কেবিন
মনোজ পান
সকালে নিজের কেবিনে বসতেই ‘আসছি ম্যাডাম’ বলে এসে উপস্থিত সেই লোকটি। অদ্ভুত দেখতে লোকটাকে, মিশ-মিশে কালো মুখের মধ্যে বড় বড় দাঁতগুলো যেন বরফের চূড়ার মত উচু হয়ে আছে।
-একটা গ্রীনটি দিন। গ্রীনটিটা আসার আগেই শ্রীলেখা ভেবে ফেলেছে সুরেশকে লোকটা বদলাতে বলবে। এমন একটা অদ্ভুত লোককে সর্বদা চোখের সামনে...। কিন্তু একটা চুমুক দিয়েই মতটা বদলে গেল তার।
লোকটা লেখা-পড়া জানে। চা-কফিটা বেশ বানায়। দেখতে যেমনই হোক গুন আছে লোকটার। কয়দিনেই শ্রীলেখার ফাইলের কবাড, ডেক্স সর্বত্র হাত দেওয়ার অবাধ অধিকার পেয়েগেল লোকটা। খুব গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ওর হাতেই রাখতে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকে শ্রীলেখা। আপনি থেকে এখন তুমিতে এসে গেছে চপলদা। বাবা-মা, দাদুকে নিয়ে সংসার চপলদার।
এখনও বিয়ে করনি কেন? চপলদা হাসে, তাতে আরও অদ্ভুত দেখায় চপলদা কে। তা দেখে শ্রীলেখাও না হেসে থাকতে পারে না।
শ্রীলেখার সাদা ফুল খুব পছন্দ। বড় টেবিলতার উপর ছোট্ট ফুলদানিটা রোজ নতুন ফুলদিয়ে ভরিয়ে দেয় চপলদা। মাঝে মাঝে মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে তা থেকে। চপলদা ছুটি নিলে যেন অফিস করতে বিরক্ত হয়ে পরে শ্রীলেখা। জানাগেল চপলদা ভাল আবৃতি করতে পারে। ১লা বৈশাখ অফিসের রিক্রিয়েশন হল-এ তার আবৃতি শুনে তো সকলে মুগ্ধ, শ্রীলেখা একটু বেশিই।
শ্রীলেখা কোম্পানির জোনাল অ্যাসিস্টেন্স ম্যানেজার। প্রমোশনের খবরটা এসই গেল। সাত দিনে দিল্লী তিনমাসের জন্য তারপর বিদেশ।
কাল দুপুরের ফ্লাইট, আজ অফিস শেষে পার্টি হল রিক্রিয়েশন হল-এ। গান চলল, খাওয়া-দাওয়া হল, আজ কেউ কবিতা শুনতে চাইলনা। ভিড়ের মধ্যে থেকে শ্রীলেখা এদিক-ওদিক তাকিয়েও দেখতে পেল না চপলদাকে। কেবিনে ফিরে এল শ্রীলেখা। চোখ পড়ল টেবিলে রাখা ফুলদানিটা আজ ফাঁকা। নিজের চেয়ার, ডেস্ক সারা কেবিনটা একবার দেখে নিল শ্রীলেখা। কাল থেকে এই স্থানের তার আর যোগাযোগ থাকবে না। নতুন অফিস হবে, নতুন পরিবেশ। কিন্তু চপলদা কে কোথাও দেখা গেল না।
ড্রাইভার গাড়ির কাঁচটা তুলতে যাবে তখনই হাত বাড়িয়ে দিল শ্রীলেখার দিকে। একটা ছোট বুকে। পলক সরানোর আগেই গাড়ি চলতে শুরু করল। পিছনফিরে দেখল চপলদা তখনও তাকিয়ে। গোলাপের পাপড়িগুলো বুকে জড়িয়ে ধরল শ্রীলেখা। (যোগ্য)