ফিল্ম রিভিউ: উড়ে আসুন ঘুরে আসুন, স্বপ্ন দেখাচ্ছে 'উড়োজাহাজ'
বাচ্চুর প্লেন খুঁজে পাওয়া আসলে একটা প্রতীকী। আকাশ যেখানে স্বপ্ন, প্লেন সেখানে তার বাহক।
'উড়োজাহাজ' (Urojahaj The Flight)। একটা স্বপ্নের গল্প। একদিন জঙ্গলে ভেঙে যাওয়া যুদ্ধবিমান হঠাৎ খুঁজে পায় মোটর মেকানিক বাচ্চু মণ্ডল। তার খুব 'ওড়ার শখ'। ছবির শেষে উড়তেও পারে বাচ্চু। এই উড়ে যাওয়া, বুননের গল্প, স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা- এসবই ওই 'ভাঙা প্লেনটার মতো'। যে খুঁজে পায়, সে-ই তাতে রং করে মনের মতো। বাচ্চুর বউ তাই স্বপ্ন দেখে এক খোলা আকাশের নীচে কেবল একটা বিছানা পাতা। সে বিছানায় তার সঙ্গী বাচ্চু। হঠাৎ মনে হতে পারে ম্যাজিক রিয়েলিজমের (magic realism) ছবি। আমাদের স্বপ্নের ক্রাইসিস, আর জীবনের 'টাগ অফ ওয়্যারে' বদলাতে থাকে ক্যানভাস। তাই বাচ্চু নিজেই নিজের গল্প শোনে৷ সেখানে জমা হয় মৃত সব কাহিনি।
বাচ্চুর প্লেন খুঁজে পাওয়া আসলে একটা প্রতীকী। আকাশ যেখানে স্বপ্ন, প্লেন সেখানে তার বাহক। প্লেনের ইঞ্জিন সত্যিই পাওয়া যায় না। কারণ, বাচ্চুর মতো সাধারণ মানুষের স্বপ্ন বোনা হয় রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষমতায়। সেখানে রং নেই৷ যুদ্ধ আছে, মৃত্যু আছে। জীবন নেই। বাচ্চুর দুঃস্বপ্নেরা তাই অন্তর্দ্বন্দ্ব হয়ে আসে। জানান দেয়, জীবনের চেয়ে সুখী কিছু হয় না। সে সুখ আদৌ জীবনের না অভ্যাসের তা প্রশ্ন থেকে যায়।
ভাতের গন্ধ থেকে বাচ্চুর উড়ে যাওয়া, দর্শক আর বাচ্চু এখানেই এক হয়ে যায়৷ উড়োজাহাজ তাই কেবল স্বপ্নের গল্প বলে না, বলে বাস্তবের সাথে পরাবাস্তবতার দড়ি টানাটানির গল্প। বাচ্চুর বোহেমিয়ানজম (Bohemianism) আসলে রং দেয় আমাদের যান্ত্রিক নাগরিক জীবনে অক্সিজেনের মতো।
পরিচালককে সাধুবাদ জানাতে ইচ্ছে করে, এত সুন্দর ফ্রেমিংয়ের জন্য। গোটা ছবি জুড়ে প্রকৃতি যেন ছবি এঁকেছে একের পর এক। বাচ্চুর ভূমিকায় বাজিমাত করেছেন চন্দন রায় সান্যাল (Chandan Roy Sanyal)। বাচ্চুর বউয়ের ভূমিকায় পার্নো মিত্র (Parno Mitra) পরিপূর্ণ। কিছু স্বল্প ত্রুটি, যেমন বাচ্চু অশিক্ষিত মোটর মেকানিক হওয়া সত্ত্বেও এত ভালো মানের বাংলা বলা কিংবা ঘরের মধ্যে জুতো পরে ঘোরা। এরকম ছোটো ছোটো মিস বাতিল হয়ে যায় শুধুমাত্র ছবির জোরে৷
জীবন, স্বপ্ন, সময় ও মুক্তি- এক লাইনে এসে দাঁড়ায়। বাহক হয় 'উড়োজাহাজ'।