আগেই গ্রেফতার না আত্মসমর্পণ?

দীর্ঘদিন ধরে আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জনের পরেই সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সামনে আত্মসমর্পণ করানো হল জাগরী বাস্কে এবং রাজারাম সোরেনকে। দু হাজার সালের প্রথম দিক থেকেই প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা শুরু করেন জাগরী এবং রাজারাম। সন্তানের টানেই সমাজ জীবনে ফিরে আসার সেই চেষ্টা অবশেষে বাস্তবায়িত হল একবছর পরে।

Updated By: Nov 19, 2011, 03:39 PM IST

দীর্ঘদিন ধরে আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জনের পরেই সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সামনে আত্মসমর্পণ করানো হল জাগরী বাস্কে এবং রাজারাম সোরেনকে। দু হাজার সালের প্রথম দিক থেকেই প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা শুরু করেন জাগরী এবং রাজারাম। সন্তানের টানেই সমাজ জীবনে ফিরে আসার সেই চেষ্টা অবশেষে বাস্তবায়িত হল একবছর পরে। মাত্র ষোলো বছর বয়সে পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রান্তে এই জঙ্গল ও পাহাড় ঘেরা বাঘডুবি গ্রামের জাগরী ঘর ছেড়েছিলেন মাওবাদীদের সঙ্গে। গুরুচরণ বাস্কে ওরফে মার্শালের হাত ধরেই তাঁর এই পথচলার শুরু। এরপর মদন মাহাতো হয়ে রাজারাম সোরেনের ঘনিষ্ট হয়ে ওঠা। গত সতেরো তারিখ মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে সপরিবারে আত্মসমর্পনের এই খুশি খুশি ছবিটা হঠাত্ আসেনি। যেভাবে প্রায় দশ বছর ধরে মাওবাদীদের স্কোয়াডের শীর্ষে উঠেছিলেন জাগরী ও রাজারাম, ঠিক সেভাবেই এক বছর ধরে পুলিসের আস্থা অর্জন করেছিলেন তাঁরা। স্কোয়াডের হদিশ থেকে শুরু করে লুকোনো অস্ত্রভাণ্ডার বা যেকোনও নাশকতার পরিকল্পনা সম্পর্কে বহু তথ্যই মিলেছিল তাঁদের কাছ থেকে। যদিও মাওবাদীরা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি এই দীর্ঘ যোগাযোগের কথা। এর আগেই সন্তানের টানে বারেবারে ঘরে ফিরতে চেয়েছেন জাগরী। অন্যের ওপর সন্তানের দায়িত্ব দিয়ে কিছুতেই স্বস্তি মিলছিল না। মাওবাদীদের তরফেও সন্তানের জন্ম দেওয়া এবং বারবার বাড়ি ফিরে আসার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু নাড়ির টানই শেষ পর্যন্ত আদর্শ থেকে বিচ্যুত করেছিল জাগরীকে, সঙ্গে রাজারামকেও। তবে গত বৃহস্পতিবারের এই আত্মসমর্পণ কেন প্রয়োজন হয়ে পড়ল তা নিয়ে উঠে এসেছে বেশ কিছু প্রশ্ন। রাজারাম ও জাগরীকে যে পোশাকে দেখা গিয়েছে তা একেবারে নতুন। সাধরণতঃ মাওবাদীরা তৈরি করা পোশাক কিনে ব্যবহার করেন। দুজনের ক্ষেত্রেই পোশাক দুটি দেখে মনে হচ্ছে মাপ দিয়ে বানানো। সব থেকে বড় বিষয় মাওবাদীদের স্কোয়াড সদস্যরা জলপাই রঙের পোশাক ব্যবহার করেন। দুজনেই যে টুপি পড়ে রয়েছেন তা সাধারণত মাওবাদীরা ব্যবহার করেন না। যে বেল্ট ব্যবহার করা হয়েছে তাও একেবারে আধুনিক। তাঁদের চেহারায় জঙ্গলের কঠিন লড়াই এবং নিয়মানুবর্তীতার কোনও ছাপই ছিল না। বরং অনেকটাই দীর্ঘদিনের স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে। তাঁরা দুজনেই বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলেছেন। সরকারের পুণর্বাসন প্যাকেজে আগ্রহী হয়ে মাওবাদীরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসুক, এটা নিয়ে কারুরই দ্বিমত নেই। কিন্তু কী কারণে, রাজারাম এবং জাগরীকে এতোদিন বাদে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সামনে আত্মসমর্পণ করানোর ব্যবস্থা করল পুলিস, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে যথেষ্ট বিতর্ক।

.