দু'জনকে একই পদ দিতে নারাজ বিজেপি, ইস্তফার ইচ্ছাপ্রকাশ শোভন-বৈশাখীর

১৪ অগাস্ট বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন শোভন-বৈশাখী। ২৮ অগাস্ট সন্ধেয় কৈলাস বিজয়বর্গীয়র কলকাতার বাড়িতে গিয়ে ইস্তফার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন দু'জনে। 

Updated By: Aug 31, 2019, 04:57 PM IST
দু'জনকে একই পদ দিতে নারাজ বিজেপি, ইস্তফার ইচ্ছাপ্রকাশ শোভন-বৈশাখীর

অঞ্জন রায়

দু'সপ্তাহও কাটেনি। তার আগেই মোহভঙ্গ হল শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। কৈলাস বিজয়বর্গীয়র কাছে বিজেপি ছাড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন তাঁরা। বৈশাখীকে শোভনের সমমর্যাদার পদ দেওয়াতে আপত্তি রয়েছে বিজেপির। তাতে গোঁসা হয়েছে শোভন-বৈশাখীর। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেবশ্রীর বিজেপিতে যোগদানে দিলীপের সবুজ সংকেত।           

বিজেপিতে যোগ দিতে চাইছেন রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। কিন্তু দেবশ্রীকে নিয়ে আপত্তি রয়েছে শোভন ও বৈশাখীর। বিজেপি সূত্রের খবর, বৈশাখীর চাপেই দেবশ্রীকে নিয়ে অনীহা শোভনের। কিন্তু দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ব্যক্তির আগে দল। কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত মতানৈক্য থাকতেই পারে, কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। শোভনকে কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে বিজেপি। কিন্তু সমমর্যাদা চাইছেন বৈশাখীও। শোভনের মতোই পদ চাইছেন অধ্যাপিকা। এখানেই আপত্তি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের। তাদের যুক্তি, রাজনীতিতে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে আনকোরা। তাঁর মতো অধ্যাপক-অধ্যাপিকা বিজেপিতে অনেকে আছেন। পথেঘাটে নেমে কাজ করছেন প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ। বৈশাখীও তেমনটা করুন। তাঁকে তো আগে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। 

১৪ অগাস্ট বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন শোভন-বৈশাখী। ২৮ অগাস্ট সন্ধেয় কৈলাস বিজয়বর্গীয়র কলকাতার বাড়িতে গিয়ে ইস্তফার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন দু'জনে। তার আগে শোভনের বাড়িতে গিয়ে কথা বলে আসেন অরবিন্দ মেননও। কিন্তু বৈশাখীর আচরণে বিরক্ত রাজ্য বিজেপি। কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানিয়ে দেন, বৈশাখীর আপত্তি মানা হবে না। দেবশ্রী রায়কে বিজেপিতে স্বাগত জানানো হবে। একইসঙ্গে কৈলাস ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন, বৈশাখীকে নিয়ে দলের অন্দরেই তৈরি হয়েছে অসন্তোষ। এরপরই শোভন চট্টোপাধ্যায় ইস্তফা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র জানিয়ে দেন, বৈশাখীর অপমান সহ্য করবেন না তিনি। আর দেবশ্রীকে নিয়ে তাঁরও আপত্তি রয়েছে।  

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে শুরু থেকে 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি' দশা গেরুয়া শিবিরের। দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে শোভন-বৈশাখীর যোগদানের দিনই পৌঁছে গিয়েছিলেন দেবশ্রী রায়। কিন্তু শোভনের আপত্তিতে রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ককে দলে নেয়নি বিজেপি। পদ্ম শিবির সূত্রের খবর, দেবশ্রী নিয়ে আপত্তি করেছিলেন বৈশাখীই। পরে বিজেপি রাজ্য দফতরেও একদফা নাটক। সংবর্ধনা দেওয়ার আমন্ত্রণপত্রে নাম ছিল শুধু শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। ঠাঁই হয়নি বৈশাখীর। তার জেরে রাজ্য দফতরে আসতে চাইছিলেন শোভন ও তাঁর বান্ধবী। সে যাত্রায় বৈশাখীর সঙ্গে কথা বলে সামাল দেন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। তখন দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, 'আমরা জানি ভাত-ডাল তেমন শোভন দা ও বৈশাখী দি। আলাদা করে বলার কী আছে।' কিন্তু রাজ্য সভাপতিকে সাংবাদিক বৈঠকেই জবাব দেন রাজনীতিতে কার্যত আনকোরা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর বিধায়কদের বৈঠকে বৈশাখীকে ঢুকতে দেননি দিলীপ ঘোষ। গাড়িতেই বসে থাকেন শোভনের বান্ধবী।                                             

রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ মনে করছে, এটা আসলে চাপের খেলা। চাপ দিয়ে বিজেপির একটা পদ বাগিয়ে নিতে চাইছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। শোভন এখনই ইস্তফা দিলে মুখ পুড়বে বিজেপির। তারই সুযোগ তুলতে চাইছেন দু'জন। শেষপর্যন্ত শোভন-বৈশাখীর চাপের কাছে বিজেপি মাথানত করে কিনা, সেটাই দেখার।       

আরও পড়ুন- দেখ কেমন লাগে! বৈশাখীকে নিয়ে নাজেহাল বিজেপির দশা দেখে উল্লসিত তৃণমূল

.