অষ্টমী

Updated By: Oct 21, 2015, 10:25 AM IST

অষ্টমী

সৌম্য সিংহ

সারাদিন হুটোপাটি, নানা রকম খেলা, ছোট ভাইটাকে কোলে নিয়ে এদিক সেদিক—সবটাই স্বাভাবিক। শুধুমাত্র স্বাভাবিক নয় অষ্টমীর মন। ঢাকের শব্দটা যখন জোরালো হয়, তখনই একরাশ বিষণ্ণতা ভিড় করে অষ্টমীর মনে।

অষ্টমীর ঠিকানা মুক্তাঙ্গনের ফুট। সেখানেই দশ বাই ছয় ফুট ঘিরে অষ্টমীর মায়ের সাজানো সংসার। দারিদ্র নিত্যদিন, প্রতিদিন। তবু তা বুঝতে পারে না অষ্টমী আর তার বোন-ভাই। অভাবেও হাসিমুখে ওরা সকলেই।      

বছর দশেকের মেয়েটা দুগ্গা হতে চায়। স্বপ্ন দেখে, দশ হাত-অসুর বধ- সিংহাসন—দুর্গা পুজোয় যা যা হয় আর কি! বাতাসে যখন হিমেল পরশ, পুরনো বাড়ির গাড়ি বারান্দায় অযত্নের শিউলি গাছটা যখন ভরে যায় ফুলে—তখনই অষ্টমীদের রুটিনে দুগ্গা দুগ্গা খেলাটা শুরু হয়। অনেকবার দুগ্গা হয়েছে অষ্টমী। অষ্টমী দুগ্গা, কালী আর পুতুল লক্ষ্মী-সরস্বতী, কার্তিক আর গণেশ কার্তিক-গণেশের ভূমিকায়, কুড়িয়ে পাওয়া ছেঁড়া টেডিটা অসুর, সিংহ হল কালু।

এই দুগ্গা দুগ্গা খেলাটাই যত নষ্টের গোড়া। একরাশ অলীক স্বপ্ন জমাট বাঁধিয়েছে অষ্টমীর মনে—লাল রঙা জরির শাড়ি, নাকের নথ, মাথার টিকলি, হাতের চুরি, জমকালো কানের দুল। তখন স্বর্গ বাস—স্ট্রিট লাইটের আলো, রাতঘুমে হঠাত্ চলে আসা বৃষ্টি, বাস স্ট্যান্ডের অপেক্ষমান যাত্রীদের কাছে হাত পাতা—এই নরক তো তার জন্য নয়। সে তো মহামায়া!   

মনের মধ্যে যতবার এই চিন্তা ভিড় করেছে, ততবারই চশমার দোকানে আয়না-কাচে নিজেকে দেখেছে অষ্টমী— রঙটাই যা দুগ্গার মত নয়, বাদ বাকি টানা চোখ, পাতলা ঠোঁট, লম্বা চুল—হুবহু এক। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পারুল মাসির লাল ওড়নাটা নিয়ে দৌড়ে গিয়েছে সে। শাড়ির মত করে গায়ে জড়িয়ে আবার দেখেছে নিজেকে। হ্যাঁ, কোনও ভুল নেই।

আজও সে রকমই একটা অষ্টমী। আজও মনটা ভাল নেই অষ্টমীর। স্বপ্ন মেঘের হাতছানি। পড়ন্ত বিকেলে তাই নির্মীয়মান শপিং মলের ছাদে ছোট্ট মেয়েটি। লুকিয়ে এনেছে মায়ের লাল শাড়িটা। কোনও মতে সেটা গায়ে জড়িয়েই দৌড়ে গিয়েছে নেড়া ছাদের একপাশে। তারপর মা দুর্গার পোজ।

আকাশের কাছাকাছি মেয়েটি দাঁড়িয়ে। দ্রুত হাওয়ায় উড়ছে ওর সারা শরীর। শহর তখন মগ্ন তার জাঁকে। অষ্টমীর রাতে তো সবাই সাজে!

.