Loreto College Admission Controversy: বাংলা মাধ্যমের ছাত্রদের ভর্তিতে না! লরেটো কলেজের ফতোয়া নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে, আসরে বাংলা পক্ষ
সেই বিজ্ঞপ্তি ইতমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ক্ষোভ উগরে দিয়েছে নেটপাড়া। একজন লিখেছেন, 'এমনও হয়! ভাবতে লজ্জা হয়।' আর একজন বলেন, 'আঞ্চলিক ভাষায় পড়াশোনায় পড়ুয়ারা কী দোষ করল? যে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে হল! তাদের পাঠ্যক্রমে তো দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ছিল। যা যথেষ্ট গুরুত্ব পায়।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: স্নাতকে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এবার বড় বিতর্কে জড়াল কলকাতার (Kolkata) বিখ্যাত লরেটো কলেজ (Loreto College)। ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ভর্তির জন্য বাংলা নয়, ইংরাজি মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলে তবেই আবেদন করা যাবে! কিন্তু কেন ইংরাজিকে প্রাধান্য দিচ্ছে ১১১ বছরে পা দেওয়া এই ঐতিহ্যবাহী কলেজ? সেটাও বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এমন বিবৃতি দেওয়ার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিতর্কের (Loreto College Admission Controversy) ঝড় বইতে শুরু করেছে। বঙ্গসমাজ, নেটপাড়া থেকে শুরু করে 'বাংলা পক্ষ' (Bangla Pokkho), সবাই লরেটো কলেজের এমন ফতোয়াকে একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না।
লরেটো কলেজের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলা নয় বরং ইংরেজি মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলে তবেই ভর্তির আবেদন করা যাবে। সোশাল মিডিয়ায় এনিয়ে নিন্দার ঝড় তুলেছেন অনেকে। নেটিজেনদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন লরেটো কলেজে কেন বাংলা ব্রাত্য?
স্বভাবতই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে কলেজের কর্তৃপক্ষ। এমন বিজ্ঞপ্তি কেন দেওয়া হল সেই বিষয়েও জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, 'লরেটো কলেজের পড়াশোনার মাধ্যম হল শুধুমাত্র ইংরেজি। পরীক্ষায় শুধুমাত্র ইংরেজিতে উত্তর দিতে হবে। আঞ্চলিক বাংলা এবং হিন্দি ছাড়া অন্য সব বিষয়ের জন্য আমাদের স্বনামধন্য ওপেন শেলফ লাইব্রেরিতে শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় সহায়িকা বই, পাঠ্যবই এবং জার্নাল আছে। আমাদের পরামর্শ, যে পড়ুয়ারা আঞ্চলিক ভাষার স্কুলে পড়াশোনা করেছে, তাঁরা যেন এমন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেন, যেখানে পড়াশোনার মাধ্যম হল ইংরেজি। সেই সব পড়ুয়াদের অ্যাডমিশনের জন্য বিবেচনা করা হয়নি, দ্বাদশ শ্রেণিতে যাদের পড়াশোনার মাধ্যম আঞ্চলিক ভাষায় ছিল।'
এই বিষয়টি নিয়ে ময়দানে নেমেছে বাংলা মঞ্চ। 'বাংলা পক্ষ'-এর নেতা গর্গ চট্টোপাধ্যায় (Garga Chatterjee) বলেন, "ধিক্কার! ক্ষোভে ফেটে পড় বাঙালি। কলকাতার লরেটো কলেজ বলছে, স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে যারা পড়েনি অর্থাৎ প্রকারান্তরে বাস্তবে দিল্লি বোর্ডে যারা পড়েনি, বাংলা মাধ্যমে যারা পড়েছে অর্থাৎ প্রকারান্তরে বাস্তবে যারা পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডে পড়েছে, তাদের এখানে ভর্তি হওয়া নিষিদ্ধ। বাংলা ও বাঙালির শত্রু লরেটো একটি জাতি-বিদ্বেষী সংস্থা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা দফতরকে এই বিদেশী সংস্থার অনুমোদন প্রত্যাহার করতে হবে। বাংলা পক্ষ ও বাংলা ছাত্র পক্ষ আসরে নামছে। জয় বাংলা।'
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Calcutta University) রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, "কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত নিয়ম এমন কিছুই নেই। এই ঘটনা কেন ঘটেছে সেটা এখনই বলতে পারছি না। লরেটো কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হবে।" মনে রাখতে হবে লরেটো কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "এর আগে লরেটো কলেজ কর্তৃপক্ষ এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কি না জানি না!কিন্তু যদি এমন হয় তাহলে সেটা মোটেও কাম্য নয়। কারণ আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। সেটাও মনে রাখতে হবে।"
সেই বিজ্ঞপ্তি ইতমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ক্ষোভ উগরে দিয়েছে নেটপাড়া। একজন লিখেছেন, 'এমনও হয়! ভাবতে লজ্জা হয়।' আর একজন বলেন, 'আঞ্চলিক ভাষায় পড়াশোনায় পড়ুয়ারা কী দোষ করল? যে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে হল! তাদের পাঠ্যক্রমে তো দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ছিল। যা যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। যে ছাত্রছাত্রী নিজেদের মাতৃভাষাকে প্রথম ভাষা হিসেবে রেখেছে, সে কলেজের ইংরেজি লেকচার অনুসরণ করতে পারবে না, এমন ভাবার ধৃষ্টতা কলেজগুলির হয় কীভাবে?'
যদিও লরেটো কলেজের ওয়েবসাইটে দেখা গিয়েছে, যে 'এলজিবিটি' বিভাগ আছে, সেখানে সেই বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে। সেই বিভাগের শুরুতেই বলা হয়েছে যে 'সেইসব পড়ুয়াদের অ্যাডমিশনের জন্য বিবেচনা করা হয়নি, দ্বাদশ শ্রেণিতে যাদের পড়াশোনার মাধ্যম আঞ্চলিক ভাষায় ছিল।'