কারও নম্বর বেড়েছে, কারও কমেছে, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা ফাঁস ক্যাগের রিপোর্টে
ক্যাগের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে সমস্যা থাকলে সকলের ক্ষেত্রেই গরমিল ধরা পড়ত। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে অস্বচ্ছতা হয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট দিল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, নিয়োগে চাকরিপ্রার্থীদের নম্বর বাড়ানো বা কমানো হয়েছে। আর সেটা করতে গিয়ে বাদ পড়েছেন যোগ্য প্রার্থীরা।
সিএজি-র রিপোর্ট বলছে, ইস্টার্ন জোনে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৬১,৭২২ জন প্রার্থী। তার মধ্যে ৬৪৯৩ জন প্রার্থীর নম্বরের সঙ্গে অডিটের অমিল ধরা পড়েছে। নম্বর বাড়ানো হয়েছে ৩৬৫৫ জন প্রার্থীর। কমানো হয়েছে ২৮৩৮জনের। অডিটের সঙ্গে অ্যাকাডেমিক স্কোরের অমিল রয়েছে, এমন ৪২৯ জন প্রার্থী ঠাঁই পেয়েছেন নিয়োগ তালিকায়।
নর্দান জোনে প্রার্থী ছিলেন ১০২০৫৯ জন। অ্যাকাডেমিক স্কোরে গরমিল রয়েছে ১১০২১ জন প্রার্থীর। তালিকায় নাম উঠেছে ৪৭৯জন পরীক্ষার্থীর। নম্বর বাড়ানো হয়েছে ৬৫৬১ জনের। নম্বর কমেছে ৪৪৬০ জন পরীক্ষার্থীর।
সার্দান জোনে প্রার্থীর সংখ্যা ৬০৫৩৬। নম্বরে গরমিল প্রার্থী ৮০৩৪জন প্রার্থীর। গরমিল থাকা ৪৮৩ জন প্রার্থীর নাম রয়েছে তালিকায়।
ওয়েস্টার্ন জোনে প্রার্থীর সংখ্যা ১২০২৪। অ্যাকাডেমিক স্কোরে গরমিল রয়েছে ১২৫৫৩ জন প্রার্থীর। নম্বর বেড়েছে ১২৫৫৩ জনের। তালিকায় রয়েছেন ৬৪১ জন পরীক্ষার্থী।
সাউথ-ইস্টার্ন জোনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬১৪১০। অ্যাকাডেমিক স্কোরে অমিল রয়েছে ৮৫৪৬ জন প্রার্থীর। নম্বর বেড়েছে ৫৪৮৯ জনের। ৩০৫৭ জনের নম্বর কমেছে। নম্বরে গরমিল থাকা ৪৫১জন পরীক্ষার্থীর নাম রয়েছে তালিকায়।
নম্বরে গরমিল নিয়ে এসএসসি বোর্ড ক্যাগকে সাফাই দিয়েছে, বিভিন্ন বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের গ্রেডেশন পদ্ধতির ফারাক রয়েছে। সেটা মাথায় রেখে নম্বর বাড়ানো বা কমানো হয়েছে। সেই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে ক্যাগ। তারা জানিয়েছে, ওই পরীক্ষার্থীদের বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নম্বর দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। গ্রেডেশন ব্যবস্থা নেই।
ক্যাগের রিপোর্ট বলছে, মৌখিক পরীক্ষার আগে ২২৬৪ জন প্রার্থীর নম্বর ১ থেকে ২৪ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নিয়োগতালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন ১৫৯৬ জন প্রার্থী।
অ্যাকাডেমিক নম্বরের ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়েছিল ৪৩ জন প্রার্থীকে। অথচ তাঁদের অ্যাকাডেমিক নম্বর সিস্টেমে নথিভূক্তই নেই। নিয়োগ তালিকায় নাম রয়েছে ২৪ জন প্রার্থীর।
তাহলে কি প্রযুক্তির গলদ রয়েছে?
ক্যাগের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে সমস্যা থাকলে সকলের ক্ষেত্রেই গরমিল ধরা পড়ত। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ না থাকলে নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে গাণিতিক গণনায় ভুল হয় না। অযোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ করে দিতেই এমনটা করা হয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে এসএসসি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ওই ব্যবস্থা নিয়ে খুঁটিনাটি তদন্ত করেছে ক্যাগ। অনলাইন ব্যবস্থায় ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে ১২টি পরীক্ষা। একটি পরীক্ষার নথি না থাকায় ১১টি পরীক্ষা বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট তৈরি করেছে ক্যাগ।
এদিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন,'সিএজি রিপোর্ট এসেছে, রাজনীতি ও সমাজের ক্ষেত্রে তা ভয়ঙ্কর। প্রতিবারই অনিয়ম হয়েছে। একাধিক পেপারে এসেছে। ৪.০৬ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৬ হাজার লোককে সঠিক নম্বর দেওয়া হয়নি। যুব সমাজের প্রতি কতবড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাদের ভবিষ্যত নিয়ে শুরু হয়েছে ছিনিমিনি।''
আরও পড়ুন- রাজ্যে নির্বাচন ব্যালটেই হবে, বাংলাই পথ দেখাবে, একুশের মঞ্চ থেকে ঘোষণা মমতার