Omicron: ককটেল ভ্যাকসিনই কি এখন বাঁচার একমাত্র রাস্তা? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা?
ককটেল ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক ও গভীর পর্যবেক্ষণ এখনও বাকি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: বিশ্ব জুড়ে ওমিক্রন সংক্রমণ যেন একটা সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে মানবজাতিকে। বিপদের সামনে যেমন মানুষ নানা রকম পথ হাতড়ে দেখার চেষ্টা করে কোথায় সমাধান, এখনও সেটাই চলছে। নতুন করে মাথা চাড়া দেওয়া ভয়-জাগানো করোনা সংক্রমণকে রুখে দেওয়ার জন্য তাই চলছে ককটেল ভ্যাকসিন তথা মিশ্রিত ভ্যাকসিন প্রয়োগের ভাবনাচিন্তা।
দেখা গিয়েছে, দু'টি ভ্যাকসিন নিয়েও করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। তাই মাত্র একটি ভ্যাকসিন ডোজের উপর আর আস্থা রাখতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। দুটি করোনা টিকাকে একযোগে 'ককটেল' আকারে আক্রান্তের শরীরে প্রয়োগ করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় করতে চাইছেন গবেষকরা। সেই মোতাবেক কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনকে মিশিয়ে দেহে প্রবেশ করানোর চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ভাবে ককটেল ভ্যাকসিন প্রয়োগ আদৌ কতটা নিরাপদ? এই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ ভ্যাকসিন কি সত্যই বেশি কার্যকরী?
গবেষকেরা এক্ষেত্রে দু'দলে ভাগ হয়ে যাচ্ছেন। বা, বলা ভালো, তাঁরা এই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচকে এখনই বাঁচার একমাত্র রাস্তা হিসেবে না ধরে নিয়ে এটাকে নিছক একটা ভালো প্রচেষ্টার পর্যায়েই রাখছেন। যার সবটা এখনও স্পষ্ট নয়, জ্ঞাত নয়। ফলে এখনও অনেক সময় দিয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টিতে কোনও সুস্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। আপাতত তাঁরা বলছেন, এই ককটেল ভ্যাকসিনের ভাল ও মন্দ দুটি দিকই আছে।
এর ভাল দিকগুলি হল:
এই ডোজ গ্রহীতার শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে জোরদার করে
নিজেকে দ্রুত বদলে ফেলা অর্থাৎ, মিউটেশন করে নেওয়া করোনার নয়া প্রজাতি বা ভ্যারিয়্যান্টের দিশাহীন মারণ ক্ষমতাকে প্রাথমিক ভাবে রুখে দেয়
কোথাও টিকার সরবরাহ কম থাকলে এই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ পদ্ধতি কার্যকরী হতে পারে। কেননা, প্রথম ডোজের নির্ধারিত দিনের পরেই দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া সম্ভব। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে অতটা অপেক্ষা করার মতো সময় না থাকলে বা টিকার 'শর্টেজ' থাকলে, তখন মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেতে পারে
মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের কিছু উদ্বেগের দিকও আছে:
এ জাতীয় ভ্যাকসিনের অনেকটাই এখনও অজানা। ফলে এর মোদ্দা বিষয়টিও অনেকাংশে অপরীক্ষিত
বিভিন্ন ভ্যাকসিনের শেল্ফ লাইফ ও স্টোরেজ ভিন্ন ভিন্ন। ফলে কোথাও ককটেল ভ্যাকসিন সফল ভাবে প্রয়োগ করতে গেলে এই প্রাথমিক সীমাবদ্ধতাগুলিকে আগে টপকাতে হবে
ককটেল ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক ও গভীর পর্যবেক্ষণ এখনও বাকি। এটা না হলে এর সমস্ত প্রেক্ষিতটা স্পষ্ট হবে না। ফলে দুশ্চিন্তার কিছু জায়গা থাকছেই।
পরীক্ষা যে একেবারেই হয়নি তা নয়। এশিয়ান হেলথকেয়ার ফাউন্ডেশনের গবেষকদের সঙ্গে একযোগে AIG হাসপাতাল এ জাতীয় একটি পরীক্ষা করেছেন। সেখানে Covishield এবং Covaxin-কে মিশিয়ে ককটেল ডোজ দেওয়া হয়েছে। ৪৪ জন অংশগ্রহণকারীকে দুটি করে চারটি দলে ভাগ করা হয়েছিল।
প্রথম দলকে দেওয়া হয়: কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ + কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ
দ্বিতীয় দলকে দেওয়া হয়: কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ + কোভ্যাক্সিনের দ্বিতীয় ডোজ
তৃতীয় দলকে দেওয়া হয়: কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ + কোভ্যাক্সিনের দ্বিতীয় ডোজ
চতুর্থ দলকে দেওয়া হয়: কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ + কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ
সমস্ত অংশগ্রহণকারীকে ৬০ দিনের জন্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। দেখা হচ্ছিল তাঁদের শরীরে কোনও প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে কিনা। গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিন ককটেলগুলি নিরাপদই ছিল। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কোনও প্রতিকূল প্রভাব দেখা যায়নি। বরং দেখা গিয়েছে কোভিশিল্ড কিংবা কোভ্যাক্সিনের থেকে স্পাইক-প্রোটিন অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়া চার গুণ বেশি এই ককটেল ডোজে।
তবুও গবেষক এবং চিকিৎসকেরা এখনও আরও পরীক্ষা ও গবেষণার পক্ষপাতী।
আরও পড়ুন: Omicron: করোনা অতিমারী শেষ ২০২২ সালেই! কী বলছে 'হু'?