পেরেকবিদ্ধ গাছ, অপকর্মের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা গাছ-বন্ধু ওয়াহিদের
যে কোনও ভাল কাজে বাধা আসাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এক্ষেত্রেও তাই।
নিজস্ব প্রতিনিধি : সব শিক্ষিত মানুষ মানেই সচেতন নয়। আর সব সময় সচেতন হওয়ার জন্য শিক্ষিত না হলেও হয়তো চলে। এই যেমন ওয়াহিদ সরকারের কথাই ধরুন। ভদ্রলোকের পড়াশোনা বেশি দূর নয়। শিক্ষা-সচেতন সমাজ তাঁকে অশিক্ষিত বলেও গালি দিয়েছে বহু জায়গায়। কিন্তু তিনি যে কাজটা করেন, তার জন্য শিক্ষা ও সচেনতা দুই-ই প্রয়োজন। সেই বিচারে তিনি কিন্তু উচ্চশিক্ষিত একজন মানুষ। ওয়াহিদ সরকার যেটা করেন তা জানার পর সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের মাথা হেঁট হতে পারে। মূলত সেই সব শিক্ষিত মানুষদের অশিক্ষিতের মতো কাজের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন ওয়াহিদ সরকার। মনে মনে বলেছেন, ''তোমরা নোংরা ছড়াও যত খুশি। আমি আছি। ঠিক সেই সব নোংরা পরিষ্কার করে দেব।''
আরও পড়ুন- মাঝ আকাশেই ঘুমিয়ে পড়লেন বিমানের চালক, তারপর...
বিজ্ঞানের দাবি, গাছের প্রাণ আছে। সেই যুক্তি মেনে নিয়ে ওয়াহিদ সরকার বলেন, ''গাছের প্রাণ আছে মানে তো ব্যাথা, যন্ত্রণা সবই আছে। মানুষ নিজের স্বার্থে গাছের গায়ে পেরেক ঠোকে। ব্যানার, পোস্টার লাগানোর জন্য গাছকে বিদ্ধ করে। আমার এগুলো খুব খারাপ লাগত প্রথমদিকে। ভাবতাম, গাছ যদি না থাকে তা হলে তো আমরাও থাকব না। শুরুর দিকে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু দেখলাম কেউ কথা শুনতে চায় না। সবাই নিজের ইচ্ছেমতো গাছকে ব্যথা দেয়। তার পর আমি নিজেই এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। বাংলাদেশের যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনাজুড়ে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার এলাকায় থাকা বিভিন্ন রাস্তার গাছ থেকে পেরেক সরানোর কাজ শুরু করলাম। যন্ত্রণার হাত থেকে গাছদের মুক্তি দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য। আমি গাছ খুব ভালবাসি। তাই ওদের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারি না। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১২৭ কেজি পেরেক তুলেছি গাছদের শরীর থেকে।''
আরও পড়ুন- গরুর শিং থাকবে? গণভোট সুইজারল্যান্ডে
যে কোনও ভাল কাজে বাধা আসাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এক্ষেত্রেও তাই। ওয়াহিদ যখন এমন ভাল কাজ করা শুরু করলেন, বেশ কিছু মানুষ তাঁর উপর সন্দেহ করা শুরু করলেন। ''প্রথমে লোকে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করত কেন এমন কাজ করছি! আমি বললাম পরিবেশের স্বার্থে। অনেকে বললেন নিশ্চয়ই এর পিছনে অন্য কোনও মতলব রয়েছে। তার পর লোকে জানতে চাইল, আমি পেরেকগুলো নিয়ে কী করি! বললাম, ওগুলো আমি সংরক্ষণে রাখি। ওরা সেটাও বিশ্বাস করল না। বলল, আমি নাকি পেরেক বিক্রি করি। তবে কারও কোনও কথা আর গায়ে লাগে না। আমি এই অপকর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। এই লড়াই আমি একাই লড়ব।'' ওয়াহিদ পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাঁর ছেলে মালয়েশিয়ায় চাকরিরত। ছেলে এখন সংসারের হাল ধরেছে। আর ওয়াহিদ পরিবেশের সব থেকে বড় বন্ধু গাছের হাল ধরার জন্য এগিয়ে এসেছেন। স্থানীয় এলাকায় এখন গাছ-বন্ধু নামেই বিখ্যাত এই প্রৌঢ়।