আলির পথেই চলে গেলেন বাঙালির ‘বাহুবলী’ মনোহর আইচ

Updated By: Jun 5, 2016, 04:44 PM IST
আলির পথেই চলে গেলেন বাঙালির ‘বাহুবলী’ মনোহর আইচ

স্বরূপ দত্ত

আমার ছেলেবেলায় ঠাকুমার মুখে কথাটা শুনেছি। পাড়ায় কেউ মারা গেলে বলতেন, এবার ঠিক আরও একজন মারা যাবে। তারপর আরও একজন। তিনজন না মারা গেলে নাকি, যমের শান্তি হয় না।আজ অনেক বড় হয়ে গিয়েছি।ঠাকুমার সেই সংস্কারকে এখন কুসংস্কার বলার বা বোঝার মতো বোদ্ধা হয়ে গিয়েছি।

এখন ইন্টারনেট আর গুগলের দুনিয়ায় ঠাকুমার আমলের সেই বিরাট পৃথিবীটা বড্ড ছোট্ট একটা পাড়া হয়ে গিয়েছে। এখন আমরা শিখে গিয়েছি কথাটা, ‘বসুধাইভা কুটুমবকম’! যার সোজা মানে, গোটা পৃথিবীটাই আমার পরিবার। তার মানে পাড়াও তো বটে।গতকাল সকালেই তো আমাদের ‘বিশ্ব পাড়ার’ পরিবারের বড়দা মহম্মদ আলি চলে গেলেন। মন, একবার রাতে বলেছিল, তাহলে কি আরও একটা নক্ষত্রপতন শোনা শুধু সময়ের অপেক্ষা? রবিবার দুপুর-দুপুরেই খবরটা পেয়ে গেলাম। অ্যারিজোনার থেকে বাগুইআটি আর কতটাই বা দূর! মনোহর আইচ আর নেই! ভদ্রলোক বেঁচে থাকতে গিয়েছিলাম তাঁর বাড়িতে, বেশ কয়েকবার। অনেক কথা হয়েছে। আজ তাঁর চলে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরেই মনে থাকা স্মৃতিগুলো শেয়ার করলাম আপনাদের সঙ্গে।

১) শেষবার যখন তাঁর বাড়িতে গিয়েছি, তখন বয়স ১০১ বছর! নীল জিন্স, লাল টি শার্ট! আজকালকার জিম করা ছেলেদের মতো বাহুর ওখানটায় খানিক গুটিয়ে বেশি করে পেশি দেখানো! স্টাইল এবং স্মার্টনেসের চূড়ান্ত!

২) দাঁতগুলো ১০১ বছরে কী আর থাকে! তবু, মাছ খাওয়া থামেনি তাঁর। বড় মেয়ের হাতে রাঁধা মাছের ঝোল ছাড়া ভাত হজম হতো না ১০১ বছর বয়সেও!

৩) বাড়িতে গিয়ে কথা বলে শুনেছি শেষ জীবনটায় বড় কষ্ট পেতেন একসময়কার বিশ্বশ্রী! বড় মেয়ের স্বামী দীর্ঘদিন ধরে বিছানায়।উঠতে পারতেন না। মনোহর আইচের মেয়ে দিব্যি স্বামী আর বাবাকে বছরের পর বছর আতুতুতু করে রেখেছেন। বিশ্বশ্রীর মেয়ের অহংবোধ জীবনে ভুলব না। পুরুষ আমিও। বাবা কীভাবে মেয়ের কাছে গর্বের কোহিনূর হতে পারে জেনেছিলাম ওই বাড়িটা থেকেই।

৪) ওই ১০১ বছর বয়সেও বিছানায় বসে একবার নিজের তলপেটটা অনাবৃত করতেন।অহং নিয়ে দেখাতেন মনোহর আইচ। বলতেন, জিমে গিয়ে যেটা হয় ওটা ফাঁকা কলসি। আমার কলসিতে অনেক জল, অনেক ভাতের ফ্যান রয়েছে। তাই তো সেঞ্চুরি করে ব্যাট তুলে ফেললাম।

৫)দুনিয়ার হিসেবে বুড়ো বয়সেও তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ আসতো।মেয়ের জোরাজুরিতেও মনোহর আইচ ছিলেন নাছোড়। বিশ্বশ্রীর সেই অহংটা উপভোগ করতেন। নিজে আগে থেকে সেজেগুজে রেডি হয়ে থাকতেন শিশুদের মতো, কখন ওরা নিতে আসবে!

আজ মানুষটা চলে গেলেন। আমি কেন, অনেককেই আশীর্বাদ করতেন, শতায়ু হও। এই আশীর্বাদ হয়তো এ জীবনে আর কেউ কেউ করেছেন আমায়, আপনাকে, আমাদেরকে। কিন্তু এই আশীর্বাদ করার সবথেকে যোগ্য মানুষটাই তো চলে গেলেন আলির পাড়ায়! বাঙালির পৌরুষ আজ শেষ! বাঙালির ঘরে সলমন খান থেকে সোয়ারজেনেগারের আদুল গায়ের ছবি লাগানো থাকবে দেওয়ালে। পার্থক্য একটাই। বিশ্বশ্রী মনোহর আইচ থাকবেন মনের দেওয়ালে। ওই হাসিমুখে, আদুল গায়ে গর্বের প্রতীক হয়ে। স্বর্গেও শতায়ু থাকুন বাঙালির মনোহর......

.