এ ভাবে দুকূল বাঁচিয়ে বেশিদিন চলা যাবে না
কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এঁরা সব পক্ষ থেকেই কী সুন্দর একটা দূরত্ব রক্ষা করেছেন!
কৌশিক সেন, নাট্যকার
দেশ জুড়ে চলছে #IndiaAgainstPropaganda নিয়ে বিতর্ক। ভারতের তরফে টুইটার ট্রেন্ডিং-এর প্রথম সুরটি বেঁধে দিলেন সচিন তেন্ডুলকার। একই বিষয়ে টুইট করেছেন লতা মঙ্গেশকরও। বুধবারই রিহানা, গ্রেটা থানবার্গের টুইটের বিরোধিতা করে কড়া সুরে টুইট করেছেন সচিন। ফলে এ নিয়ে একটা বিতর্ক দানা বেঁধেছে-- কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ কোনও বিষয়ে বহির্দেশের কেউ কিছু বলতে পারেন কি না।
এই বিতর্কে প্রথমেই আমি বলব, তা হলে যখন আমেরিকাতে গিয়ে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বলে এসেছিলেন, 'অবকিবার ট্রাম্প সরকার' সেটাও তো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা গলানোই ছিল! তখন এই বিখ্যাত মানুষদের কিছু মনে হয়নি কেন?
যখন কৃষকদের আন্দোলনটা চলছিল, ওইরকম কনকনে ঠান্ডায়, ওই রকম শান্তিপূর্ণ ভাবে তখন কেউ কিছু বলেননি কেন? তারও আগে সিএএ নিয়ে, দিল্লি-কাণ্ড বা পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে গোটা ভারত জুড়ে যখন সাড়া পড়ে গিয়েছে, তখন? দেশে অতীতে যখন বড় কোনও আন্দোলন হয়েছে তখনও এঁদের কারও কোনও টুইট আমরা দেখিনি।
দেখিনি কারণ, এঁরা আসলে খুব সাবধানি। সাধারণত এঁরা কোনও বিষয়েই কথা বলেন না। বলতে চান না। বললেও স্পষ্ট করে বলেন না। যেমন এক্ষেত্রেও বলেননি। কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এঁরা কী সুন্দর একটা দূরত্ব রক্ষা করেছেন! সরকারের পক্ষেও বলা হল, কৃষকদের চটানো হল না, আবার বিদেশিদের বার্তা দেওয়াও হল। সরকার যে কৃষকদের 'অ্যান্টি ন্যাশনাল' বলে দাগিয়ে দিচ্ছে, এঁরা কিন্তু সেভাবেও বলছেন না। বরং বলছেন, কৃষকেরা আমাদের সম্পদ, মোদী সরকার তো চেষ্টা করছে, এতে বাইরের লোকের নাক গলানো উচিত নয়। ফলে, কোথাও তাঁরা হয়তো মেনে নিচ্ছেন যে, দেশের সম্পদ কৃষকদের এই আন্দোলনের একটা যৌক্তিকতা আছে। এটাকে অগ্রাহ্য করা যায় না।
এই বিতর্কে অনেকেই মতামত দিয়েছেন। কঙ্গনা রানাউত কথা বলেছেন। তা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, কঙ্গনা গবেষণার বস্তু। ওঁর মন্তব্যগুলি খুবই মেকি, উগ্র। ওঁর উগ্রতায় আরএসএস-ও বোধ হয় লজ্জা পাবে। তাই আমি ওঁর কথা নিয়ে কিছু বলছি না। আমি বরং বাকিদের প্রসঙ্গে কথা বলি।
আরও পড়ুন: ট্রাক্টরওয়ালা কৃষক না কি ভূমিহীন খেতমজুর, কাদের কথা ভাববে দেশ
অজয় দেবগণ বা অক্ষয়কুমারও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। মোদীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আমি বলব, তাঁরা বাধ্য় হয়ে মোদীর পক্ষে বলছেন। কোথাও এই বাধ্য থাকার বোধটা কাজ করছে। তবে তাঁরা কৃষকদের সঙ্গেও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হওয়ার সাহস দেখাতে পারছেন না। সরকার কৃষকদের বিষয়ে যে মনোভাব দেখাচ্ছে, সেটাকেও পুরোপুরি সমর্থন করতে পারছেন না। সব দিক বজায় রেখে চলছেন।
তবে, এই যে সব বিষয়ে গা বাঁচিয়ে থাকা, এটা একটা সময়ে শেষ হবেই। যাঁরা এই ভাবে দুকূল রক্ষা করে মন্তব্য করছেন তাঁরা খুব বেশিদিন আর এরকম 'সেফ' থাকতে পারবেন না। যে সরকারের পাল্লায় আমরা বা তাঁরা পড়েছেন, তাতে 'সেফ' থাকাটা কঠিন হবে। আমরা যতই উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে সব কিছু থেকে নিজেদের নিরাপদ রেখে চলতে চেষ্টা করি না কেন, এই সরকার আমাদের এভাবে নিরাপদ থাকতে দেবে না। ফলে এটার একটা শেষ হবেই।
আরও পড়ুন: Farmers' Protest : 'বিদেশি অপপ্রচারের' বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, সরব বলিউড তারকারা