শোকার্ত ব্যক্তিরাই ধন্য, কারণ তাঁরা সান্ত্বনা পাবেন!

বড়দিনে যিশুর এই উপদেশই আমাদের হদয়ে আলো জ্বেলে দিক।

Updated By: Dec 25, 2021, 02:44 PM IST
শোকার্ত ব্যক্তিরাই ধন্য, কারণ তাঁরা সান্ত্বনা পাবেন!

সৌমিত্র সেন

আজ বড়দিন। আজ এক্স-মাস। আজ ক্রিসমাস। আজ শহরের হাওয়ায়-হাওয়ায় ক্রিসমাস আর শীতের সনেটগুচ্ছের দ্যুতি ও হিল্লোল। সেই সনেটের ছন্দে নৃত্যে বিভঙ্গে খ্রিস্টীয় সংস্কৃতির নিবিড় আবহ ছাড়াও উঁকি দিয়ে যায় মর্মরিত উৎসবের উজ্জ্বল মুখ।

বাচ্চারা এই সময়টা ২৪ ডিসেম্বর থেকেই সান্তা ক্লজের জন্য প্রহর গোনে। তাদের কাছে বড়দিন সান্তা-ময়। উপহার আর কেক-লজেন্সের স্পর্শেই কেটে যায় তাদের ২৫ ডিসেম্বর। একটু বড়দের কাছে বিষয়টি হয়তো ঘোরাঘুরির মধ্যেই আবহ। তাদের সেই ঘোরাফেরার মধ্যে হয়তো চার্চ-দর্শনও থাকে। না-হলে আলাদা করে যিশু তো আর তাদের মনে সেভাবে দাগ কাটে না। আবার যাঁরা বয়সের দিক থেকে আর একটু বড়-গোষ্ঠীতে পড়েন, তাঁদের মনেও যে যিশু সেভাবে আলোড়ন তোলেন, তা-ও কিন্তু নয়। তবে এ কথা ঠিক, এই বড়দিনের উৎসবের মধ্য়ে কোথাও একটু নীরবে যিশুর ধর্মীয় ভাবনার আবেশ ছড়িয়েই থাকে। ব্রিটিশ শাসনের একটা অবলীন ছায়া বাঙালিকে বরাবরই যিশুর সঙ্গে জুড়ে রেখেছে। আর, তা ছাড়া, এক অংশের বাঙালিরা দীর্ঘদিন মিশনারিদের ঘরে পড়াশোনা করেছে। শিক্ষার পাশাপাশি সেখানে সুস্থ নীরব ধর্মীয় প্রচারও ছিল। ফলে, যিশুর চর্চাটা একটা বড় অংশের বাঙালির মানসে-সংস্কৃতিতে চির-অনুস্য়ূত হয়ে গিয়েছিল।

যিশুর জন্মোৎসবের লগ্নে তাই যিশুর ধর্মীয় প্রভাবের একটা আবেশ থেকেই যায়। বাইবেল মারফত যা জানা যায়, বা খ্রিস্ট-বিশেষজ্ঞেরা যা বলে থাকেন, তাতে যিশুর ধর্মীয় বিষয়ের মধ্যে তাঁর শৈলোপদেশই সব চেয়ে গভীর ও জরুরি। এটিই হল বিখ্যাত 'সারমন অন দ্য মাউন্ট'। বলা হয়, এই 'সারমন অন দ্য মাউন্ট' বা শৈলোপদেশ দেওয়ার আগে গোটা গ্যালিলি ঘুরেছেন ও প্রচার করেছেন যিশু। সেই সময়ে সমগ্র সিরিয়ায় যিশু খ্যাতনামা এক নাম। তখনই একদিন গ্য়ালিলি, ডেকাপোলিস, জেরুজালেম, জুডা, জর্ডনের ওপার থেকে অসংখ্য মানুষ যিশুকে অনুসরণ করলেন। যিশু অকাতরে তাঁর ধর্মীয় অনুভূতি সঞ্জাত বাণী বিতরণ করছেন তাঁদের মধ্যে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও তিনি তাঁর কিছু উচ্চ ভাবসম্পন্ন বাণী সরিয়ে রাখলেন তাঁদেরই জন্য, যাঁরা বাস্তিবকই উচ্চ আধ্যাত্মিক শিক্ষার উপযোগী। ফলে, যিশু সেই অগণিত মানুষকে পিছনে রেখে দ্রুত উঠে গেলেন পাহাড়ে। শীর্ষে উঠে তিনি একটি পাথরে বসলেন এবং দেখলেন মাত্র গুটিকয় উৎসাহী মানুষ তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। যিশু উপদেশ দিতে শুরু করলেন। জিজ্ঞাসুরা যিশুকে ঘিরে বসে পড়লেন। যিশু এখানেই তাঁর গভীর ধর্মোপদেশগুলি দিতে থাকলেন। এই শৈলোপদেশ নিয়ে খ্রিস্টীয় ধর্মীয় সাহিত্যে প্রচুর চর্চা হয়েছে।

এই উপদেশ শুরুই হয়েছে এরকম একটি বাণী দিয়ে-- 'নম্র আত্মারাই ধন্য, কারণ স্বর্গরাজ্য তাঁদেরই মধ্যে।' তারপর তিনি বলে যেতে থাকলেন-- 'শোকার্ত ব্যক্তিরাই ধন্য, কারণ তাঁরা সান্ত্বনা পাবেন'; 'অহংকারশূন্য ব্যক্তিরাই ধন্য-- কারণ, তাঁরাই পৃথিবীর অধীশ্বর হবেন'; 'ধর্মের জন্য যাঁরা ক্ষুধার্ত ও তৃষিত তাঁরাই ধন্য, কারণ, তাঁদের হৃদয় পূর্ণ হবে'; এই শৈলোপদেশেই রয়েছে যিশুর সেই বিখ্যাত বাচন-- যেখানে তিনি সমবেত শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে বলছেন-- 'তোমরা ধরিত্রীর নুনস্বরূপ; নুন যদি তার লবণত্ব হারিয়ে ফেলে তবে তা আর লবণ নয়, বস্তুটি তখন অসার' (ম্যাথিউ কথিত)!

মানুষ যদি সত্যিই উপলব্ধি করেন, স্বর্গরাজ্য তাঁরই মধ্যে বাস করছে, তবে এর চেয়ে আত্মতৃপ্তিকর আর কী হতে পারে? বড়দিনে যিশুর এই উপদেশই আমাদের হদয়ে আলো জ্বেলে দিক। 

Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 

আরও পড়ুন: Christmas in Kolkata: আজ বড়দিন, সেজে উঠেছে বোব্যারাক-পার্ক স্ট্রিট, ক্যামেরাবন্দি উৎসবের তিলোত্তমা

.