ঢাকায় প্রকাশ্য রাজপথে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হামলায় খুন লেখক অভিজিৎ রায়
একুশের বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই খুন হলেন বাংলাদেশের লেখক, মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়। গতকাল, রাত ৮টা ৪৫ নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় একদল অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসবাদী। এই হামলায় গুরুতর জখম হন দু'জনেই।
ঢাকা: একুশের বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই খুন হলেন বাংলাদেশের লেখক, মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়। গতকাল, রাত ৮টা ৪৫ নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় একদল অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসবাদী। এই হামলায় গুরুতর জখম হন দু'জনেই। দুষ্কৃতীদের অস্ত্রের আঘাতে অভিজিতের মাথা ফেটে দু'ভাগ হয়ে যায়। রাস্তার মধ্যেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল তাঁর নিথর শরীর। রক্তে ভিজে গিয়েছিলেন বন্যাও। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কয়েকজন পথচারী অভিজিৎ ও বন্যাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অভিজিৎকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন বন্যা। দুষ্কৃতীদের আক্রমণে কাটা গেছে তাঁর হাতের আঙুল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জানিয়েছেন, পৌনে ৯টা নাগাদ টিএসটি মোড়ে কয়েকজন যুবক দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এই দুজনকে কুপিয়ে আহত করে।
টিএসসির কাছেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলে। তবে সাড়ে ৯টায়ও ওই এলাকায় জনসমাগম ছিল।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী অভিজিৎ ও বন্যা গত সপ্তাহেই একুশের বইমেলায় অংশগ্রহণ করবেন বলে দেশে ফিরেছিলেন। এবারের বইমেলায় তাঁর দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
মুক্তমনাতে বহুদিন ধরেই ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন অভিজিৎ। এই ব্লগের উদ্দেশ্যই ছিল মুক্তচিন্তাধারা, মানবতাবাদ ও যুক্তিবাদের পক্ষে সওয়াল করা।
কিছুদিন আগেই সমকামিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল অভিজিতের একটি বই। সেই নিয়ে গোটা বাংলাদেশের মৌলবাদীরা রে রে করে ওঠে। দিনের পর দিন ধর্মান্ধতার বিরোধীতা করে আসছিলেন তিনি। কলমের মাধ্যমে প্রতিবাদ করে আসছিলেন বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীতে বাড়েতে থাকে ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে। আর সেই কারণে মৌলবাদীদের তীব্র রোষের মুখে তাঁকে বারবার পড়তে হয়েছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সরাসরি তাঁকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বহুবার। তাঁর ও তাঁর স্ত্রী বন্যার বিরুদ্ধে বহুদিন আগে থেকেই কুরুচিকর মন্তব্যে ভরে গেছে ধর্মীয় মৌলবাদীদের ফেসবুক ওয়াল। এমনকি এইবার দেশে ফেরার আগেও দু'জনকেই খুন করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
অভিজিতের মৃত্যুর পর রাস্তায় তাঁর ও বন্যার রক্তাক্ত শরীর পরে থাকার ছবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়ে পড়ার পর মৌলবাদীরা সরাসরি পৈশাচিক উল্লাসে মেতেছে। একদিকে যেমন এই হত্যার তীব্র নিন্দা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া মারফত, অন্যদিকে একদল আবার অভিজিতকে 'ইসলাম বিদ্বেষী' তকমা দিয়ে তাঁর মৃত্যুতে খুল্লামখুল্লা উল্লাস প্রকাশ করছে।
নির্দিষ্ট প্রমাণ না পাওয়া গেলেও অভিজিতের মৃত্যুর পিছনে যে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদীরাই দায়ি তা মোটামুটি স্পষ্ট।
অদ্ভুতভাবেই অভিজিতের মৃত্যুর পরেই 'ভুতুড়ে' ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে তাঁর ব্লগ ওয়েবসাইট 'মুক্তমনা'।
অভিজিতের মৃত্যু আরও একবার মনে করিয়ে দিল শাহবাগ আন্দোলন চলার সময় ব্লগার রাজীবের মৃত্যুকে। মনে করিয়ে দিল সীমান্তের এ পারে দাভোলকর বা পানসারের হত্যাকে। ধর্মান্ধতা কেড়ে নিয়েছে এঁদের প্রত্যেকের প্রাণ। কিন্তু, এক অভিজিতকে খুন করলেই বোধহয় থেমে থাকে না প্রতিবাদ। যে রক্তে ভিজেছে ঢাকার রাজপথ সেই রক্তের রেশ ধরে রক্তবীজের মতই জন্ম নেয় প্রতিবাদীরা, সমস্ত হুমকিকে অগ্রাহ্য করে ঝলসে ওঠে তাঁদের কলম। অভিজিৎ রায়ের হত্যার প্রতিবাদে আজ সেই ঐতিহাসিক শাহবাগ চত্বরে গণঅবস্থানের ঢাক দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। এপার বাংলাতেও সেই একই প্রতিবাদে দুপুর দুটোয় মুখর হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।