কুকুরের লেজে শব্দবাজি বাঁধার আগে যেন কুন্দেরাকে মনে করি

এ দেশে মানুষ আজও প্রাণীদের ব্যাপারে হয় উদাসীন, নয় নিষ্ঠুর। বিশ্বের অন্য প্রান্তেও চোরাশিকারির রমরমা আছে। কিন্তু ভারতে যেন এটা মাত্রাতিরিক্ত।

Updated By: Oct 4, 2020, 06:23 PM IST
কুকুরের লেজে শব্দবাজি বাঁধার আগে যেন কুন্দেরাকে মনে করি

নিজস্ব প্রতিবেদন: আজ বিশ্ব প্রাণী দিবস। প্রতি বছর অক্টোবরের ৪ তারিখেই সাধারণত বিশ্ব জুড়ে দিনটি পালন করা হয়। বিশ্বের সমস্ত প্রাণী যাতে নিরাপদ ও সুস্থ থাকে,সেই সচেতনতা প্রচারেরই দিন এটি।

এই বিশ্ব-জীববৈচিত্র্যে প্রাণীদের প্রভূত অবদান আছে। মানুষ যাতে ভাল থাকে সেই ব্যাপারেও প্রাণীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান থাকে, যা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই। আমাদের চারপাশের প্রকৃতির ইকোলজির ভারসাম্য় বজায় রাখার ক্ষেত্রে চেনা-অচেনা বিভিন্ন প্রাণীদের যে ইতিবাচক ভূমিকা, তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সত্যিই একটি দিন নির্দিষ্ট করা জরুরি।

সত্যি বলতে কী, ভারতের মতো দেশে এরকম একটি দিন পালনের অন্যরকম তাৎপর্য আছে। কেননা, এ দেশে মানুষ আজও প্রাণীদের ব্যাপারে হয় উদাসীন, নয় নিষ্ঠুর। বিশ্বের অন্য প্রান্তেও চোরাশিকারির রমরমা আছে। কিন্তু ভারতে যেন এটা মাত্রাতিরিক্ত। এ দেশে বাঘ-হরিণ-গণ্ডার শিকার সারা বছরই চলে। পাখি-কচ্ছপ ধরাও সমানতালে চলতে থাকে। পশুপাখিদের চোরাচালানের একটা গুপ্তচক্র আছে যারা বেশ প্রভাবশালী। শুধু যে বন্যপ্রাণের ক্ষেত্রেই এই অবিচার, তা নয়। পাড়ার কুকুর বা বেড়ালের সঙ্গেও আমরা প্রায়শই মজা করতে গিয়ে নির্মম ব্যবহার করে ফেলি। শুধু তাই নয়, চিড়িয়াখানায় গিয়েও আমরা নানা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে বন্য়প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করি।
 
প্রাণীদের ভালবাসা, তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া, তাদের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং বোঝাপড়াকে আরও সহজ ও আন্তরিক করে তোলার জন্য তাই এরকম একটি সচেতনতামূলক দিনের ভূমিকা সমাজে অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে দলাই লামার বক্তব্য মনে পড়ে। তিনি একবার বলেছিলেন-- আমাদের আনন্দ, খেলা, অ্যাডভেঞ্চার প্রভৃতির জন্যে প্রাণীদের ব্যবহার করা, চামড়া বা পশমের জন্য তাদের হত্যা করার মতো নৃশংসতার কোনও অর্থই হয় না। তাঁর কথা আমরা শুনেছি। মনে রাখিনি

প্রত্যেক বছরই এ দিনটি নানা ভাবে পালিত হয়। কখনও অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ক্যাম্পেনের আয়োজন করা হয়। প্রাণীদের জন্য রেসকিউ শেল্টার তৈরির ব্যবস্থা হয়। কখনও প্রাণীসম্পদ বিকাশের লক্ষ্যে তহবিলও গড়া হয়। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরাও নানারকম ভিস্যুয়াল ডিসপ্লে নিয়ে হাজির থাকে। যদিও এ বছরে কোভিড-১৯ অতিমারির জেরে এই উদযাপনের ক্ষেত্রে একটু বিধিনিষেধ এসেছে। তবে এ বছর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল-স্তরে বিষয়টি পালিতও হচ্ছে। সেখানেও ভালই সাড়া মিলছে। 

তবে শুধু সাড়া মিললেই হবে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের আরও বাস্তবোধসম্পন্ন হতে হবে। কালীপুজোর সময়ে আমাদের গলির কোনও পথকুকুরের লেজে পটকা বেঁধে দিয়ে মজা করার আগে আমরা যেন একটু ভাবি। একটু সচেতন হই। যেন একবার মনে করি বিতর্কিত ঔপন্যাসিক মিলান কুন্দেরার মর্মস্পর্শী এই লাইনগুলি-- কুকুর হল স্বর্গের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম। তারা পাপ বা অশুভকে জানে না, তারা অসন্তুষ্টিতেও ভোগে না। কোনও এক দীপ্ত বিকেলে কোনও পাহাড়তলিতে একটি কুকুরের সঙ্গে বসে থাকা--অলস বসে থাকাটা যেখানে ক্লান্তিকর নয়, বরং শান্তিময়-- এক দারুণ স্বর্গসুখ!

আরও পড়ুন: উত্তর মেরুসাগরের বরফ রয়েছে বরফেই

.