মূর্তি ভাঙার পর জনমানসের আবেগ থেকে নজর ঘোরাতে এটা মোদী-শাহের নির্দেশ: মমতা

শেষ দফার নির্বাচনের আগে এদিন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টচার্যকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

Updated By: May 15, 2019, 10:16 PM IST
মূর্তি ভাঙার পর জনমানসের আবেগ থেকে নজর ঘোরাতে এটা মোদী-শাহের নির্দেশ: মমতা

নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দেওয়ার পর গর্জে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাতে সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ''এটা আদতে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের নির্দেশ। এটা অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত। বাংলাকে অপমান করেছেন মোদী। বাংলার মানুষ এমন অপমান মেনে নেবেন না''। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় যে আবেগ তৈরি হয়েছে, তা থেকে নজর ঘোরাতে এমন সিদ্ধান্ত বলে দাবি করলেন মমতা।                       

মমতার কথায়,''এটা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের নির্দেশ। নির্বাচন কমিশন রাজ্যের বাহিনীকে অন্ধকারে রেখে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে নির্বাচন করাচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকদের ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথম থেকে এটা বলে আসছি। সকালে অমিত শাহ সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনকে থ্রেট করেছিলেন, এটা তারই ফল। ইচ্ছেমতো অর্ডার দেবে। বাংলা জম্মু-কাশ্মীর নয়, ত্রিপুরা নয়, বাংলা কিন্তু বাংলাই''। 

গোটা ঘটনার জন্য বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন নেত্রী। তাঁর কথায়,''কাল অমিত শাহ এলেন, নিজে গন্ডগোল করলেন, হামলা করালেন। শুধু হামলাই করেননি। যে বিদ্যাসাগরের লেখা অ, আ, ক, খ শিখি। সেই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পর মোদীবাবু বাংলায় এসে কোনও দুঃখপ্রকাশ করেননি। এটা আশাও করি না। বাংলার মনিষীদের অপমান করেছে''।

নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ বাংলার অপমান করেছেন বলেও দাবি করেন মমতা। বলেন, ''বাংলার মানুষ এই জিনিস বরদাস্ত করবে না। অন্যায় করল বিজেপির গুন্ডারা। গেরুয়া ফেট্টি পরে দাঙ্গার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। বাবরির পর দাঙ্গার এতটা ভয়াবহ রূপ দেখিনি। মানুষকে শান্ত রেখেছি।আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নেই। কাল মিছিলে যে হিংসা হয়েছে সেটা অমিত শাহের জন্য। গেরুয়া পরে ভাঙচুরের প্রমাণ আছে আপনার কাছে। সাহস থাকে এত মিছিল করেছি গন্ডগোল হয়নি। কেন অমিত শাহকে শোকজ করলেন না। কেন বাংলাকে অপমান করলেন মোদীর কথায়?'' 

আরও পড়ুন- নিজের অফিসই ভেঙে দিয়েছিলাম, দিদি এত কামিয়েছেন তাও স্বভাব যাচ্ছে না: মোদী

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে বলেও মনে করেন মমতা। তাঁর কথায়,''মোদী জানে আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করছি। মোদী আমাকে ভয় পাচ্ছে। বাংলার মানুষকে ভয় পাচ্ছে। আজও বলছে আমি ৩০০ পাব। মাথা খারাপ না হলে কেউ বলতে পারে না। সবটাই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে করিয়ে নেবেন? একটার পর একটা ঘটনা ঘটেছে কখনও বলিনি। সিইও সুদীপ জৈন চিঠি দিয়ে পুলিসকে বলে দিয়েছিল, সব কিছু করে দিতে হবে। কলকাতা পুলিসের কাছে চিঠি এসেছিল। রাজীব কুমারের উপরে এত রাগ কেন? হাওয়ালার টাকা ধরছে বলে? মুকুল রায়, চম্বলের ডাকাত, এমনকি হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ভয় পাচ্ছেন। আইপিএস, আইএএসরা রাজ্য সরকারের অধীনস্থ। এমন নির্বাচন কমিশন জীবনে দেখেনি। বাংলার মানুষের জন্য পঞ্চাশটা শো-কজ খেতে রাজি। আমার কণ্ঠরোধ করা যাবে না।

মমতার দাবি, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় জনমানসে একটা আবেগ তৈরি হয়েছে। তা থেকে নজর ঘোরাতে এই সিদ্ধান্ত। এর পাশাপাশি কেন আজ প্রচার বন্ধ করা হল না? সেই প্রশ্নও তোলেন মমতা। তাঁর ব্যাখ্যা, আজ সন্ধে থেকে বন্ধ করে দিতে পারতেন। আগামিকাল নরেন্দ্র মোদীর দুটো সভা রয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর প্রচার শেষ হলে অন্যদেরও শেষ হয়ে যাবে। এটা অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত। যতগুলো অভিযোগ করেছি একটাও ব্যবস্থা নেয়নি।  অবসরপ্রাপ্ত অফিসার আরকে মিত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করছেন। নির্বাচন কমিশন কী মনে করে? নরেন্দ্র মোদীকে এভাবে জেতাতে পারবেন? বাংলার মানুষকে বলব জবাব দিতে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি যারা ভাঙল তাদের পুরষ্কৃত করলেন। বাংলাকে বদনাম করছেন।''

শেষ দফার নির্বাচনের আগে এদিন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টচার্যকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে সরানো হয়েছে কলকাতার প্রাক্তন পুলিস কমিশনার রাজীব কুমারকেও। নির্বাচনের আগে তাঁকে এডিজি সিআইডি পদে বসিয়েছিল রাজ্য সরকার। এরইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ৯টি লোকসভা কেন্দ্র-দমদম, বারাসত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায় আগামিকাল অর্থাত্ বৃহস্পতিবার রাত ১০টার আর প্রচার করা যাবে না। নির্বাচনী নিয়মে শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রচার করা যেত। কিন্তু বাংলার পরিস্থিতি দেখে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিল কমিশন।    

আরও পড়ুন- আমার একটা কুৎসিত ছবি আঁকুন, প্রধানমন্ত্রীর পদে ফেরার পর উপহার দেবেন: মোদী

.