গ্যাস লিক করেই বিস্ফোরণ কেষ্টপুরে! কিন্তু পাইপ 'কাটল' কীভাবে? কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা

হাসপাতালের বেডে শুয়ে স্বাতী রায় জানিয়েছেন, কদিন ধরেই ওভেনটি সমস্যা করছিল। কাল ওভেন জ্বালাতে লাইটারটি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন।

Updated By: Sep 7, 2019, 05:33 PM IST
গ্যাস লিক করেই বিস্ফোরণ কেষ্টপুরে! কিন্তু পাইপ 'কাটল' কীভাবে? কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা

নিজস্ব প্রতিবেদন : গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে নয়, গ্যাস লিক করেই ঘটে বিস্ফোরণ। কেষ্টপুরে ইনস্পেক্টর দেবাশিস রায়ের ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণ ও তার জেরে স্ত্রী স্বাতী রায়ের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফ্ল্যাটে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গ্যাসের নোজল ফাটা ছিল। গ্যস পাইপটিও ৩ জায়গায় কাটা ছিল। এরফলে অনেকক্ষণ ধরে গ্যাস লিক করে সিলিন্ডার কার্যত পুরো ফাঁকা-ই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গ্যাস পাইপ কীভাবে কাটল? নিজে থেকেই কি পাইপটি ফেটে গিয়েছিল নাকি কেউ কেটে দিয়েছিল? তদন্তকারীদের এখন ভাবাচ্ছে সেই প্রশ্ন। সেটাই খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতে,অনেকধরে গ্যাস লিক করার ফলে রান্নাঘরে একটা 'ক্লাউড' তৈরি হয়। মেঝের কাছে নীচের দিকে তৈরি হয়েছিল সেই 'ক্লাউড'টি। এখন স্বাতী রায় রান্নাঘরে ঢুকে ভাত বসানোর জন্য লাইটার জ্বালাতেই বিস্ফোরণ ঘটে। রান্নাঘরটি ছোট হওয়ায় বিস্ফোরণের তীব্রতাও বেশি হয়। মেঝের কাছে গ্যাস জমে 'ক্লাউড' তৈরি হওয়ায় স্বাতী রায়ের শরীরের নিম্নাংশ আগে অগ্নিদগ্ধ হয়। রান্নাঘরটা একটু বড় ও ফাঁকা হলে, কিংবা জানলাগুলি খোলা থাকলে, আগুন লাগলেও বিস্ফোরণের তীব্রতা এত হত না। এক্ষেত্রে ছোট রান্নাঘরে আগুন লাগার পর তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে যায়। আর তখন জমা গ্যাস দরজা দিয়ে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসায়, অক্ষত থাকে সিলিন্ডারটি। অন্যদিকে, হাসপাতালের বেডে শুয়ে স্বাতী রায় জানিয়েছেন, কদিন ধরেই ওভেনটি সমস্যা করছিল। কাল ওভেন জ্বালাতে লাইটারটি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত সোয়া ১০টা নাগাদ বিস্ফোরণ ঘটে পুলিসকর্মী দেবাশিষ রায়ের ফ্ল্যাটে। তাঁর কথায়, সেইসময় তিনি ও তাঁর শ্যালক দুজনেই ফ্ল্যাটে ছিলেন। ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলেন। স্ত্রী স্বাতী রায় রান্নাঘরে যান ভাত চাপাতে। তার একটু পরেই বীভৎস আওয়াজে কেঁপে ওঠে ফ্ল্যাট। ছুটে এসে তিনি দেখেন, রান্নাঘরের মেঝেয় অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে স্ত্রী স্বাতী রায়। পুড়ে গিয়েছে পরে থাকা নাইটি। শরীরের ৯০ থেকে ৯৩ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। এদিকে রান্নাঘরের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটলেও অক্ষত রয়েছে গ্যাস থেকে জলের মেশিন। অক্ষত রয়েছে রান্নাঘরে থাকা বাসনপত্রও। তবে লন্ডভন্ড ফ্ল্যাটের অন্য ঘরগুলি। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ভেঙে পড়েছে ফ্ল্যাটের সব জানলার কাচ। উড়ে গিয়েছে দরজার পাল্লা।

আরও পড়ুন, 'জামা ছিঁড়ে দেয়, বিবস্ত্র করার চেষ্টা করে,' মানিকতলায় গায়িকার যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

কিন্তু কী থেকে এত তীব্র বিস্ফোরণ ঘটল? তা নিয়েই ধন্দে পড়েন বাড়িকর্তা দেবাশিস রায় থেকে পুলিসও। তদন্ত নামে বাগুইহাটি থানা ও বিধাননগরের কমিশনারেটের পুলিস। বিস্ফোরণের কারণ খুঁজতে ফ্ল্যাটে আসেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গ্যাস 'ক্লাউড' থেকে বিস্ফোরণের বিষয়ে নিশ্চিত হন তাঁরা। এখন প্রশ্ন একটাই, কীভাবে কাটল গ্যাস পাইপ? পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন উঠে আসছে। রাত সোয়া ১০টায় বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। আর পুলিসে অভিযোগ দায়ের হয় ভোর ৩টেয়। কেন ৫ ঘণ্টা পর অভিযোগ দায়ের করা হল? তদন্তকারীদের সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় কোনওকিছুই। প্রশ্ন উঠছে দেবাশিস রায়ের ভূমিকা নিয়েও।

.