'মা তাঁর সন্তানকে পাঠালেন বেশ্যাপল্লিতে', গণেশকে লাড্ডু খাওয়াতে হুড়োহুড়ি সোনাগাছিতে

'মা তাঁর সন্তানকে পাঠালেন বেশ্যাপল্লিতে'! হ্যাঁ। আগে পুত্রের পুজো হবে, তারপর মা স্বয়ং আসবেন যৌনপল্লিতে, পুজো হবে তাঁরও। গণেশ বন্দনা দিয়েই উৎসবের মরশুমের শুভারম্ভ করল কলকাতার ১৮ নং ওয়ার্ডের গৌরি শঙ্কর লেন। এই নামে অবশ্য  গুটি কয়েকজনই চেনেন কলকাতার ১৮ নং ওয়ার্ডকে। লোকমুখে এই অঞ্চল দর্জিপাড়া নামেই বেশি পরিচিত। আর সার্বজনীন নাম 'সোনাগাছি'। ছোট ছোট জামা কাপড় পরে এক একটা শরীর সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে এই পাড়ায়। কিছুটা শপিং মলের মতই! পছন্দের 'পণ্য' নিজের গায়ে চাপিয়ে নেওয়া যায় অর্থের বিনিময়ে। এখানেও তেমনটা হয়, এক্সট্রা পাওয়ানা, নিজেও পণ্যের ওপর চেপে পড়তে পারেন গ্রাহক। এককথায় দেহব্যবসার শপিং মল! 

Updated By: Sep 6, 2016, 09:25 PM IST
'মা তাঁর সন্তানকে পাঠালেন বেশ্যাপল্লিতে', গণেশকে লাড্ডু খাওয়াতে হুড়োহুড়ি সোনাগাছিতে
সোনাগাছিতে প্রথম দূর্গা পুজোর ছবি

কলকাতা: 'মা তাঁর সন্তানকে পাঠালেন বেশ্যাপল্লিতে'! হ্যাঁ। আগে পুত্রের পুজো হবে, তারপর মা স্বয়ং আসবেন যৌনপল্লিতে, পুজো হবে তাঁরও। গণেশ বন্দনা দিয়েই উৎসবের মরশুমের শুভারম্ভ করল কলকাতার ১৮ নং ওয়ার্ডের গৌরি শঙ্কর লেন। এই নামে অবশ্য  গুটি কয়েকজনই চেনেন কলকাতার ১৮ নং ওয়ার্ডকে। লোকমুখে এই অঞ্চল দর্জিপাড়া নামেই বেশি পরিচিত। আর সার্বজনীন নাম 'সোনাগাছি'। ছোট ছোট জামা কাপড় পরে এক একটা শরীর সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে এই পাড়ায়। কিছুটা শপিং মলের মতই! পছন্দের 'পণ্য' নিজের গায়ে চাপিয়ে নেওয়া যায় অর্থের বিনিময়ে। এখানেও তেমনটা হয়, এক্সট্রা পাওয়ানা, নিজেও পণ্যের ওপর চেপে পড়তে পারেন গ্রাহক। এককথায় দেহব্যবসার শপিং মল! 

বিঘ্ননাশক গণেশ এসেছেন এখানেই। মুম্বই, আমেদাবাদ, ইউপি'র মত একেবারেই নয়, তবে নিজেদের মত করেই ওদের গণেশ বন্দনা সবার থেকে আলাদা। এই নিয়ে ৮ বছর, গজানন এখানে আসছেন। যত দিন যাচ্ছে গণেশ পুজো যেন যৌনপল্লির একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে। 

কলকাতায় তেমন একটা গণেশ পুজো হয় না। গুটি কয়েক যাও হয় তাতে বাঙালিয়ানা একেবারেই অল্প। কিন্তু সোনাগাছির গণেশ পুজো বাংলা আর বাঙালিতে ভরা। বাংলা ভাষীরা যেমন আছেন তেমন আছেন হিন্দি ভাষী মানুষও। এই ধরুন সমর রায়ের কথা। থাকেন বাঙ্গুরে তবে এই অঞ্চলের সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগ। ২০০৯ থেকে এই পর্যন্ত গণেশ উৎসব মণ্ডলীর দায় দায়িত্ব সামলেছেন একা হাতেই। তাঁর সঙ্গী হয়েছেন যৌনপল্লির মানুষ। সঙ্গ দিয়েছে মনীন্দ্র চন্দ্র কলেজের ছাত্র আকাশ সিং সহ আরও অনেকে। পড়ুয়া থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই, গণেশ পুজোর আনন্দযজ্ঞ থেকে বাদ যায়নি কেউই। 

প্রতিদিন ৫০টি শিশুকে (যৌনকর্মীদের সন্তান) দুধ আর পাউরুটি দেয় গণেশ উৎসব মণ্ডলী। দুর্গাপুজোর আগে যৌনকর্মীদের সন্তানদের জামাকাপড় বিতরণের বিষয়টা তো আছেই। যাদের বয়সে শরীর ভেঙেছে, আর 'দেহ বেচতে পারেন না' সেই সব অসহায় মানুষদের পাশেও আছে সমর রায় ও তাঁর সমাজসেবক পল্টন। আগামী দিনে শুরু হতে চলেছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, একেবারে বিনামূল্যে। যৌন কর্মীদের সন্তানদের মধ্যে যাতে কোনও রোগব্যাধি ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য নিয়মিত চলে হেলথ চেক-আপ। আর এসবের শুভারম্ভ হয় দেবী দূর্গার সবথেকে আদুরে গণপতি পুজো দিয়েই। এরপর দেবী দুর্গার আরাধনা, দীপাবলী, গঙ্গা পুজো, পরপর চলে উৎসব।

 

 গণেশ বিঘ্ন নাশক। দেবতা গণেশের পুজো দিয়েই শুরু হয় সমস্ত কাজের শুভারম্ভ। তবে সোনাগাছিতে গণেশ ঈশ্বর নন, গণপতিকে নিজেদের খেলার সাথী মনে করে ওরা। তাই গণেশের ভুঁড়ি দেখে ওরা কখনও খিলখিল করে হেসে ওঠে আবার নিজেরাই বলে ওঠে এবার গণেশ লাড্ডু খাবে আমার হাতে। 

.