লকডাউনের বন্দিদশায় অনলাইনেই রোজগার করছেন 'কালী'
আগে উনানের সামনে দাঁড়াতেন, এখন ক্যামেরার সামনে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: এই দেড় মাসে 'মা কালী'র রোজগার ৬০০০ টাকা। দ্বিতীয় লকডাউনে সকলের পেশাতেই প্রভাব পড়েছে। তাঁরও পড়েছে। কিন্তু কম হলেও এক নতুন রোজগারের পথ পেয়ে গিয়ে খানিকটা বেঁচেই গিয়েছেন সামসিং পাহাড়ের 'মা কালী'। আগে উনানের সামনে দাঁড়াতেন, এখন দাঁড়াচ্ছেন ক্যামেরার সামনে।
সামসিং (Samsing) পাহাড়ের নীচে মেটেলির বাসিন্দা কণিকা সরকার। তবে বছর বত্রিশের কণিকা কাজ করতেন পাহাড়ের এক হোটেলে।
কিন্তু সেই কাজ মোটামুটি দু'বছর ধরে বন্ধ। লকডাউনের প্রভাবে পর্যটক না আসায় কাজটি তাঁর হাতে মাসখানেক হল নেইও। বাধ্য হয়ে পাহাড়ের বাস ছেড়ে মালবাজার মহকুমার মেটেলিতে নিজের বাড়িতেই চলে আসেন তিনি। কিন্তু বাপের বাড়িতে বসে বসেই-বা কতদিন চলবে? কিছু কাজ না করতে পারলে বেঁচে থাকাই মুশকিল হবে। কাজের খোঁজে তিনি অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু সেসব বিফলই হয়েছে।
শেষ চেষ্টা হিসেবে এলাকারই মেক-আপ আর্টিস্ট সুদীপ দেবের শরণাপন্ন হন কণিকা। সুদীপ এলাকার পরিচিত মুখ। যদি তাঁর রেফারেন্সে কোনও একটা কাজের জোগাড় হয়ে যায়-- এই আশা।
আরও পড়ুন: International Day against Drug Abuse and Illicit Trafficking পালিত হল রাজ্যের বিভিন্ন থানার উদ্যোগে
শেষমেশ আলো এল। কণিকা বলেন, 'আমাকে কিছুক্ষণ দেখে সুদীপ দেব বলেন, তুমি মা কালী (Ma Kali) সাজতে পারবে? আমার গায়ের রং চাপা। হয়তো তাই দেখেই এই আমায় এই প্রস্তাব সুদীপ দেবের।'
অন্নসংস্থানের কথা ভেবে রাজি হয়ে যান কণিকা।
এরপরই কণিকার কালী-যাত্রা আরম্ভ। নেন মা কালীর মেক-আপ। পেশার মোড়কে শক্তির আরাধনায় নেমে পড়েন কণিকা। হোটেলকর্মী কণিকা মা কালী সেজে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। মা কালীর বেশে বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে নিয়ে গিয়ে শুট করা হচ্ছে। এবং অনলাইনে (online) সেই ছবি সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠানো হচ্ছে, আপলোড হচ্ছে। মানুষ নিচ্ছেনও।
মেক-আপ আর্টিস্ট সুদীপ বলেন, 'প্রথমটায় আমি নিজেও বুঝতে পারিনি কণিকা মা কালীর ভূমিকায় এত মানিয়ে যাবেন। অনেকেই প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন কণিকাকে। উনি যে এত নিখুঁত এক্সপ্রেশন দেবেন, সত্যিই ভাবতে পারিনি। হয়তো ভাবতে পারেননি কণিকা নিজেও।' সুদীপ আরও বলেন, আসলে ডুয়ার্সের (Dooars) বিভিন্ন জায়গায় মা কালীর পুজো হয়। সাধারণের মনে মা কালী নিয়ে একটা ধর্মীয় আবেগ আছে। তাই কণিকাকে এই প্রস্তাব দিই। তবে তখনও বুঝতে পারিনি সেটা এত খেটে যাবে।
এক একটি শুটে কণিকা দুই থেকে তিন হাজার টাকা পান। তা দিয়ে কোনও রকমে সংসার চলে যায়। হোটেলে যখন কাজ করতেন কণিকা তখন মাস গেলে তাঁর হাতে আসত হাজার ছয়েক টাকা। সেটা বাঁধা ছিল। এখন তো আর বাঁধা মাইনে নয়। এখন সেশনপিছু টাকা। যেমন এই দেড় মাসে তিনি প্রায় ৬০০০ টাকা রোজগার করেছেন।
সুদীপ এই সব ভিডিও বিভিন্ন সাইটে দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। এতে তাঁর নিজের রোজগারও হচ্ছে।
(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)
আরও পড়ুন: চার মাস ধরে Link-Faliure কালনা পোস্ট অফিসে, সমস্যায় গ্রাহকেরা