Sandhya Mukhopadhyay: পঞ্চাশের দশকে কাদের 'রিপ্লেস' করে সন্ধ্যা 'সন্ধ্যা' হয়ে উঠেছিলেন?

সন্ধ্যার গায়নশৈলী তাঁর পূর্বসূরীদের থেকে ধীরে ধীরে পৃথক হতে শুরু করল!

Updated By: Feb 16, 2022, 06:53 PM IST
Sandhya Mukhopadhyay: পঞ্চাশের দশকে কাদের 'রিপ্লেস' করে সন্ধ্যা 'সন্ধ্যা' হয়ে উঠেছিলেন?

সৌমিত্র সেন

১৯৩১ সালে জন্ম সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। ১৯৪৫ সালে জীবনের প্রথম রেকর্ড। গিরিন চক্রবর্তীর কথায় ও সুরে 'তুমি ফিরায়ে দিয়াছ' এবং 'তোমার আকাশে ঝিলমিল করে' গান দু'টি প্রথম রেকর্ড করা হয়। কলম্বিয়া থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর গানের রেকর্ড। ১৯৪৮ সালে প্রথম রাইচাঁদ বড়ালের সুরে সন্ধ্যার প্রথম ছায়াছবিতে গান। সেই গান শুনে রসিকেরা বুঝেছিলেন বাংলা ছবির জগতে নারীকণ্ঠে এবার সন্ধ্যা-যুগ আসতে চলেছে।  

বাংলা বেসিক গান? সেখানে তো সন্ধ্যার ছায়া গাঢ় ও দীর্ঘ। তাঁর সেই কেরিয়ার অবিচ্ছিন্ন ভাবে শুরু হয়েছিল তিনি মুম্বই (বম্বে) থেকে ফিরে আসার পরে, ১৯৫২ সালের পর থেকে।  এই সময়পর্ব সন্ধ্যার সাঙ্গীতিক জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ, অতি ফলপ্রসূ। তিনি একের পর এক আধুনিক গান রেকর্ড করেছেন সলিল চৌধুরী, নচিকেতা ঘোষ, রবীন চট্টোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো সুরকারের সুরে। পাশাপাশি চুটিয়ে চলেছিল ফিল্মের নেপথ্যগান।
 
এবং এই দু'ধরনের গানের ক্ষেত্রেই সন্ধ্যার উচ্চারণ, অভিব্যক্তি, কণ্ঠের মডিউলেশন ইত্য়াদি সব মিলিয়ে বাংলা ছবির এবং বাংলা আধুনিক গানের উপস্থাপন তখন যে ভিন্ন মাত্রা পেতে থাকল, যে ভাবে নেক্সট-লেভেলে সরে যেতে থাকল তাতে এই সময় থেকেই বোঝা যেতে থাকল যে, সন্ধ্যার পূর্বসূরীর অন্যতম কাননদেবীর গায়নশৈলী থেকে তা ধীরে ধীরে পৃথক হয়ে নিজের জন্য এক অন্যরকম ধাঁচ গড়ে নিচ্ছে। তা আলাদা হয়ে যাচ্ছে চল্লিশ-পঞ্চাশের এক ঝাঁক শিল্পীর গায়কির থেকেও। সেই তালিকা দীর্ঘ। কৃষ্ণা দাশগুপ্ত, সুপ্রভা সরকার, সুপ্রীতি ঘোষ, উৎপলা সেন, আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়, গায়ত্রী বসু।

 

আজকাল অবশ্য অনেক বাঙালিই এঁদের  সেভাবে চেনেন না, জানেন না, মনে করতেও পারেন না এঁদের গান। অথচ, সেই সময়ে এঁরা ছিলেন এক-একজন দিকপাল। সন্ধ্যার কেরিয়ারের প্রথম দিকে এঁরাই ছিলেন বাংলাগানের নারীকণ্ঠের ধ্রুবতারা-স্বরূপ। যেমন, সুপ্রীতি ঘোষ। 'মহিষাসুরমর্দিনী'তে (মহালয়া) তাঁর 'বাজলো তোমার আলোর বেণু' সকলে চেনে-জানে-শুনেছে। কিন্তু তা-ও সুপ্রীতিকে নামে সেভাবে চেনে কই এই প্রজন্ম? অথচ, তিরিশের দশক থেকেই সুপ্রীতি বাংলা গানের সংসারে স্বরাট। সঙ্গীতজীবনের প্রথম পর্বে তিনি রেকর্ড করেন শৈলেশ দত্তগুপ্ত, সুরসাগর হিমাংশু দত্ত, সুধীরলাল চক্রবর্তী, নীহারবিন্দু সেনের মতো স্বনামধন্য সুরস্রষ্টাদের গান। তাঁর সেই সব গান অমর কিন্তু আজ আর বহুশ্রুত নয়। যেমন-- 'তোমার আকাশে চাঁদ ছিল, আর আমার ভুবনে ছিল গান', 'যদি আবার দু'জনে দেখা হয়', 'রতনপুরের মেলাতে চাঁদনিরাতের বেলাতে', যথেষ্ট জনপ্রিয়তা। এমনকী, তখন নবাগত মান্না দে'র সুরেও গান রেকর্ড করেছিলেন সুপ্রীতি। গানটি ছিল--'বালুকাবেলায় অলস খেলায় যায় বেলা'। স্বয়ং কৃষ্ণচন্দ্র দে-র পরিচালনাতেও গেয়েছিলেন সুপ্রীতি। সেই গান হল--'মন পবনের নাও আমার।' 'অভয়ের বিয়ে' থেকে শুরু করে প্রচুর ছবিতে গান করেছেন। 'মন বলে যে মেল মেল, নয়ন বলে না', 'এ কেমন দোলা কে জানে', 'কুড়িয়ে মালা গাঁথবে কিনা, নাই ভাবনা'। 'শেষরক্ষা' (১৯৪৪), 'রত্নদীপ' (১৯৫১), 'কপালকুণ্ডলা' (১৯৫২), 'সাহেব বিবি গোলাম' (১৯৫৬) প্রভৃতি বহু গুরুত্বপূর্ণ ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন সুপ্রীতি ঘোষ।

সেসময়ে বাংলাগানের আর এক চোখে-পড়ার-মতো মহিলাকণ্ঠ ছিলেন আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়। চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে এবং পরবর্তীকালের অন্যতম সফল গায়িকা ছিলেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গানগুলির মধ্যে রয়েছে 'তারাদের চুমকি জ্বলে আকাশে' 'হাট্টি মাটিম টিম', 'মন বলছে আজ সন্ধ্যায়', 'ছোট্টো পাখি চন্দনা', 'আমি আলপনা এঁকে যাই আলোয় ছায়ায়', 'আকাশ আর এই মাটি ওই দূরে' এবং 'যদি অলি না চাহে '। তাঁর গলায় ছিল দারুণ এক রোমান্টিকতা।

বাংলা গানে পুরোপুরি 'সন্ধ্যা' নামার আগে সেখানে নিজের জায়গা চিরস্থায়ী করে গিয়েছিলেন উৎপলা সেন। বিশ শতকের বাংলা গানের এক প্রধান গায়িকা তিনি। প্রেম এবং বিরহের গানে এক ধরনের বিষাদের সুর তিনি এনেছিলেন তাঁর গানে। সুধীরলাল চক্রবর্তীর সুরে ১৯৪১ সালে প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল তাঁর 'এক হাতে মোর পূজার থালি'। পরে আরও জনপ্রিয়তা পেল মহিষাসুরমর্দিনীর 'শান্তি দিলে ভরি'। যা আজও বাঙালিকে দু'দণ্ড শান্তি দিয়ে যায়।

ছিলেন গায়ত্রী বসুর মতো শিল্পীও। তাঁর 'কোন দূরের বনের পাখি', 'কেন এলে মধুরাতি', 'ও পারুল পারুল শিমুল শিমুল'; তাঁর আকাশবাণীর রম্যগীতি বিভাগের 'তুমি আসবে বলে'ও এক প্রজন্মের মুখে মুখে ফিরত। 

এঁরা সকলেই সন্ধ্যার আগে এসে বাংলাগানে বিপুল আসর পেতে বসেছিলেন। সন্ধ্যার আগে এঁরাই ছিলেন বাংলাগানের রম্য গোধূলি। এঁদের যুগকে একরকম শেষ করেই সন্ধ্যা নিজেকে এক অপ্রতিরোধ্য অতুলনীয় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  

আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay: সন্ধ্যা উত্তমকুমারকে সেদিন দারুণ রোম্যান্টিক এই প্রশ্নটি করেছিলেন! কী উত্তর দিয়েছিলেন মহানায়ক?

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.