প্রতিবাদের পুরস্কার! ফের মাওবাদী তকমা প্রশ্নকর্তাকে
মাওবাদী সন্দেহে ফের বিনপুরের নয়াগ্রামের বাসিন্দা শিলাদিত্য চৌধুরীকে গ্রেফতার করল পুলিস। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেলপাহাড়িতে জনসভায় গিয়েছিলেন শিলাদিত্য চৌধুরি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর আর্থিক দূরবস্থার কারণ জানাতে যান তিনি।
মাওবাদী সন্দেহে ফের বিনপুরের নয়াগ্রামের বাসিন্দা শিলাদিত্য চৌধুরীকে গ্রেফতার করল পুলিস। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেলপাহাড়িতে জনসভায় গিয়েছিলেন শিলাদিত্য চৌধুরি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর আর্থিক দূরবস্থার কারণ জানাতে যান তিনি। সমস্যার কথা জানাতে গিয়েই বিপদে পড়েন তিনি। তাকে মাওবাদী চিহ্নিত করে ধরে নিয়ে যায় পুলিস। বেশকিছুক্ষণ জিক্ষাসাবাদ করার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আগে বাসের কন্ডাক্টর ছিলেন শিলাদিত্য চৌধুরী। অসুস্থ হওয়ার পর নিজের সামান্য জমিতে বর্তমানে চাষ করে সংসার চালান। মেয়ের পড়াশুনো বন্ধ হয়েছে, অসুস্থ ছেলের চিকিত্সার জন্য হাত পাততে হয় হোমগার্ডের কাজ করা দাদার কাছে। সিআরপিএফ ক্যাম্পে রাজমিস্ত্রির প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। কিন্তু কাজ জোটেনি।
গত ১৮ মে ঠিক এভাবেই মুখ্যমন্ত্রীকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের গ্রেফতারি সম্পর্কে প্রশ্ন করায় মাওবাদী তকমা পেতে হয়েছিল এক ছাত্রীকে। সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে টাউন হলে একটি বেসরকারি ইংরাজি খবরের চ্যানেলের 'টক-শো'তে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দর্শকদের একজন তাঁকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের গ্রেফতারি সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই খেপে যান তিনি। উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের মাওবাদী বলে 'গালমন্দ' করতে করতে মঞ্চ ছেড়ে চলে যান। তাঁর সাফ কথা, সিপিআইএম ও মাওবাদীদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন না তিনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রর গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন করতেই মেজাজ হারান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের অবস্থানে অনড় থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ওটা কার্টুন নয়। আমরা কার্টুন ভালোবাসি। কার্টুন জিনিসটা আলাদা। উনি (অম্বিকেশ) সিপিএমের লোক। তিনি ইমেলের অপব্যবহার করেছেন। সোসাইটিকে জিজ্ঞাসা না-করে তিনি ওই ইমেল থেকে ৬০ জনকে মেল পাঠিয়েছেন।" এমনকী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে বুদ্ধিজীবী বলে মানতে অস্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "উনি সিপিএমের ক্যাডার। ভোটের পর সিপিএম হাজার হাজার সিডি পাঠিয়েছে। কোনও মহিলা সেই সিডি দেখলে মাথা হেঁট হয়ে যাবে।"
এরপর রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র ও প্রাক্তন বিধায়ক তথা ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজ। প্রশ্ন শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই ছাত্রী সিপিআইএম ক্যাডার বলে দাবি করে তিনি জানান, সিপিআইএম ও মাওবাদীদের প্রশ্নের জবাব দেবেন না তিনি। আয়োজকরা বেছে বেছে মাওবাদীদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও অভিযোগ তাঁর। এর পর কলার মাইক্রোফোন খুলে মঞ্চ থেকে হাঁটা লাগান মুখ্যমন্ত্রী। শত চেষ্টাতেও তাঁকে আটকাতে পারেননি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। শিলাদিত্য চৌধুরীর ক্ষেত্রেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল শনিবার।
প্রশ্ন উঠেছে, অস্বস্তিকর প্রশ্ন করলেই প্রশ্নকর্তাকে কি মাওবাদী বলে চিহ্নিত করতে পারেন একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? মাওবাদী চিহ্নিতকরণের এই পদ্ধতি কতটা যুক্তিযুক্ত? মুখ্যমন্ত্রীর এই অসহনীয়তা কীসের ইঙ্গিত বহন করে?