ছোট্ট মেয়ে কেরলকে দিয়ে দিল তার জন্মদিনের উপহার, আপ্লুত 'সাদা চুলের দাদু'
জন্মদিনে পাওয়া সব উপহারের অর্থই পাখি জড়ো করে রেখেছিল ওর পছন্দের পিগি ব্যাঙ্কে। তবে বন্যায় বিপর্যস্ত কেরলের মর্মান্তিক ছবি দেখার পর সেই সখও বিসর্জন দিল পাখি। সব টাকাই (১৪ হাজার ৮০০) এই একরত্তি মেয়ে দান করল কেরলের বন্যাত্রাণে।
মৌমিতা চক্রবর্তী ও সৌরভ পাল
অনুপ্রিয়ার পর এবার পাখি, ছোট ছোট হাতগুলোই এগিয়ে আসছে বিরাট বিরাট সাহায্য নিয়ে। সবটাই কেরলের জন্য। কয়েকদিন আগেই তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরমের চার বছরের ছোট্ট মেয়ে অনুপ্রিয়া সাইকেল কেনার জমানো ৯ হাজার টাকাই তুলে দিয়েছিল কেরলের বন্যা ত্রাণে। এবার সেই একই উদ্যোগ এল কলকাতার যাদবপুরের বাসিন্দা অরিজিত্ সাহার মেয়ে অপরাজিতার তরফেও।
(তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরমের চার বছরের ছোট্ট মেয়ে অনুপ্রিয়া)
সাহা বাড়ির ছোট্ট মেয়ে পাখি ওরফে অপরাজিতার অনেক দিনের শখ, নাচের জন্য সে একটা সিডি প্লেয়ার কিনবে। সেই মতো জন্মদিনে পাওয়া সব উপহারের অর্থই পাখি জড়ো করে রেখেছিল ওর পছন্দের পিগি ব্যাঙ্কে। তবে বন্যায় বিপর্যস্ত কেরলের মর্মান্তিক ছবি দেখার পর সেই সখও বিসর্জন দিল পাখি। সব টাকাই (১৪ হাজার ৮০০) এই একরত্তি মেয়ে দান করল কেরলের বন্যাত্রাণে।
টেলিভিশনের পর্দায় বানভাসি কেরলের ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল এই নবীন প্রাণকেও। ঘরে বসেই পাখি দেখেছিল, ‘সাদা চুলের দাদু (বিমান বসু) কেরলের দিদিদের জন্য টাকা তুলছে’। ব্যস! পাখি বাবাকে জানায়, সে সিডি প্লেয়ার কিনবে না। জমানো সব টাকাই দিয়ে দেবে ‘কেরলের দিদিদের জন্য’। ছোট্ট মেয়ের এমন সিংহহৃদয় দেখে আর বিলম্ব করেননি অরিজিত্ বাবুও। পাড়ার সিপিআই(এম) নেতা সুব্রত দত্তের সঙ্গে কথা বলে অরিজিত্ বাবু মেয়েকে নিয়ে সোজা হাজির হয়ে যান আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মুজাফ্ফর আহমেদ ভবনে। সেখানেই বিমান বসুর হাতে নিজের পিগি ব্যাগটাই দিয়ে দেয় পাখি।
অপরাজিতার অনুদান নেওয়ার আগে বর্ষীয়ান বাম নেতা পাখিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি এই টাকা কাদের জন্য দিচ্ছ’? পাখির সটান উত্তর- কেরলের দিদিদের জন্য দিচ্ছি। আমি টিভিতে দেখেছি, ওখানে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। ওরা স্কুলে যেতে পারছে না। ওদের বই খাতাও নষ্ট হয়ে গেছে।
যাদবপুরের কারমেল স্কুলের নার্সারির ছাত্রীর এই উত্তরে আপ্লুত বাম নেতাও। অপরাজিতার এই মহত্ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও।
পার্টির কলকাতা জেলা কিমিটির সদস্য সুব্রত দত্ত পাখির মহানুভাবতার প্রশংসা করে জানিয়েছেন, “এই বয়সে এমন ভাবনা চিন্তা সত্যিই কল্পনাতীত। তবে আজকের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি আর সামাজিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ। এটা আগামী দিনে সমাজের জন্য আরও মঙ্গলদায়ী হবে।”