ভুলভুলাইয়ায় হারালো চিত্রনাট্য
সোনার ফসল না ঈস্পাতের শিল্প, মাওবাদ নিয়ে স্যাটায়ারের চাবুক না মোদো-মাতালের প্রলাপ ঠিক কোন সাবজেক্টের ওপর ভরসা করে বিশাল ভরদ্বাজ এ-ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন? এটা প্রশ্ন নয় ঠিক, এখানে একটা বিস্ময়বোধক চিহ্ন বসা উচিত। ভরসা করে বসাতে পারছি না। হয়ত কোনও গূঢ়ার্থ আছে, যা দর্শকের চোখ এড়িয়ে গেছে। নীরেন চক্রবর্তীর উলঙ্গ রাজা থেকে ধার করে বলব কী, হয়ত বা কিছু আছে, এত সূক্ষ্ম যা নজরে পড়ছে না।
শর্মিলা মাইতির লেখায় 'মাটরু কি বিজলি কা মানডোলা '-সিনেমার ভাল মন্দ দিক
রেটিং: **
সোনার ফসল না ঈস্পাতের শিল্প, মাওবাদ নিয়ে স্যাটায়ারের চাবুক না মোদো-মাতালের প্রলাপ ঠিক কোন সাবজেক্টের ওপর ভরসা করে বিশাল ভরদ্বাজ এ-ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন? এটা প্রশ্ন নয় ঠিক, এখানে একটা বিস্ময়বোধক চিহ্ন বসা উচিত। ভরসা করে বসাতে পারছি না। হয়ত কোনও গূঢ়ার্থ আছে, যা দর্শকের চোখ এড়িয়ে গেছে। নীরেন চক্রবর্তীর উলঙ্গ রাজা থেকে ধার করে বলব কী, হয়ত বা কিছু আছে, এত সূক্ষ্ম যা নজরে পড়ছে না। বিশালের মতো গভীর সাহিত্যমনস্ক এক পরিচালক কীভাবে সম্পাদনার ক্ষেত্রে এত শ্লথ হলেন, এত ভুলভুলাইয়ার হারিয়ে-যাওয়া স্ক্রিপ্টকে কোনওমতে নাচ-গান দিয়ে জোড়াতালি লাগাতে চাইলেন..কী জানি, তা-ও বোধগম্য হয় না। বলে রাখি, এ ছবির প্রযোজকও তিনি নিজেই। এতদূর হতাশা-উদ্গারের পর ধাতস্থ হতেও সময় লাগে। মিঞা মকবুল, দ্য ব্লু আমব্রেলা, ওমকারা, কামিনে-র পর আশার পারদ চড়ে গিয়েছে বড় বেশি। দেশ জুড়ে ষে জ্বলন্ত সমস্যা কৃষি বনাম শিল্পায়ন, তা নিয়ে স্রেফ প্রহসনের নাটুকেপনা চলে কি? উত্তরটা দর্শকের ওপরেই ছেড়ে দিলাম।
হাফটাইমেই হল ছেড়ে যাঁরা উঠে যাচ্ছেন। যাই হোক, এবার ছবি নিয়ে কয়েকটি কথা। উত্তরভারতের গ্রামবাংলার আনাচকানাচ বিশালের নখদর্পণে। এন্টারটেনমে ন্টের বাজার যখন গ্রামকে ত্যাজ্যপুত্র করেছে, তখন বিশালের ছবি দেখে আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায়। কিন্তু এ ছবি বানানোর সময়ে কি তিনি আত্মবিশ্বাস হারালেন? ছবিতে প্রাইভেট জেট, লিমুজিন, আইটেম নৃত্য, শাদির মঞ্চে সাত ফেরে, সবরকম কমার্শিয়াল এলিমেন্ট মজুত। তার সঙ্গে আছে ভীমরুলের চাক, ক্ষেতের ফসল, মোষের পাল, ছাগল, পানাপুকুর, পাতকুয়ো, চোলাই মদ... অজ-গাঁয়ে যা যা থাকে, সবই পাওয়া যাবে। কিন্তু শেষ অবধি মনে মনে প্রশ্ন করবেনই, এসবের কি খুব প্রয়োজন ছিল? আসি অভিনেতা-অভিনেত্রীর কথায়।
মানডোলা পঙ্কজ কপূর সবসময়েই মদের নেশায় চুর। জড়ানো জড়ানো অযথা প্রলম্বিত সংলাপ মাঝেমধ্যেই দর্শকের ধৈর্ষচ্যুতি ঘটায়। মদ ছাড়লেই তিনি সাবকনশাস মাইন্ডে গোলাপি রঙের মহিষকে অট্টহাসি হাসতে দেখে ভিরমি খান। মাটরু ইমরানের আন্ডার-অঅযাক্টিং খুবই ইমপ্রেসিভ। কিন্তু তা হলে কী হবে, গল্পের গোলাপি মহিষ গাছে উঠেছে যে, অভিনয় করা বেশ মুশকিল। বিজলি অনুষ্কা শর্মা এখানেও বেশ বাবলি, ইয়ং। তুবড়ির মতো ফুটছেন। বেশ স্ফুর্তিতে অভিনয় করেছেন, মস্ত নেচেছেন। শাবানা আজমি আর আর্য বব্বরের মাত্রাছাড়া কমেডি অভিনয় সত্যি অবাক করার মতো অসহ্য। তবুও যেটুকু ছবির খাতায় জমা করা যায়, সেটা একটি দৃশ্য। যেখানে পঙ্কজ কপূর শাবানা আজমিকে বলছেন কৃষিজমি নিয়ে তাঁর স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের কথা। সোনার ফসলের বদলে আকাশ বাতাস ভরে উঠবে যান্ত্রিক শব্দে, বৃষ্টির মেঘের বদলে বিষাক্ত ধোঁয়ার মেঘে ঢেকে যাবে আকাশের নীল রং...সঙ্গে শট আর সিজিআইয়ের অপূর্ব মিশ্রণ মনে পড়ায় আন্তোনিওনির ছবিকে। কয়েক ঝলকের জন্য হলেও খুঁজে পেয়ে যাই পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজের সত্তাকে।