সৌরমণ্ডলের সীমানার বাইরে প্রথমবার আগুন জ্বালাল মানুষ

শেষবার যখন জ্বলেছিল, তখন ক্ষমতায় ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। রাহুল গান্ধী তখন মাত্র ১০। তার পর ফের জ্বলল সে, গত মঙ্গলবার। পৃথিবী থেকে প্রায় ২,১০০ কোটি কিলোমিটার দূরে সৌরমণ্ডলের সীমানার বাইরে আগুন জ্বালাল মানুষ। এই প্রথমবার সৌরমণ্ডলের বাইরে এমন সাফল্য পেল সভ্যতা। ৩৭ বছর পর জ্বলে উঠল নাসার গ্রহসন্ধানী যান ভয়েজার ১-এর জেট থ্রাস্টার। শেষবার ১৯৮০ সালে থ্রাস্টারগুলিকে জ্বালিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

Updated By: Dec 2, 2017, 06:31 PM IST
সৌরমণ্ডলের সীমানার বাইরে প্রথমবার আগুন জ্বালাল মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদন: শেষবার যখন জ্বলেছিল, তখন ক্ষমতায় ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। রাহুল গান্ধী তখন মাত্র ১০। তার পর ফের জ্বলল সে, গত মঙ্গলবার। পৃথিবী থেকে প্রায় ২,১০০ কোটি কিলোমিটার দূরে সৌরমণ্ডলের সীমানার বাইরে আগুন জ্বালাল মানুষ। এই প্রথমবার সৌরমণ্ডলের বাইরে এমন সাফল্য পেল সভ্যতা। ৩৭ বছর পর জ্বলে উঠল নাসার গ্রহসন্ধানী যান ভয়েজার ১-এর জেট থ্রাস্টার। শেষবার ১৯৮০ সালে থ্রাস্টারগুলিকে জ্বালিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন - একদিন পর বিয়ে, মেহেন্দি অনুষ্ঠানে জমিয়ে নাচলেন পাওলি

বর্তমানে পৃথিবী থেকে প্রায় ২,১০০,০০,০০,০০০ কিলোমিটার দূরে সৌরমণ্ডলের সীমানার বাইরে দুই তারার অন্তবর্তী শূন্যস্থানে অবস্থান করছে ভয়েজার। পৃথিবী থেকে সেখানে আলো পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ১৯ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। সেখানে জল বা মানুষ তো বটেই জমে বরফ হয়ে যাবে হাইড্রোজেন, হিলিয়ামের মতো হালকা গ্যাসও। সেখানেই যানের অভিমুখ ঠিক করার জন্য ভয়েজার ১-এর থ্রাস্টার জ্বালালেন নাসার বিজ্ঞানীরা। 

পৃথিবী থেকে ভয়েজার ১-এর দূরত্ব এতই বেশি যে বোঝাতে গেলে আলোর বেগকে তুলনা ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ ওই বেগেই বিকিরিত হয় পৃথিবী ও সৌর মণ্ডলের সংযোগকারী অন্য তড়িত্চুম্বকীয় তরঙ্গও। ভয়েজারের বর্তমান অবস্থান অনুসারে রবিবার সকাল ৭টায় ভয়েজারের উদ্দেশ্যে বার্তা পাঠালে তা ভয়েজার ১-এর কাছে পৌঁছয় সোমবার ভোর সাড়ে চারটেয়। ফরতি বার্তা আসতেও সময় লাগে একই। ফলে ভয়েজার ১-কে কোনও নির্দেশ দিলে কাজটি ঠিক মতো হয়েছে কি না বুঝতে সময় লাগে দেড় দিনেরও বেশি। যেহেতু ভয়েজারকে পৃথিবীতে ফেরত আনার জন্য পাঠাননি বিজ্ঞানীরা। ফলে প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে এই দূরত্ব। 

২০১৩ সালে সৌরমণ্ডলের সীমা অতিক্রম করে ভয়েজার ১। গত ৫ বছর ধরে দুই তারকামণ্ডলের অন্তবর্তী শূন্যস্থানে পৌঁছবে যানটি। তবে সম্প্রতি ক্রমশ পৃথিবীর সঙ্গে কৌনিক দূরত্ব বাড়ছিল ভয়েজারের হাই গেইন অ্যান্টেনার। দ্রুত তার অভিমুখ পরিবর্তন না ঘটালে পৃথিবীর নজর থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারত মহাকাশযানটি। সেই কাজটিই গত মঙ্গলবার করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। 

ভয়েজারের নতি পরিবর্তনের জন্য নির্দিষ্ট থ্রাস্টারগুলির জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় কক্ষ পরিবর্তনের থ্রাস্টারগুলি জ্বালিয়ে কাজ হাসিল করেছেন গবেষকরা। মঙ্গলবার থ্রাস্টারগুলি জ্বালানো হলেও কুশল সংবাদ পৃথিবীতে এসে পৌঁছয় বুধবার। জানা যায় ঠিকঠাক কাজ করেছে ৪টি থ্রাস্টারই। ৩৭ বছর মহাকাশের জমাট ঠান্ডায় থ্রাস্টারগুলি ফের সক্রিয় হওয়াকে নাসার বিশাল প্রযুক্তিগত সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে। শীতের সকালে যেখানে সাধারণ চার চাকা গাড়ি স্টার্ট দিতে কালঘাম ছোটে সেখানে ৩৭ বছর ধরে মহাকাশের প্রতিকূল আবহাওয়ায় নিষ্ক্রিয় থাকা ইঞ্জিন ফের নিখুঁত ভাবে কাজ করা আশ্চর্যই বটে।  

আরও পড়ুন - রবিবার রাতে দেখা যাবে বছরের প্রথম 'সুপারমুন'

৪০ বছর আগে বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের ছবি ও তথ্য পেতে ভয়েজার ১-কে কেপ ক্যানাভেরাল থেকে পাঠিয়েছিল নাসা। প্রায় সাড়ে ৩ বছরের  সফল অভিযানের পর অনন্ত মহাকাশের দিকে ছুটে চলেছে যানটি। ১৯৯৪ সালে শেষ ছবি তোলার পর যানটির ক্যামেরা বন্ধ করে দিয়েছে নাসা। চালু রেখেই বা কী হবে? ছবি তুলতে গেলে তো আলো প্রয়োজন। আর ভয়েজার ১ যেখানে রয়েছে, সেখানে আপাতত নিকষ অন্ধকার।   

.