মূল স্রোতে বইছে বাংলা চলচ্চিত্র...
জাতীয় পুরস্কার পাওয়াটা যে এখন অভ্যেসে দাঁড়িয়েছে, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন স্বয়ং প্রসেনজিতৎ চট্টোপাধ্যায়ও। প্রসেনজিৎ জানালেন, এর শুরুটা করেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ
নিজস্ব প্রতিবেদন: আবারও বাংলা। শ্রেষ্ঠ ছবি, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বাংলার দখলে। চলচ্চিত্রের জাতীয় স্তরে বাংলার কদর যে দিন দিন বাড়ছে আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল শুক্রবারের বারবেলায়। একটি নয়, একেবারে পাঁচ-পাঁচটি জাতীয় পুরস্কার এল বাংলার ঘরে। এ দিন আরও বেশি আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয় অভিনেতা ঋদ্ধি সেনকে কেন্দ্র করে। কেনই বা হবে না! তিনি যে এখন জাতীয় স্তরের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় তো বলেই ফেললেন, “আমার না পিতৃসত্ত্বায় আনন্দ লাগছে।” সত্যিই এক যুগ পর কোনও বাঙালি ফের এই সম্মানটি পেলেন। শেষ ২০০৬ সালে পদক্ষেপ সিনেমার জন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার।
জাতীয় পুরস্কার পাওয়াটা যে এখন অভ্যেসে দাঁড়িয়েছে, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন স্বয়ং প্রসেনজিতৎ চট্টোপাধ্যায়ও। প্রসেনজিৎ জানালেন, এর শুরুটা করেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। সে সময় না ছিল অত্যাধুনিক সিনেমার যন্ত্রপাতি। না ছিল চোখ ধাঁধাঁনো স্পেশ্যাল এফেক্ট বা ক্যামেরার কারসাজি। নিম্মমানের পরিকাঠামোয় এবং কম বাজেটে সে সময় ‘চোখের বালি’-র মতো ভিন্ন স্বাদের ছবি বানানো যায় তা প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। তবে, আজকের ছবি তৈরি যে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের এটাও স্মরণ করিয়ে দেন টলিউডের বুম্বা দা।
আরও পড়ুন- প্রকাশ্যে সৃজিতের 'উমা' টিজার, প্রশংসায় পঞ্চমুখ মহেশ ভাট
ঋতুপর্ণ থেকে আজকের কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, এই দীর্ঘ সময়ে পাল্টে গিয়েছে বাংলার অন্যধারার ছবির ভাষা। এখন অন্যধারা থেকে মূলধারায় পরিণত হয়েছে তারা। পরিচালকরা যেই স্পর্ধা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান প্রসেনজিৎ। তবে এই সুপারস্টারের কথায়, “আসল সাহস দেখিয়েছেন দর্শকরাই। তাঁদের চোখই এখন পাল্টে গিয়েছে। তাঁরা মোবাইলে দেশ-বিদেশের নানা স্বাদের ছবি দেখে অভ্যস্থ। সেখানেই নতুন কিছু করার চ্যালেঞ্জ এসেছে আমাদের কাছে।”
ছবি তৈরি করতে পরিচালকদের আর ভিন দেশে পাড়ি দিতে হয় না। ড্রোন-অত্যাধুনিক ক্যামেরায় নতুন করে ধরা পড়েছে সাবেকি কলকতা। কলকাতার সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে হেঁটেছেন এ প্রজন্মের পরিচালকরাও। এখনকার ছবিতে এটাও বড় পাওনা বলে মনে করেন সিনেমাপ্রেমীরা। তা অকপটে স্বীকার করছেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ও। তবে কৌশিক বলেন, “কলকাতায় শুটিং করলে যে বাজেট কম হয়, তেমনটা কিন্তু নয়। বরং বাজেট আরও বেশিই লাগে। তবে অনেকক্ষেত্রে আর ভিন রাজ্যে যেতে হয় না।”
আরও পড়ুন- ৬৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : সেরা অভিনেত্রী শ্রীদেবী, সেরা অভিনেতা ঋদ্ধি
৬৫ তম চলচ্চিত্র জাতীয় পুরস্কারে বাংলার এই জয়জয়কার আরও প্রত্যাশা বাড়াল নিঃসন্দেহে। তবে, এ ভাবেই কাটা ছাটা করে আরও উৎকৃষ্ট শিল্পের খোঁজে এগোবে বাংলা সিনেমা, তা স্পষ্ট করলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বললেন, “প্রত্যেক মানুষ যদি ভদ্র এবং শিক্ষিত হতে চায়, তবে ভদ্র এবং সিনেমা দেখবে না কেন?”