এবার সংবাদপত্র পাঠেও নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর
শুধু গ্রন্থাগারে সংবাদপত্র রাখা নিয়ে বিধিনিষেধ জারি নয়, প্রয়োজনে আমজনতার সংবাদপত্র পাঠ নিয়েও ফতোয়া জারির হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পছন্দের সংবাদমাধ্যমগুলিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে মুখ্যমন্ত্রী বলেন.....
শুধু গ্রন্থাগারে সংবাদপত্র রাখা নিয়ে বিধিনিষেধ জারি নয়, প্রয়োজনে আমজনতার সংবাদপত্র পাঠ নিয়েও ফতোয়া জারির হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পছন্দের সংবাদমাধ্যমগুলিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "মানুষ কোন কাগজ কিনে পড়বে সেটা আমরা এখনও বলিনি। আগামিদিনে বলব। কারণ, বিষয়টা আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্তের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।"
সোমবার গ্রন্থাগার দফতরের বিশেষ সচিবের দেওয়া প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, কাগজগুলি বাছাই করা হয়েছে পাঠকদের মধ্যে `মুক্ত চিন্তার প্রসার` ঘটানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্রবল চাপের মুখে পড়ে বাছাই করা কয়েকটি টিভি চ্যানেলের মুখোমুখি হয়ে বৃহস্পতিবার কার্যত `অন্য` যুক্তি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সংবাদপত্রে সেন্সরশিপ বির্তকে তাঁর বক্তব্য, ছোট সংবাদপত্রকে তুলে ধরতে চায় সরকার। এটাই সরকারি নীতি। সেই সঙ্গে গ্রন্থগার দফতরের অর্থ সঙ্কটের কথাও শোনা গিয়েছে তৃণমূল নেত্রীর মুখে। তাঁর যুক্তি, "গ্রন্থাগার দফতরের বাজেট মাত্র ১৯ কোটি টাকা। এত কম টাকায় সব কাগজ কেনা সম্ভব নয়।" সেই সঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, "একটা ছোট্ট বিষয়। ছোট্ট ডিপার্টমেন্টের ছোট্ট সার্কুলার। তাই নিয়ে কোনও কোনও মহল নোংরা খেলায় নেমেছে।" মুখ্যমন্ত্রীর মতে, গ্রন্থাগারে সংবাদপত্র নির্বাচন নিয়ে এই বিতর্কটাই অপ্রাসঙ্গিক।
রাজ্য সরকারের গ্রন্থাগার ফতোয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বুদ্ধিজীবী মহলের একটা বড় অংশ। সংবাদপত্রে সরকারি সেন্সরশিপ জারির এই বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করা হয়েছে। মামলাকারী বাসবী রায়চৌধুরীর আবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তিটি ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা, পাবলিক লাইব্রেরি অ্যাক্ট (১৯৭৯) বা লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট রুল-এর বিরোধী। শুক্রবার প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীকে নিয়ে গঠিত কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে `ছোট সংবাদপত্রকে উত্সাহ দেওয়া`র তত্ত্ব উপস্থাপিত করেছিলেন গ্রন্থাগারমন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরীও। যদিও রাজ্য সরকারের এই যুক্তি কতটা সঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে একটি সরকারি সার্কুলার। বৃহস্পতিবার রাজ্যের তথ্য অধিকর্তার তরফে বিভিন্ন জেলার তথ্য আধিকারিকদের কাছে পাঠানো ওই সরকারি নির্দেশিকায়, জেলা স্তরের স্থানীয় ছোট পত্র-পত্রিকাকে সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাত্কার প্রচারিত হওয়ার পর রাজ্য সরকারের `প্রকৃত উদ্দেশ্য` এবং সংবাদপত্র বাছাইয়ের `ভিত্তি` নিয়ে প্রবল সংশয় তৈরি হয়েছে জনমানসে।