আজ ফের যাদবপুরে আচার্য জগদীপ ধনখড়, যোগ দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট মিটিংয়ে
বৈঠকের শেষে আচার্য জগদীপ ধনখড়কে একটি স্মারকলিপি জমা দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তাঁদের আর্জি, সেদিন যেভাবে ইউনিয়ন রুমে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল, আচার্য সেই ঘটনার প্রতিবাদ করুন।
নিজস্ব প্রতিবেদন : বাবুল সুপ্রিয় কাণ্ডের পর আজ ফের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পা রাখলেন আচার্য জগদীপ ধনখড়। সামনেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসব। সমাবর্তনে কাদের ডিলিট-ডিএসসি দেওয়া হবে, তা নিয়েই আজ কোর্ট মিটিং রয়েছে যাদবপুরে। সেই মিটিংয়ে যোগ দিতেই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন আচার্য ধনখড়। রাজ্যপালের আগমন উপলক্ষে আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের তরফেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে আজ সাদা পোশাকে পুলিসও ঘুরছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তারা পুলিশ ডাকছে না। কিন্তু পুলিস নিজে থেকে কিছু করতে চাইলে করতে পারে। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা পাওয়ার পর এই প্রথম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এলেন রাজ্যপাল। তার ২ নম্বর গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে রাজ্যপালের কনভয়। অরবিন্দ ভবনে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।
অন্যদিকে জানা গিয়েছে, বৈঠকের শেষে আচার্য জগদীপ ধনখড়কে একটি স্মারকলিপি জমা দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তাঁদের আর্জি, সেদিন যেভাবে ইউনিয়ন রুমে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল, আচার্য সেই ঘটনার প্রতিবাদ করুন। সেদিন ইউজি আর্টসের ইউনিয়ন রুমে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছিল এবিভিপি-র বিরুদ্ধে।
রাজ্য-রাজ্যপালের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই। এবিভিপি আয়োজিত নবীনবরণ উৎসবে যোগ দিতে এসে পড়ুয়াদের হাতে ঘেরাও হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর চুল টেনে, জামা ছিঁড়ে, তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে। ধাক্কাধাক্কিতে পড়েও যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। পড়ুয়াদের ঘেরাওয়ের হাত থেকে বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধারে আসেন উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য। কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন। শেষমেশ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ুয়াদের হাতেই ঘেরাও হয়ে থাকেন বাবুল সুপ্রিয়।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ঘেরাও হয়ে থাকার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায় সব মহলে। উপাচার্যকে ফোন করেন রাজ্যপাল। দরকারে পুলিসি সাহায্য নেওয়ার কথা বলেন তিনি। কিন্তু রাজ্যপালের পুলিসি সাহায্যের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন উপাচার্য। ক্যাম্পাসে পুলিস ডাকলে পরিস্থিতি আরও আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে বলে জানান তিনি। উপাচার্য রাজ্যপালকে বলেন, "আপনি পদত্যাগ করতে বলুন। পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিস ঢুকতে দেব না।" এরপরই মুখ্যসচিবকে ফোন করেন রাজ্যপাল। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু তারপরও ক্যাম্পাসের ভিতর বাবুল সুপ্রিয় ঘেরাও হয়ে থাকায় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল ও নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। শেষমেশ তিনি নিজে এসে পড়ুুয়াদের ঘেরাটোপ থেকে বাবুলকে উদ্ধার করেন। এদিকে, সেদিন রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পা রাখতেই তাঁকেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। পরে বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরনোর সময়ও দীর্ঘক্ষণ পড়ুুুয়াদের হাতে ঘেরাও হয়ে থাকে রাজ্যপালের গাড়িও। শেষে অন্য গেট দিয়ে রাজ্যপালকে কনভয়কে বের করে দেয় পুলিস।
আরও পড়ুন, বাংলা টপ অব দ্য টপ, আগামী বছর বিশ্বসেরা হবে, হিংসা করলে হবে না, দিলীপকে মমতা
এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উদ্ধার রাজ্যপালের যাদবপুরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে রাজ্যপালের আচরণকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগ খারিজ করে পাল্টা রাজভবন থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তাই পড়ুয়াদের অভিভাবক হিসেবেই যাদবপুরে গিয়েছিলেন তিনি।