হার মানলেন হিরোইন
বড্ড বেশি চড়াই উত্রাই পেরোতে হয়েছে মধুরের হিরোইনকে। ঐশ্বর্যা রাইয়ের হঠাত্ মা হওয়ার খবর আর তাতেই মধুরের মাথায় হাত।
ছবির রেটিং- ৫/১০
বড্ড বেশি চড়াই উত্রাই পেরোতে হয়েছে মধুরের হিরোইনকে। ঐশ্বর্যা রাইয়ের হঠাত্ মা হওয়ার খবর আর তাতেই মধুরের মাথায় হাত। ইদানীংকালে অন্যের এঁটো-করা চরিত্র কোনও নায়িকাই ছুঁয়ে দেখেন না। তবু করিনা কেন যে লুফে নিলেন কে জানে! তাতেও কি হয়রানির শেষ আছে? ছবির শুটিং-এর শুরু থেকে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ, সবখানেই ভাগ্যদেবী বড়ই বিরূপ হয়েছেন।
শুধু ভাগ্যের দোয দিলে চলবে না। ভাগ্য প্লাস চেষ্টা ইকোয়ালটু ফল এই সমীকরণে মধুর নিজেই বেশ খামতি রেখে দিয়েছেন। কর্পোরেট থেকে একটা সরলরেখা টেনে ফ্যাশন পর্য়ন্ত এসে আর একচু লম্বা করলেই আমরা হিরোই নে পৌছে যাচ্ছি। সেই একই নারী, একই গল্প, একই দৌড়, এবং একই ভবিতব্য। লড়াই-হার-অবসাদ-ফাইট ব্যাক। চিত্রনাট্যে একটা স্বভাবসিদ্ধ ফর্মুলা বানিয়ে ফেলেছেন মধুর। রদবদলের রিস্ক নেননি। সেটা দর্শকের কাছে খুব একটা মধুর বা উপভোগ্য কিছু হয়নি।
দর্শক, মানে যে-কজন ফিল্ম দেখতে গিয়েছেন, তাঁরা মোটামুটি ছকটা প্রেডিক্ট করে ফেলেছেন। এতটাই যে, ক্রন্দনরত করিনার সংলাপও আগে-আগেই আউড়ে দিচ্ছেন বেশ জোরগলায়।
আজকাল ছবি রিলিজের আগেই আইটেম নাম্বার বাজার করে। নিদেনপক্ষে ইঁট পেতে রাখে। হট কেক হলকট জওয়ানি। করিনার নৃত্যকলা বিভঙ্গ মজিয়েছে পুরুষহৃদয়। শুনেছি সে গান শুনলে ছমাসের শিশুও কান্না থামিয়ে তাই-তাই করতে শুরু করে। কিন্তু, গোটা ছবির মধ্যে এই গানখানি কেমন যেন মিয়োনো চানাচুর। হিরোইন করিনার আদব-কায়দা, কান্না হাসি কোনওটাই আরোপিত নয়। বড় বেশি সাবলীল। হিরোইনের চামড়া আলাদা করে গায়ে চড়াতে হয়নি। জান দিয়ে হিরোইনকে জীবন দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু গল্পের গতি এমনই এবড়োখেবড়ো, ইমোশনের সসে যেন আছাড়-পিছাড় খাচ্ছে। অবাক হই ভেবে, মধুর কী ভুলে গিয়েছেন
অভিনেত্রীর জীবনকাহিনি আর আমাদের কাছে কুহেলিকা নয়? বহু ছবি হয়েছে। অপর্ণা সেনের ইতি মৃণালিনী ভাবুন তো। জীবনকলসির তলানি পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়। থেকে যায় ছবির রেশ। করিনার অভিনয় দেখে মনে হল, জীবনের শ্রেষ্ঠ আলপনাটি আঁকার সুযোগ পেয়ে নিংড়ে দিচ্ছেন নিজেকে। বেনাবনে বড় বেশি মুক্তো ছড়িয়ে ফেললেন। দোষ তাঁর নয়। ফিল্ম উইদিন আ ফিল্ম-এর দৃশ্যে বহু দিন পর আবার সুধীর মিশ্রর ছবি চামেলির কথা মনে পড়ায়। নায়িকাজীবনের উচ্চাশা আর হতাশার টানাপোড়েন, কঠিন জটিল ঈর্ষাসর্বস্ব পৃথিবীর সঙ্গে লড়াই আর সমঝে চলার দৃশ্যে বড় প্রাণবন্ত তাঁর অভিব্যক্তি। জব উই মেট -এর পরে নতুন কিছু পাওয়া গেল তাঁর প্রতিভার ঝুলি থেকে।
অভিভূত করে অর্জুন রামপালের চোখের জল। ছবিতে তিনি প্রতিষ্ঠিত নায়ক। সিনেমার কঠিন পৃথিবীতে বাস্তবের নরম দুটো হৃদয় হাতে হাত রেখেও মিলতে পারে না। বহির্জগতের আঘাত এবং প্রশংসার মাত্রা এত তীব্র যে, মিলন অসম্ভব। এ ছবির পরম প্রাপ্তি অবশ্যই হেলেন। লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার বিজেতা এখনও ক্যারেকটার রোল করে চলেছেন বিনা নালিশে। ষাঁর মৃত্যুতে পাশে এসে দাঁড়ায় না ইন্ডাস্ট্রি। দাঁড়ায় এসে এক নায়িকার অশ্রু। অপূর্ব অভিনয়। বাকরুদ্ধ করে।
গোটা গল্প বলার অবকাশ নেই। দুটো খটকা কিছুতেই পেরনো যায় না
আপনারা যারা কর্পোরেট ছবির স্মৃতি এখনও লালন করেন। তাঁরা শেষ একমিনিট না দেখেও উঠে যেতে পারেন। এমনই খট করে শেষ হয়, মনে হল যেন যান্ত্রিক গোলযোগে রিল কেটে গিয়েছে।