত্তাবলয় পেরিয়ে সটান ভবনের দোতলায় উঠে গেলেন বুঝতে পারছেন না কেউ। বিজেপি নেতাদের মতে, দলের কেউ তাঁকে সেখানে পৌঁছে না দিলে দেবশ্রীর একার পক্ষে সেখানো পৌঁছনো সম্ভব নয়। এখানেই ঘনাতে শুরু করেছে রহস্য।
রাজ্য বিজেপির একাংশের মতে দেবশ্রীকে পথ দেখিয়ে বিজেপি সদর দফতরে শোভনের পাশের ঘরে নিয়ে গিয়েছেন দলেরই কেউ। দলের লোক ছাড়া ওই রকম অবাধে কেউ দফতরের অত ভিতরে পৌঁছতেই পারে না।
বুধবার বিজেপি দফতরে পৌঁছনোর পর শোভন - বৈশাখী সোজা চলে যান দলের সাধারণ সম্পাদক অরবিন্দ মেননের ঘরে। তখন সেখানে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাশের ঘরে পৌঁছে যান দেবশ্রী। অরবিন্দ মেননের ঘরে খবর পৌঁছয়, দেবশ্রী এসেছেন। শুনে বিজেপি নেতারা ভাবেন, শোভনবাবুর যোগদান অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে এসেছেন রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ভুল ভাঙে। কাচের দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায়, করিডরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়।
দেবশ্রীকে দেখেই বেঁকে বসেন শোভনবাবু। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দেবশ্রী রায় তাঁর সঙ্গে যোগদান করলে বিজেপিতে যোগ দেবেন না তিনি। অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয় বিজেপির সদর দফতরে। সমাধানের আশায় বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জেপি নড্ডার দ্বারস্থ হন বিজেপি নেতারা। ঠিক হয় আপাতত যোগ দেবেন না দেবশ্রী। এর পরই বিজেপিতে যোগদানে রাজি হন শোভন চট্টোপাধ্যায়। এই দড়ি টানাটানিতে বেশ কিছুক্ষণ পিছিয়ে যায় যোগদান পর্ব। সাড়ে ৪টেয় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শেষমেষ তা শুরু হয় প্রায় বিকেল ৫টায়। এক বিজেপি নেতার কথায়, 'দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এই রকম কেস কোনওদিন সামলাইনি।'
কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা চেয়ে অমিত শাহের কাছে আবেদন করলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়
বিজেপি সূত্রের খবর, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের যোগদান পর্ব একান্ত গোপন রেখেছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। শোভনের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেনন ও শিবপ্রকাশ। রাজ্যের তরফে দায়িত্বে ছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। গোটা প্রক্রিয়ার খবর ছিল শুধুমাত্র রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সাংগঠনিক সভাপতি সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। বিজেপি নেতাদের দাবি, শোভনবাবু বিজেপিতে যাচ্ছেন টের পেলে তাঁকে ভুয়ো মামলায় গ্রেফতার করাতে পারত শাসকদল। তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছিল শোভনের যোগদানের খবর।
বিজেপির একাংশের মতে, সেই সুযোগ না পেয়ে শেষ মুহূর্তে শোভনের যাত্রাভঙ্গ করতে দেবশ্রীকে দিল্লি পাঠিয়ে থাকতে পারে তৃণমূলই। দলীয় বিধায়ক দেবশ্রীকে বিজেপির সদর দফতরে দেখা গেলেও তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনও তদন্ত বা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করেনি তৃণমূল। উলটে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 'কাউকে বিরোধী দলের দফতরে দেখা গেলেই বহিষ্কার করতে হবে না কি?'