বড়মার নির্দেশ বনাম ছোটকর্তার অনুরোধ, বনগাঁ দখলে মতুয়া ভোট নিয়ে টানাটানি বিজেপি-তৃণমূলে

কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুতে ফের ভোট হচ্ছে বনগাঁয়। আর ভোট ঘিরে প্রকাশ্যে ঠাকুরবাড়ির ঘরোয়া কোন্দল। ঘাসফুল আর পদ্ম। দুই প্রতীকে লড়ছেন দুই পরিবার।

Updated By: Feb 10, 2015, 09:00 PM IST
 বড়মার নির্দেশ বনাম ছোটকর্তার অনুরোধ, বনগাঁ দখলে মতুয়া ভোট নিয়ে টানাটানি বিজেপি-তৃণমূলে

ওয়েব ডেস্ক: কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুতে ফের ভোট হচ্ছে বনগাঁয়। আর ভোট ঘিরে প্রকাশ্যে ঠাকুরবাড়ির ঘরোয়া কোন্দল। ঘাসফুল আর পদ্ম। দুই প্রতীকে লড়ছেন দুই পরিবার।

ছেলের বিরুদ্ধে মা। বীণাপানি বনাম মঞ্জুলকৃষ্ণ।

জেঠিমার বিরুদ্ধে ভাসুরপো। মমতাবালা বনাম সুব্রত ।

তৃণমূল বনাম বিজেপি। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। ষোলো লক্ষ ভোটার। বাহান্ন শতাংশই মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। সেই মতুয়া সমাজ আজ দ্বিধাবিভক্ত। কাকে ভোট দেবেন তাঁরা?

 গার্ডিয়েন এঞ্জেল বড়মার নির্দেশ? নাকি ঠাকুরবাড়ির ছোটকর্তার অনুরোধ? কার ডাকে সাড়া দেবেন মতুয়ারা? বনগাঁয় বাজি মারবে কে?
 
একশো সাঁইত্রিশ বছরের নমঃশূদ্র আন্দোলন। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সেই আন্দোলনে প্রথম অংশ নিল তৃণমূল। ঠাকুরবাড়িতে ঢুকল ঘাসফুলের প্রতীক। সেই একছত্র ক্ষমতায় এবার ভাগ বসাতে এসেছে নতুন অংশীদার। একনজরে দেখে নেব মতুয়া রাজনীতির ইতিহাস।

 শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় রেলপথের গা ঘেঁষে  ঠাকুরবাড়ি .দেশজুড়ে পাঁচকোটি মতুয়া ভক্তের একমাত্র আরাধ্য মন্দির, তীর্থক্ষেত্র। মতুয়া কারা?

 বাঙালি নমঃশূদ্র আন্দোলনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে মতুয়াদের ইতিহাস। মতুয়া একটি ধর্ম। ওপার বাংলার ফরিদপুরের সাফলডাঙায় কৃষক পরিবারের সন্তান হরিচাঁদ ঠাকুর প্রবর্তন করেছিলেন বৈষ্ণব ধর্মের নতুন এই শাখা।  হরিচাঁদের ছেলে গুরুচাঁদ তৈরি করেন সংগঠন। দেশভাগের পর, উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর হল মতুয়াদের নতুন ঠিকানা।

 প্রয়াত সংঘাধিপতি প্রমথরঞ্জন ঠাকুর প্রথম নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। যদিও, ঠাকুরবাড়ির দালানকোঠা সবসময়েই ছিল রাজনীতির প্রভাবমুক্ত।
দুহাজার ছয় থেকে মতুয়া সমাজে প্রভাব বাড়াতে থাকে বর্তমান শাসকদল। পালাবদলের পর তৃণমূলের প্রতীকে মন্ত্রী হন মঞ্জুলকৃষ্ণ। তিনবছর পর তাঁর দাদা কপিলকৃষ্ণ যান সংসদে। কিন্তু, কপিলকৃষ্ণের মৃত্যুতে ফের স্রোতের বিপরীতে বইছে হাওয়া। মতুয়া ভোট দখলে এসেছে নতুন অংশীদার।

 কাকে বেছে নেবে মতুয়া সমাজ?

 একটি মৃত্যু। তাতে ফের শুরু অঙ্ককষা। কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের শূন্য আসনে সাংসদ হবেন কে? কেমন হবে মতুয়া ভোটের পাটিগণিত?  

দুহাজার নয়ে আসন পুনর্বিন্যাসে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র তৈরি হয় ।
বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র ও তার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভাই তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত।
বনগাঁর মোট ষোলো লক্ষ ভোটারের বাহান্ন শতাংশই মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত।

দুহাজার চোদ্দর লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ থেকে একলক্ষ ছেচল্লিশ হাজার ভোটে জিতেছিলেন কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। তাঁর মৃত্যুতে ফের শুরু হয়েছে উত্তরাধিকারের সংঘাত। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেই প্রকাশ্যে আসে টানাপোড়েন। কপিল ও মঞ্জুলের পরিবার আলাদাভাবে ধর্মীয় উপাচার পালন করে। ঠাকুরবাড়ির এই ফাটলকেই কাজে লাগায় বিজেপি। মন্ত্রিত্ব ছেড়ে মঞ্জুলকৃষ্ণ যান বিজেপি শিবিরে।

মঞ্জুলকৃষ্ণ বনাম সুব্রত ঠাকুর।
 ঠাকুরবাড়ির অন্দরের সংঘাত এবার সরাসরি ভোটের ময়দান। বিজেপি প্রার্থী মঞ্জুলপুত্র সুব্রত। তৃণমূল প্রার্থী কপিলকৃষ্ণের স্ত্রী মমতাবালা। বড়মার আশির্বাদ তাঁর পুত্রবধূর মাথায়। মতুয়া সমাজ কাকে বেছে নেবে এটাই এখন দেখার। ১৩ ফেব্রুয়ারি নিজেদের রায় দেবে বনগাঁর মানুষ।

.