দুর্নীতি, বেকারত্ব, আয়করের ত্রিফলা ক্ষোভের আগুনে বারুদ জুগিয়েছে ব্রাজিলে

দু হাজার সাত সালের কথা । দুহাজার চৌদ্দ সালের বিশ্বকাপ কোথায় হবে,তা ঘোষণা করে ফিফা। উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা দেশ। আতসবাজির আলোয় সেদিন উদ্ভাসিত হয়েছিল রিও ডি জ্যানিরো। সেই উন্মাদনা কোথায় হারিয়ে গেল মাত্র ছ বছরে? আর কেনই বা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ ব্রাজিলের আমজনতা?

Updated By: Jul 5, 2013, 07:12 PM IST

দু হাজার সাত সালের কথা । দুহাজার চৌদ্দ সালের বিশ্বকাপ কোথায় হবে,তা ঘোষণা করে ফিফা। উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা দেশ ।আতসবাজির আলোয় সেদিন উদ্ভাসিত হয়েছিল রিও ডি জ্যানিরো। সেই উন্মাদনা কোথায় হারিয়ে গেল মাত্র ছ বছরে? আর কেনই বা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ ব্রাজিলের আমজনতা?
কারণটা দূর্নীতি। বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য ৭০০ কোটি রিয়াল খরচ করে ফেলেছে ব্রাজিল প্রশাসন। অথচ অর্ধেকেরও বেশি স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হয়নি। দশ বছরের মধ্যে রিও-র মারাকানা স্টেডিয়াম দ্বিতীয়বার পুনর্গঠন করতে হয়েছে। ব্যয় হয়েছে একশো কোটি রিয়াল । সেই বিপুল পরিমাণ অর্থ এসেছে সাধারণ মানুষের আয়কর থেকে। অথচ পুনর্নিমিত স্টেডিয়ামটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বর্তেছে একটি বেসরকারি সংস্থার কাঁধে। বিশ্বকাপ ফুটবলের নামে এই পুকুর চুরিই তাতিয়ে দিয়েছে ব্রাজিলের বাসিন্দাদের।
তাঁদের দাবি,স্টেডিয়াম নির্মাণের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মস্যাত্‍ করছে বহুজাতিক ঠিকাদার সংস্থাগুলি। যা ঘুরপথে চলে যাচ্ছে দূর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের পকেটে। দুহাজার সাত সালে বিশ্বকাপ ফুটবলকে ব্রাজিলে নিয়ে এসেছিলেন যে ফুটবল প্রেসিডেন্ট,দূর্নীতির অভিযোগে গতবছর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি ।
সরকারি অর্থে যে কয়েকটি স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে তার গুণমান নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।ফিফার একটি ঘোষণায় গণরোষ আরও বেড়েছে ব্রাজিলে। বিশ্বকাপের সম্প্রচার স্বত্ব এবং কর্পোরেট স্পনসরশিপ থেকে রেকর্ড পরিমাণে অর্থ আয়ের আশা করছেন ফিফার কর্তারা । কিন্তু তার ছিঁটেফোঁটাও ঢুকবে না ব্রাজিলের রাজকোষে। ব্রাজিলিয়ানরা তাই ফুটবল-প্রশাসক,রাজনীতিক এবং নির্মাণ সংস্থার আঁতাঁতের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন ।
আরও কী কী কারণে বারুদের স্তুপ জড়ো হচ্ছিল ব্রাজিলে? উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ব্রাজিলে আয়করে হার সবচেয়ে বেশি । গড়় বাসিন্দাদের আয়ের চল্লিশ শতাংশ কর দিতে হয়। কিন্তু সেই তুলনায় স্বাস্থ্য,শিক্ষা বা অন্যান্য সামাজিক প্রকল্প এখনও দুর্বল । বেকারির হার বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের । তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি ।
সাও পাওলোর একটি সংবাদপত্রে এই সমীক্ষাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে । তাতে দেখা যাচ্ছে,৩৮% ব্রাজিলের মানুষ মনে করেন তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। একবছর আগেও পঁচিশ শতাংশ বাসিন্দা এমনটা মনে করতেন। ৪৪% মনে করেন বেকারত্ব বাড়ছে। একবছর আগেও যা ছিল ৩১% শতাংশ। মাত্র তিন সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফের সরকারকে দারুণ বলে মনে করতেন সাতান্ন শতাংশ মানুষ। সমীক্ষায় তা নেমে এসেছে ৩০% শতাংশে । সমীক্ষাটি করেছে ডেটাফোলহা নামে একটি সংস্থা ।  

.