আমার দেখা অরুণাচল
ভারতের একেবারে পূর্বের এই রাজ্যের আকাশেই সূর্য প্রথম সুপ্রভাত জানায় এই দেশকে। সবুজের সমারোহ দেখতে হলে আপনাকে আস্তেই হবে অরুণাচলে। পাহাড় থেকে নেমে আসা `কামেং` নদী এখানে জিয়াভরলি নামে প্রবাহিত। নদী, পাহাড় আর অরণ্য মিলে এখানে রচনা করেছে এক অপার্থিব সৌন্দর্য।
কোয়েল পাল
ভারতের একেবারে পূর্বের এই রাজ্যের আকাশেই সূর্য প্রথম সুপ্রভাত জানায় এই দেশকে। সবুজের সমারোহ দেখতে হলে আপনাকে আসতেই হবে অরুণাচলে। পাহাড় থেকে নেমে আসা `কামেং` নদী এখানে জিয়াভরলি নামে প্রবাহিত। নদী, পাহাড় আর অরণ্য মিলে এখানে রচনা করেছে এক অপার্থিব সৌন্দর্য।
ইনার লাইন পারমিট নিয়ে প্রবেশ করতে হয় অরুণাচল প্রদেশে। কলকাতা থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত ট্রেনে বা ফ্লাইটে এসে, এখান থেকে গাড়ী ভাড়া করে নেওয়া যায়। অথবা কলকাতা থেকে তেগপুর পর্যন্ত ফ্লাইটে এসে, তেজপুর থেকেও গাড়ী ভাড়া করা যেতে পারে।
তেজপুর বা গুয়াহাটি থেকে গাড়ী ভাড়া করে প্রথমেই ভালুকপং। তারপর দিরাং। দিরাং থেকে চলে যাওয়া যেতে পারে বরফে মোড়া সেলা পাস্ পেরিয়ে তাওয়াং। ফেরার পথে বন্ডিলা, দিরাং হয়ে আবার ভালুকপং।
ভালুকপং: জিয়াভরলি নদীর তীরে ভালুকপং-এর প্রাকৃতিক শোভা সত্যিই এককথায় অনবদ্য। এই ভালুকপং হল অরুণাচল প্রদেশের অন্যতম প্রবেশদ্বার। এখানেই ইনারলাইন পারমিট দেখাতে হবে। প্রাকৃতিক শোভাই ভালুকপং-এর প্রধান সম্পদ। জিয়াভরলি নদীর সঙ্গে পাহাড় আর অরণ্যের মিশেলে তৈরী হয়েছে অপার্থিব সৌন্দর্য্য।
এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আপনাকে ২টো দিন কাটাতেই হবে ভালুকপং-এ। এখানে অসম পর্যটনের টুরিস্ট লজ ছাড়াও কিছু প্রাইভেট হোটেল, রিসর্ট আছে। কলকাতা থেকে বুক করে এখানে নিরিবিলিতে কাটানো যেতেই পারে। ভালুকপং-এর কাছেই আছে টিপি। টিপির খ্যাতি তার অর্কিড রিসার্চ সেন্টারের জন্য। নানান দুর্লভ প্রজাতির অর্কিডের দর্শন পাওয়া যাবে এই গবেষণাকেন্দ্রে। অর্কিডের রূপ রঙ দেখে চমক লেগে যাবে একথা জোড় দিয়েই বলা যেতেই পারে। এই টিপিতেও থাকার জন্য রয়েছে বনবাংলো।
টিপি ছাড়িয়ে পাহাড়ী পিচ্ ঢালা রাস্তা মিলে গিয়েছে দূরের নীল পাহাড়ে। পাহাড়ী পথ সংলগ্ন গাছপালা একসময় রূপ নেবে গহন অরণ্যে। বুনো কলাগাছ, রাক্ষুসে ফার্ণ, বাঁশ গাছ দেখতে দেখতে মাঝে মধ্যেই মেঘ আর কুয়াশা এসে ঢেকে দেবে চারপাশ। বোঝাই যাবেনা এরই মধ্যে কখন পেরিয়ে গেছে ছোট্ট গ্রাম। তবে এখানে ৩০০-৪০০ মিটার অন্তর রাস্তা খুব খারাপ। তাই সময়টাও অনেক বেশী লেগে যায়। সেনাছাউনী গুলোর কাছাকাছি রাস্তা গুলো অবশ্য বেশ ভাল। টিপি থেকে বমডিলার পথে প্রথম উল্লেখযোগ্য যায়গা হল `জিরো`। এই জিরোর পরেই রাস্তা রাস্তা দু`ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। ডানদিকের পথটি চলে গেছে সেপ্পা শহরের দিকে। জিরো পয়েন্টের পর দর্শন করে ঠেঙ্গা ভ্যালি। অসাধারণ সুন্দর এই যায়গাটি। ঠেঙ্গা উপত্যকায় রয়েছে সেনাবাহিনীর বিরাট শিবির। তাই হয়তো যায়গাটি আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে।
ঠেঙ্গা থেকে বমডিলা হয়ে দিরাং যাওয়া যায়। তবে ভালুকপং-এ থাকতে হলে ঠেঙ্গা হয়ে সরাসরি দিরাং যাওয়া যেতে পারে। তাপর তাওয়াং থেকে ফেরার পথে বমডিলায় আসুন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর ছোট্ট শহর দিরাং। উচ্চতা ৫,৫০০ ফুট। প্রশস্ত নদী উপত্যকায় গড়ে ওঠা এই উপত্যকায় গড়ে ওঠা এই ক্ষুদ্র জনপদটির শোভা মনোমুগ্ধকর। শহরের কাছে পিঠেই রয়েছে আপেল আর নাশপাতির বাগান। রয়েছে ভেড়ার প্রজনন কেন্দ্র আর উষ্ণ প্রস্রবন। এখানে থাকার জন্য রয়েছে কিছু প্রাইভেট হোটেল, লজ। এছাড়াও আছে রাজ্য পর্যটন দফতরের টুরিস্ট লজ।
দিরাং থেকে এবার গন্তব্য তাওয়াং। এই পথেই পড়বে বিখ্যাত সেলা পাস। দিরাং থেকে এবার গন্তব্য তাওয়াং। এই পথেই পড়বে বিখ্যাত সেলা পাস। দিরাং থেকে ৪০ কিমি দূরের এই উত্তুঙ্গে পাহাড়ী পথে পড়বে অসংখ্য সেনা ছাউনি। ১৩৭২১ ফুট উচ্চতার সেলা পাসে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করে। মার্চের শেষে গেলেই বরফ ঢাকা সেলা পাসের সৌন্দর্য্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সৌভাগ্য বশত আবহাওয়া ভাল থাকলে সেলা পাস অতিক্রম করার অভিজ্ঞতা অবিস্মরণীয় হয়ে থকাবে। তুষারবৃত গিরিশিখরদের এতটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ সারা জীবনে খুব একটা বেশি আসেনা। এই সৌন্দর্য্য ধরা থাকে নিজেদের চোখের লেন্সে।
সেলাপাস থেকে নামার পথে গাড়ী দাড়াবে নুবানাং-এ। সেখানে রয়েছে বীর সৈনিক যশবন্ত সিং-এর স্মৃতি মন্দির। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে সিঙ্ঘবিক্রমে মুগ্ধ করে নিজের প্রাণের বিনিময়ে দীর্ঘ সময় আড়ালে রেখে ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সেনা ছাউনি। এই স্মৃতিমন্দির সংলগ্ন সেনা শিবিরের জওয়ানরা পর্যটকদের চা না খাইয়ে ছাড়েন না। এমনই অবর্ণনীয় আসাধারণ আতিথেয়তা এঁদের। এমনই দূর্গমস্থানে অপ্রত্যাশিত এমন আন্ত্রিক অভ্যর্থনা মনকে স্পর্ষ করবেই। তাওয়াং বর্তমানে এক স্বতন্ত্র জেলা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী উপজাতীয় মানুষেরাই এখানে সংখ্যা গরিষ্ঠ। এঁরা অত্যন্ত ধর্মভীরু, কর্মঠ এবং এবং অবশ্যই অতিথিবৎসল। ভারতের সব থেকে সুন্দর শৈল শহরগুলির অন্যতম এই তাওয়াং দুর্গমতার কারণেই পর্যটক মহলে তেমন পরিচিত ছিল না। তবে বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এই অঞ্চলটি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।