হাতুড়ে ডাক্তারের কুকীর্তি ফাঁস `২৪ ঘণ্টা`য়
পাশ করেছেন হোমিওপ্যাথি। ওষুধ দেন অ্যালোপ্যাথি। শুধু তাই নয়, নিজেকে পরিচয় দেন `ডেন্টাল স্পেশালিস্ট` হিসেবে` সুশান্ত বেরা। রাজারহাট, নারায়ণপুর, বিষ্ণুপুর এলাকায় দাঁতের চিকিত্সা করছেন বছরের পর বছর। ধরা পড়েই চম্পট দিলেন ডাক্তার।
পাশ করেছেন হোমিওপ্যাথি। ওষুধ দেন অ্যালোপ্যাথি। শুধু তাই নয়, নিজেকে পরিচয় দেন `ডেন্টাল স্পেশালিস্ট` হিসেবে` সুশান্ত বেরা। রাজারহাট, নারায়ণপুর, বিষ্ণুপুর এলাকায় দাঁতের চিকিত্সা করছেন বছরের পর বছর। ধরা পড়েই চম্পট দিলেন ডাক্তার।
গোপনে অভিযোগ পেয়েই রাজারহাটের দশদ্রোণে সুশান্তবাবুর চেম্বারে রোগী সেজে হাজির হয় `২৪ ঘণ্টা`র প্রতিনিধি। সম্পূর্ণ সুস্থ আমাদের প্রতিনিধিকে বেশ কিছুক্ষণ পরীক্ষা করলেন বললেন, ``আক্কেল দাঁতের সমস্যা রয়েছে``। আবার ৫ মিনিট পরেই বক্তব্য বদলে গেল। এবার বললেন, `` আক্কেল দাঁত নয়, গোঁড়ায় ফুটো হয়ে গেছে।`` প্রেসক্রিপশনে লিখলেন বেশ কয়েকটি ট্যাবলেটের নাম। প্রেসক্রিপশন হাতে পেয়ে দেখা গেল, সব ওষুধই অ্যালোপ্যাথি। রয়েছে একগুচ্ছ কড়া ডোজের ব্যাথার ওষুধ (পেইন কিলার) ও অ্যান্টিবায়োটিক। করাতে হবে এক্স-রেও। আর প্রেসক্রিপশনের নিচে লেখা সুশান্ত বেরা, ডিএইচএমএস। অর্থাত্ ডিপ্লোমা এন হোমিওপ্যাথি মেডিসিন এন্ড সার্জারি। মানিকতলার প্রতাপ চন্দ্র মেমোরিয়াল কলেজ থেকে হোমিওপ্যাথিতে ডিপ্লোমা করেছেন সুশান্ত বেরা। আর সেই ডিগ্রি ভাঙিয়েই চলছে দাঁতের ডাক্তারি।
একজন হোমিওপ্যাথি চিকিত্সক কি অ্যালোপ্যাথির ওষুধ দিতে পারেন? তাঁর পক্ষে কি দাঁতের চিকিত্সা করা সম্ভব? সুশান্ত বেরার কলেজ পিসিএম কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ জানালেন, হোমিওপ্যাথের ডাক্তার হলে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ লেখার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। মেডিসিনে ফার্মাকোলজি আমাদের এখানে পড়ানো হয় না। অতএব সেই সম্বন্ধে তাঁদের ধারণা থাকার কথাও নয়। তাই এটা সম্পূর্ণ বেআইনী। একই বক্তব্য পাওয়া গেল রাজ্য হোমিওপ্যাথি মেডিসিন কাউন্সিল থেকেও। হোমিওপ্যাথি মেডিসিন কাউন্সিল-এর কর্তৃপক্ষ জানান, একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার কখনই দাঁতের চিকিত্সা করার যোগ্য নন। এধরনের কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমবিবিএস ডিগ্রিধারী কোনও ব্যক্তিও ডেন্টাল প্র্যাকটিস করতে পারেন না বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ।
এখানেই শেষ নয়। রাজ্য হোমিওপ্যাথি মেডিসিন কাউন্সিল ও জাতীয় ডেন্টাল কাউন্সিলের থেকে যাবতীয় তথ্য প্রমান জোগারের পর আমরা ফের হাজির হই রাজারহাটের দশদ্রোণ এলাকায় গীতা মেডিক্যাল হল-এ। সুশান্ত বেরার চেম্বারে। ক্যামেরা হাতে আমাদের আসতে দেখেই চম্পট দিচ্ছিলেন ভুয়ো দাঁতের ডাক্তার সুশান্ত বেরা। কিন্তু হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় তা আর হল না। প্রথমে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকারের চেষ্টা করলেও, এলাকাবাসীর জেরায় শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়েন এই ভুয়ো ডাক্তার। স্বীকার করে নেন নিজের কুকীর্তির কথা। ধরা পড়ে ভুয়ো ডাক্তার সুশান্ত বেরার বক্তব্য, ``এরকম তো আমাদের দেশে অনেক চলছে। বলতে পারেন ডেন্টার উপর ভুয়ো প্র্যাকটিস করছি।`` আপনার হোমিওপ্যাথির রেজিস্ট্র্যাশন নম্বর কত? উত্তরে জানালেন, ``আমার এই মুহূর্তে ঠিক খেয়াল নেই।`` যে ওষুধের দোকানে চেম্বার খুলে বসেছিলেন তিনি, সেই দোকানের লোকজন নাকি জানেনই না তাঁর প্রকৃত পরিচয়। সুশান্ত বেরার প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে একই রকম অন্ধকারে এলাকার বাসিন্দারাও। ভুয়ো ডাক্তারকে বের করে চেম্বারে তালা মেরে দেন এলাকাবাসী। খবর পাঠানো হয় বাগুইআটি থানায়।
কিন্তু বাগুইআটি থানার পুলিস এসে পৌঁছনোর আগেই ঘটে যায় বিপত্তি। অনেকক্ষণ থেকেই সুযোগ খুঁজছিলেন সুশান্ত বেরা। স্থানীয় মানুষ অসাবধান হতেই দ্রুত পায়ে চলন্ত বাসে উঠে হাওয়া ভুয়ো দাঁতের ডাক্তার। উত্তর ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর এবং নারায়ণপুর এলাকার আরও দুটি জায়গায় প্র্যাকটিস করেন সুশান্ত বেরা। সেখানেও এই হাতুড়ে ডাক্তারের বিষয়ে খবর পাঠানো হয়েছে।