নির্মম যৌন অত্যাচারের পরেও সিস্টারের গলায় ক্ষমার সুর, অধরা আততায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পথে কলকাতা

ডাকাতি করতে এসে তাঁর ৭১ বছরের এক নানের উপর নির্মম যৌন অত্যাচার চালিয়েছিল কিছু আততায়ী। পুলিস এখনও করতে ৮জনকে আটক করলেও সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে আততায়ীদের কোনও মিলই নেই। যদিও পুলিস জানিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে আটক করা ব্যক্তিদের।  

Updated By: Mar 16, 2015, 02:35 PM IST
নির্মম যৌন অত্যাচারের পরেও সিস্টারের গলায় ক্ষমার সুর, অধরা আততায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পথে কলকাতা

ওয়েব ডেস্ক: ডাকাতি করতে এসে তাঁর ৭১ বছরের এক নানের উপর নির্মম যৌন অত্যাচার চালিয়েছিল কিছু আততায়ী। পুলিস এখনও করতে ৮জনকে আটক করলেও সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে আততায়ীদের কোনও মিলই নেই। যদিও পুলিস জানিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে আটক করা ব্যক্তিদের।  

নিরাপত্তার কোনও অনুভূতিই আর তাঁর নেই। কিন্তু তাঁর যন্ত্রণা কাতর অশক্ত শরীরের কাঁপা গলায় তাঁর ধর্ষকদের প্রতি কোনও ক্ষোভ, ঘৃণা নেই। নির্মম অত্যাচারের ৩৬ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও এখনও অধরা মূল অভিযুক্তরা।  

রাণাঘাটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ৭১ বছর বয়সী সন্ন্যাসিনী জানিয়েছেন ''আমার হৃদয় ভেঙে গেছে।'' রবিবার গোটা দিনটা যতটুকু কথা বলতে পেরেছেন ততবার তিনি শুধু স্কুল ও স্কুল পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছেন। যখন তিনি বলেছেন তার উপর নির্মম যৌন অত্যাচারকরা ধর্ষকদের মনে মনে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন তখন চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তাঁকে দেখতে আশা শুভানুধ্যায়ীরা। ওই স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবক জানিয়েছেন ''ওনার বিশাল হৃদয়। তাই উনি এই ধরণের কথা বলতে পারছেন। কিন্তু আমরা এই জঘন্যতম ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।''

আজ এই গণধর্ষণের প্রতিবাদ ও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে পথে নামছে শহর কলকাতাও।

শুক্রবার ভোররাতের ঘটনার আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি কনভেন্ট অব জিসাস অ্যান্ড মেরির পড়ুয়ারা।  ভয়াবহ ঘটনার তিনদিন বাদে আজ খুলল স্কুল। আতঙ্কের ঘোর কাটিয়ে আজ সকাল থেকেই ক্লাসে যোগ দিয়েছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা।

স্কুলের সিনিয়র সিস্টারকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে গতকালও পথে নামে তারা। স্কুলের কাছেই মিছিল করে দোষীদের শাস্তির দাবিও জানায় পড়ুয়ারা। সন্ধেয় মিছিল হয় স্কুল সংলগ্ন চৌরঙ্গী এলাকায়। স্কুলের ছাত্রীদের পাশাপাশি সেই মিছিলে পা মেলান অসংখ্য সাধারণ মানুষও।

ঘটনার পর তিনদিন কেটে গেলেও এখনও অধরা অভিযুক্তরা। আটজনকে আটক করা হলেও, তাদের জেরা করে বিশেষ কোনও সূত্র মেলেনি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চারজনের ছবি পাওয়া গেছে। তবে বাকিদের ছবি না মেলায় তৈরি করা হচ্ছে স্কেচ। এতোবড় ঘটনার পর গতকাল রাতে ফের ডাকাতির ঘটনা ঘটে নদিয়ায়। গোটা ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে জেলা পুলিস ও সিআইডি তদন্ত নিয়ে। ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। আজ ঘটনাস্থলে আসতে পারেন রাজ্যপুলিসের ডিজি।

সিসিটিভির ফুটেজই বলে দিচ্ছে, রাত দেড়টা থেকে টানা তিন,সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে অবাধে স্কুলে দাপিয়ে বেড়িয়েছে দুষ্কৃতীরা। গোয়েন্দাদের ধারনা, চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন পাঁচিল টপকেই শুক্রবার রাতে স্কুলে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। ওই পথেই তারা বেড়িয়েও যায়। পুলিস জানাচ্ছে, রাতে স্কুলের বাইরে জাতীয় সড়কের ওপর প্রতিদিনই থাকে পুলিসি টহল। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে টহলরত পুলিস কর্মীরা কেন শুক্রবার রাতে স্কুলের ভিতর কিছু একটা যে ঘটছে, সে বিষয়ে টের পেল না? অস্বস্তিতে পুলিস। দুষ্কৃতীদের ধরতে সংবাদমাধ্যমের সাহায্য চেয়েছেন জেলার এসপি।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের হাতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসছে।  

কয়েক মাস আগে স্কুলের প্রিন্সিপালের দায়িত্বে আসেন মেরি পল। তিনি নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ নেন। স্কুলে সিসিটিভি বসে। সরানো হয় স্কুলের নিরাপত্তা কর্মী স্বপনকে। এরপর বেশ কয়েকবার স্কুলে এসেছিল স্বপন। শুক্রবার রাতের ঘটনায়, তার কোনও ভূমিকা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিস।

স্কুলে কয়েকদিন আগে মেরামতির কাজ হয়। এই চারজনের মধ্যে কেউ নির্মাণকর্মী কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কথা বলছেন স্কুলের কর্মীদের সঙ্গেও। আপাতত এই দুটো সূত্রের ওপর নির্ভর করেই এগোতে চাইছে গোয়েন্দারা।

 

.