ক্ষমতায় আসার প্রথম ৬ মাসে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বিপর্যস্ত

ক্ষমতায় এসে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে হাজারো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর কেটে গেছে ছয় মাস। প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তব কতটা মিলল তা নিয়েই চব্বিশ ঘণ্টার অনুসন্ধানী রিপোর্ট `দাঁড়িপাল্লায় ছ-মাস`।

Updated By: Nov 20, 2011, 07:59 PM IST

ক্ষমতায় এসে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে হাজারো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর কেটে গেছে ছয় মাস। প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তব কতটা মিলল তা নিয়েই চব্বিশ ঘণ্টার অনুসন্ধানী রিপোর্ট `দাঁড়িপাল্লায় ছ-মাস`। নতুন সরকারের আমলে গত জুন মাসে শিশুদের চিকিত্‍সার জন্য রাজ্যের একমাত্র সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বিসি রায়ে তিনদিনে একুশটি শিশু মৃত্যু হয়। দেশজুড়ে শুরু হয় বিতর্কের ঝড়। সেসময় রাজ্য সরকারের সাফাই ছিল, মুমূর্ষু অবস্থায় শিশুদের হাসপাতালে আনা হয়। তৈরি হয়েছিল তদন্ত কমিটি। কিন্তু সেই তদন্ত রিপোর্ট জানা যায়নি আজও। হাসপাতালের রেফারেল সিস্টেমকে দায়ী করেছিলেন স্বাস্থ্য কর্তারা। জেলা হাসপাতালগুলির উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও মিলেছিল। কেটে গেছে পাঁচ মাস সময়। খুব একটা বদলায়নি পরিস্থিতি। 
 
পরিসংখ্যান বলছে-------
1) ২৬ থেকে ২৪ অক্টোবর ৭২ ঘন্টায় বিসি রায় হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ১৭টি শিশুর।
2) ২৪অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর পাঁচ দিনে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয়েছে ২৬টি শিশুর।
3) ৯ থেকে ১৬ নভেম্বর মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ২৬টি শিশুর।
4) দুদফায় ৪০টি শিশুর মৃত্যু বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজেও। ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর তিনদিনে ১৭টি শিশু মারা যায় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে।
দ্বিতীয় দফায় ৯ থেকে ১৪নভেম্বর, দশদিনে মৃত্যু হয় ২৩টি শিশুর।
5) ৩রা নভেম্বর চিকিত্সার গাফিলতিতে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে শিলিগুড়ি মহকুমা হাসপাতালেও।
 এতগুলি শিশু মৃত্যুর পরেও নির্বিকার রাজ্য। আগের মতোই রেফারেল সিস্টেমের ওপরই দায় চাপিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
এবারও তৈরি হয়েছে একাধিক তদন্ত কমিটি। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই যেসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন সেই হাসপাতালেরই চিকিত্সকেরা।
 ক্ষমতায় এসে রাজ্যে শিশু চিকিত্সা ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রূতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গোটা রাজ্যে সদ্যোজাতদের জন্য কুড়িটি অত্যাধুনিক চিকিত্সা ইউনিট বা সএনসিইউ তৈরির প্রতিশ্রূতিও দেন তিনি।
গত ছ-মাসে শুধুমাত্র বি সি রায় হাসপাতালে তৈরি হয়েছে সএনসিইউ। তাও উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়াই।
শিশুমৃত্যুর বিতর্ক চাপা দিতে তড়িঘড়ি উদ্বোধন করা হয় ইউনিটটির। এখনও এই হাসপাতালে নেই ব্লাড ব্যাঙ্ক, নেই সিটি স্ক্যান, এমআরআই বা আলট্রাসোনোগ্রাফির ব্যবস্থা।
লেই প্রতিদিন শয্যার চেয়ে বেশি শিশু ভর্তি করতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিত্সকরা। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিত্সকের সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি রেকর্ড বলছে, গত ছ-মাসে রাজ্যে কোনও শিশু চিকিত্সকই নিয়োগ হয়নি। ঘাটতি রয়েছে নার্সেরও। মুখ্যমন্ত্রীর হাজারো আশ্বাসের মাঝে বাস্তবে পরিবর্তন বলতে শুধুমাত্র কয়েকটি হাসপাতালে কিছুসংখ্যক শয্যা বৃদ্ধি।  নতুন সরকারের জন্য ছমাস মোটেও যথেষ্ট সময় নয়।
কিন্তু হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি মিলেছিল তা কতটা পূরণ হল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়।

.